১০ বছরে অর্থ সম্পদে ফুলেফেঁপে উঠেছেন এমপি জিন্নাহ

বগুড়া প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৩:৫৬

শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে বগুড়া- ২ (শিবগঞ্জ) আসনের জাতীয় পার্টি এমপি। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করবেন তিনি। এমপি হওয়ার পর গত ১০ বছরে অর্থ এবং সম্পদে ফুলেফেঁপে উঠেছেন তিনি।

এর সঙ্গে সম্পদ বেড়েছে তার স্ত্রী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের। এমপি জিন্নাহর কৃষি জমি বেড়েছে ১২০০ গুণ। ১৩১ গুণ বেড়েছে কৃষি আয়ও। বাড়ি ভাড়ায় আয় বেড়েছে ২৩৪ গুণ। পাঁচ বছর আগে তার ওপর নির্ভরশীলদের আয় ছিল না। তবে বর্তমানে ব্যবসা খাতে নির্ভরশীলদের আয় সাড়ে ১৭ লাখ টাকা। কৃষি খাতে ২৪ হাজার ৭২০ টাকা এবং ভাড়া থেকে ৬০ হাজার টাকা।

এমপি জিন্নাহর পুরো সম্পদ বিবরণী বলছে, ৫ কোটি ২৯ লাখ ৪১ হাজার ৩৬২ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তিনি। পাঁচ বছরের ব্যবধানে তার সম্পদ বেড়েছে ৫ গুণ। স্ত্রীরও আঙুল ফুলে হয়েছে কলাগাছ। তার সম্পদের পাহাড়ে জমা হয়েছে ২ কোটি ৬২ লাখ ৭ হাজার ১০৩ টাকা। এর মধ্যে নগদ অর্থ ও ব্যাংক হিসাব মিলে আছে ২ কোটি ১৬ লাখ ৭০ হাজার ৩৩০ টাকা। দশম, একাদশ এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার দাখিলকৃত হলফনামা থেকে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হন। এরপর ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।

প্রথমবার এমপি হওয়ার আগে জিন্নাহর নামে জমি ছিলো ১.৪০ শতাংশ, এখন ১৬৯৩.২২ শতাংশ। কৃষিখাতে তার বাৎসরিক আয় ২০০০ টাকা থেকে আয় বেড়ে ২ লাখ ৬১ হাজার ৬৩০ টাকাতে ঠেকেছে। দশম জাতীয় নির্বাচনে তার নামে কোন ব্যাকে জমা ছিলো না। তবে এবার তার নামে ব্যাংকে জমা দেখানো হয়েছে ৭২ লাখ ৬৭ হাজার টাকা এবং তার স্ত্রীর নামে ব্যাংকে জমার পরিমাণ ছিলো ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এবার দেখানো হয়েছে ৬২ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। এছাড়া স্ত্রীর নামে নগদ টাকা দেখানো হয়েছে ১ কোটি ২৫ লাখ ৮৭ হাজার ১৩৪ টাকা এবং নির্ভরশীলদের নামে দেখানো হয়েছে ৯৩ লাখ ৫৫ হাজার ২৮২ টাকা। স্ত্রীর নামে সঞ্চয়পত্র কেনা আছে ২৮ লাখ টাকার। স্ত্রী ১৫ লাখ টাকা দামের একটি ট্রাকের মালিকও। বাড়ি/দোকান ভাড়া বা অন্যান্য ভাড়া ১৮০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৪ লাখ ২০ হাজার ৫০০ হয়েছে। এমপি হওয়ার আগে ৭৭ হাজার টাকা দামের মোটরসাইকেল ব্যবহার করতেন। এখন চলাফেরার জন্য ব্যবহার করছেন ১ কোটি ১ লাখ টাকা দামের টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার। আগে তার নামে একটি টিনশেডের কাচাপাকা বাড়ি ছিলো। বর্তমানে তার নামে ১ কোটি ৮৯ লাখ ৬১ হাজার ৮০০ টাকা মূল্যের ২টি দালান বাড়ি দেখিয়েছেন। এছাড়া ১৫ লাখ ৯২ হাজার ১৯৫ টাকা দামের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে তার নামে।

