অপহরণের ঘটনায় ছাত্রলীগের ৬ নেতাকর্মীর নামে মামলা

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) লিফট অপারেটর পদে নিয়োগ পরীক্ষা দিতে এসে ১৭ জন অপহরণের ঘটনায় ৬ জনকে আসামি ও আরও ৫/৬ জনকে অজ্ঞাতনামা করে যশোর কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
শুক্রবার এ মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী চাকরিপ্রার্থী মো. আরাফাত হোসেন ইমন।
এতে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক বেলাল হোসেনকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এ দিকে অপহরণের আলামত ঢাকতে সংশ্লিষ্ট শহীদ মসিয়ূর রহমান হল এর সিসিটিভি ফুটেজের হার্ডডিস্ক ছিনিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে। এছাড়া অপহরণকারীরা হলে থাকলেও তাদের খুঁজে না পাওয়া ও একইসাথে সিসিটিভি ফুটেজের হার্ডডিস্ক ছিনতাই হওয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট হলটির প্রভোস্ট ড. মো. আশরাফুজ্জামান জাহিদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলেছেন কেউ কেউ।
সিসিটিভি ফুটেজ ছিনতাইয়ের বিষয়ে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, অপহৃতরা মুক্তি পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শ.ম.র হলের সিসিটিভির হার্ডডিস্ক ছিনতাই করে নিয়ে গেছে অপহরণকারীরা। শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানার নেতাকর্মীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।
তবে যবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সোহেল রানা এ অভিযোগ প্রত্যাখান করে বলেন, এ ঘটনার সময় আমি, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী ও প্রভোস্ট স্যার দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম। এর মধ্যে কেউ একজন এসে কিছু একটা নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। হল অফিসের কর্মচারীরা তাকে ধরতে পারেনি। এর সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
এ দিকে মামলার বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, যবিপ্রবিতে চাকরি প্রার্থীদের অপহরণের ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করতে ঘটনার দিন রাতেই অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারিনি। আসামিদের ধরতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
বেলা বারোটায় তল্লাশি চালিয়ে শ.ম.র হল প্রভোস্ট হল থেকে অপহৃতদের উদ্ধার করতে না পারা অথচ বিকাল সাড়ে তিনটায় ঐ হল থেকেই অপহৃতদের মুক্তি, সিসিটিভির ফুটেজ ছিনিয়ে নেওয়ার বিষয়টি সচেতন মহলে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি করেছে। এছাড়াও অপহরণকারীদের সঙ্গে শ.ম.র হলের প্রভোস্ট ড. মো. আশরাফুজ্জামান জাহিদের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন।
এ দিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, যবিপ্রবি উপাচার্য অপহরণের ঘটনায় শ.ম.র হলের প্রভোস্ট ড. মো. আশরাফুজ্জামান জাহিদকে থানায় মামলা করতে বললে তিনি অস্বীকৃতি জানান এবং রেজিস্ট্রারকে দিয়ে মামলা করার কথা জানান।
ছাত্র ইউনিয়ন যবিপ্রবি সংসদের আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, হল কেন্দ্রিক ফৌজদারি অপরাধ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এই বছরেই শ.ম.র. হলের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আটকে রেখে চাঁদাবাজি ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। ল্যাপটপ, মোবাইল এমনকি লক্ষাধিক টাকা মূল্যের সোলার প্যানেলের ব্যাটারি চুরির মতো ঘটনার সাক্ষী হয়েছি আমরা। সর্বশেষ এই ১৭ জন চাকরি প্রত্যাশিদের আটকে রেখে পরীক্ষা দিতে না দেওয়ার অভিযোগ এবং হার্ডডিস্ক চুরির মতো ঘটনা; যা বিশ্ববিদ্যালয় হলের নিরাপত্তা ইস্যুকে হুমকির মুখে ফেলেছে! সিসিটিভি ফুটেজের হার্ডডিস্ক চুরির ঘটনার দায় অবশ্যই প্রোভোস্ট বডির উপর বর্তায় এবং উক্ত অপহরণের ঘটনার সাথে সিসিটিভি টুটেজের হার্ডডিস্ক চুরি একই সূত্রে গাথা! তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত ব্যাপারটা নিয়ে গভীরভাবে তদন্ত করা৷
যবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো. মেহেদী হাসান বলেন, একজন দুজন পরীক্ষার্থী হতো আলাদা বিষয় সেখানে একটি ছোট হল এ ১৭ জন পরীক্ষার্থী ছিল, হল প্রভোস্ট তাদের খুঁজে পাবেন না এটি হতেই পারে না।
হার্ডডিস্ক ছিনতাইয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, অফিস টাইমে কেউ এতজন কর্মকর্তা কর্মচারীদের সামনে হল প্রভোস্টের রুমে ঢুকে হার্ডডিস্ক চুরি করলো কেউ কিছু জানলো না এটি খুবই হাস্যকর। শুধু এই ঘটনা নয় হলের অগণিত অপকর্মের ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ হল প্রভোস্ট দেননি।
বর্তমান হল প্রভোস্ট শ.ম.র হলকে একটি ক্যান্টনমেন্টে পরিণত করেছেন, যা ইচ্ছে করছেন, ওপেন দুর্নীতি করছেন, কথায় কথায় নিজেকে বড় মাস্তান বড় ছাত্রলীগার পরিচয় দিয়ে শিক্ষার্থীদের হুমকি ধামকি দেওয়াসহ খারাপ আচরণ করছেন, উনার অসংখ্য অপকর্মের অগণিত প্রমাণ রয়েছে। সুতরাং সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আমি উপাচার্য মহোদয়কে অনুরোধ জানাবো এমন দুর্নীতিবাজ হল প্রভোস্টকে দ্রুত হল থেকে প্রত্যাহার করে শ,ম,র হলকে কলঙ্ক মুক্ত করা হোক।
এ বিষয়ে জানতে প্রভোস্ট ড. মো. আশরাফুজ্জামান জাহিদের কাছে মুঠোফোনে কল দিয়েও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
(ঢাকাটাইমস/০৯ডিসেম্বর/জেডএম)

মন্তব্য করুন