এদিকে, সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এমপি মো. শরিফুল ইসলাম জিন্নাহর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় ১ কোটি ৫৯ লাখ ৭৮ হাজার ১১৩ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ৮৯ লাখ ২৭ হাজার ৫৫৮ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আছে।

২০২১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা- ১ এ কমিশনের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলা দুটির তদন্ত চলছে।

২০১৩ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দাখিলকৃত হলফনামায় যা ছিলো: পেশা হিসেবে এমপি জিন্নাহ নিজেকে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি মেসার্স ইসলাম ব্রাদার্সের স্বত্ত্বাধিকারী। ব্যবসার ধরণ ইট প্রস্তুতকারক ও সরবরাহকারী। ওই সময় তার কৃষিখাতে বাৎসরিক আয় ছিলো ২০০০ টাকা। বাড়ি/দোকান ভাড়া বা অন্যান্য ভাড়া থেকে আয় হতো ১ হাজার ৮০০ টাকা। ব্যবসা থেকে বাৎসরিক আয় ছিলো ৩ লাখ ১৫ হাজার ৮০০ টাকা। নগদ টাকা নিজ নামে ৪ লাখ ৬৮ হাজার। স্ত্রীর নামে ৫০ হাজার টাকা। ব্যাংকে জমার পরিমাণ স্ত্রীর নামে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তিনি ৭৭ হাজার টাকা দামের মোটর সাইকেল ব্যবহার করতেন চলাচলের জন্য। তার স্ত্রী ব্যবহার করতেন ৫ লাখ টাকা দামের একটি মোটর গাড়ি। তার নিজ নামে স্বর্ণালংকার ৭০ হাজার টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৭০ হাজার টাকা স্বর্ণালংকার। তার নামে ইলেকট্রনিক সামগ্রী ৭০ হাজার টাকা এবং তার স্ত্রীর নামে ৬০ হাজার টাকা। তার নামে আসবাবপত্র ৮০ হাজার টাকা এবং তার স্ত্রীর নামে ৫৫ হাজার টাকা। তার নিজনামে ১.৪০ শতক কৃষি জমি এবং স্ত্রীর নামে ০৭ শতক। তার নামে একটি টিনশেডের কাচাপাকা বাড়ি এবং স্ত্রীর নামে ০৭ শতক জায়গার উপর পাকা বাড়ি। এছাড়া তার নামে ৮০ হাজার টাকা মূল্যমানের একটি পুকুর ছিলো। রুপালী ব্যাংক মহাস্থান শাখায় তার নামে সিসি লোন ছিলো ৩০ লাখ টাকা।

এরপর ২০১৮ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামায় দুএকটি তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন ছিলো না। কিছু খাতে আয় বৃদ্ধি দেখা হলেও সেটা উল্লেখ করার মতো ছিলো না। তবে ২০১৩ সালের দাখিলকৃত হলফলামার সাথে বর্তমানের হলফনামায় বর্ণিত আয়ের পার্থক্য আকাশ-পাতাল।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের হলফনামার বিবরণ: কৃষিখাতে বাৎসরিক আয় ২ লাখ ৬১ হাজার ৬৩০ টাকা। নির্ভরশীলদের আয় ২৪ হাজার ৭২০। বাড়ি ভাড়া/ দোকান/ অন্যান্য ৪ লাখ ২০ হাজার ৫০০। নির্ভরশীলদের ৬০ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে আসে ৭ লাখ টাকা। নির্ভরশীলদের আয় ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তার নিজ নামে ব্যাংক আমানত ১ লাখ ৩৩ হাজার ৭৫৬ টাকা। নির্ভরশীলদের ব্যাংক আমানত ৩ লাখ ২৪ হাজার ৪৮০ টাকা। নির্ভরশীলদের পেশা থেকে দেখানো হয়েছে ৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানী ভাতা ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। সংসদ সদস্য হিসেবে অন্যান্য ভাতা এবং মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ১৯ লাখ ৩৯ হাজার ৬৭৫ টাকা। তার নামে নগদ টাকা (ব্যবসার পুঁজি) দেখানো হয়েছে ৯৭ লাখ ৯৩ হাজার ২৭৬ টাকা। স্ত্রীর নামে নগদ টাকা দেখানো হয়েছে ১ কোটি ২৫ লাখ ৮৭ হাজার ১ ৩৪ টাকা। এবং নির্ভরশীলদের নামে দেখানো হয়েছে ৯৩ লাখ ৫৫ হাজার ২৮২ টাকা। ব্যাংকে জমা ৭২ লাখ ৬৭ হাজার ৭৮ টাকা। স্ত্রীর নামে ৬২ লাখ ৮৩ হাজার ১৯৬ টাকা। নির্ভরশীলদের ১ লাখ ৭৩ হাজার ৩৫৩ টাকা। স্ত্রীর নামে সঞ্চয়পত্র কেনা আছে ২৮ লাখ টাকার। চলাফেরার জন্য তিনি ব্যবহার করছেন ১ কোটি ১ লাখ টাকা দামের টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার। স্ত্রীর নামে ১৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা দামের একটি ট্রাক। তার নামে ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের ৩০ তোলা স্বর্ণ। স্ত্রীর নামে ২ লাখ টাকা মূল্যের ৪০ তোলা স্বর্ণ এবং নির্ভরশীলদের ৫০ তোলা স্বর্ণ মূল্য অজানা উল্লেখ করা হয়েছে। আগের দুই নির্বাচনের হলফনামায় নিজের নামে ইলেকট্রনিক দেখানো হলেও এবার তার নামে কোন ইলেকট্রনিক পণ্য নেই। তবে তার স্ত্রীর নামে ১ লাখ এবং নির্ভরশীলদের নামে ২ লাখ টাকার পণ্য দেখানো হয়েছে।

তার নিজ নামে ৮০ হাজার টাকার আসবাবপত্র, স্ত্রীর নামে ১ লাখ এবং নির্ভরশীলদের ২ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। ব্যবসায় স্থায়ী বিনিয়োগ করেছেন ১৮ লাখ ৬১ হাজার ৬৭২ টাকা। তার নামে কৃষি জমি দেখানো হয়েছে ১৬৯৩.২২ শতাংশ। স্ত্রীর নামে ১৫৬.০৮ শতাংশ। অকৃষি জমি ১০ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। নির্ভরশীলদের নামে ১০ লাখ ২৬ হাজার ৫০০ টাকা। তার নামে ১ কোটি ৮৯ লাখ ৬১ হাজার ৮০০ টাকা মূল্যের ২টি দালান বাড়ি দেখিয়েছেন। এছাড়া ১৫ লাখ ৯২ হাজার ১৯৫ টাকা দামের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে তার নামে। তার বিরুদ্ধে লোনের পরিমাণ ২টি। মধুমতি ব্যাংক লি. মতিঝিল শাখা থেকে ৫ লাখ ২৮ হাজার এবং রূপালী ব্যাংক লি. মহাস্থানগড় শাখা থেকে ৩০ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এছাড়া অগ্রনী ব্যাংক লি. মহাস্থানগড় শাখা থেকে নির্ভরশীলদের ব্যাংক ঋণ ৪৯ লাখ ৪৭ হাজার টাকা।

এ বিষয়ে এমপি শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ বলেন, আমি এখন ঢাকায় অবস্থান করছি। এটা না দেখে আপনাকে বলতে পারবো না। আপনি রিটার্ন দেখে নেন। তবে তিনি বলেন, আমি এমপি হয়ে কোনো সম্পদ অর্জন করিনি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য কমিশনে দাখিল করা আপনার হলফনামা আর এবারের হলফনামায় আপনার সম্পদ অনেক বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে এটা বাড়লো কিভাবে জানতে চাইলে তিনি তার রিটার্ন দেখার পরামর্শ দেন।

(ঢাকাটাইমস/৯ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/জেডএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :