শাবিপ্রবিতে স্বাধীনতা রক্ষার প্রতীক ‘চেতনা-৭১’

শাবিপ্রবি প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:২৪ | প্রকাশিত : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:০২

১৯৭১ সালে বীর বাঙালির অর্জিত স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য যেনো নির্ভীক প্রহরীর মতো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ‘চেতনা-৭১’ ভাস্কর্য।

দর্শনার্থী, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের চোখের চিত্রপটে ভাস্কর্যটিতে দেখা মিলে- বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উঁচু করে তুলে ধরার ভঙ্গিমায় একজন ছাত্র এবং সংবিধানের প্রতীকী বই হাতে একজন ছাত্রী। দূর বা কাছ থেকে দেখলে ভাস্কর্যটির পতাকাবাহী ছাত্রটি যেন এই শিক্ষা জানান দিচ্ছে যে, ‘তোমরা আজ ছাত্র, আগামী রাষ্ট্রের মস্তিষ্ক। ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, রাষ্ট্রের সকল ক্রান্তিকাল মুহূর্তে ছাত্ররাই ছিল অগ্রগ্রামী সৈনিক। তোমাদেরই রক্ষা করতে হবে স্বাধীনতা হাল, এই বিজয়ের পতাকা মুষ্টিবদ্ধ করে ছিনিয়ে আনতে হবে দেশের সকল বিজয়।’

অন্যদিকে ভাস্কর্যে সংবিধানের প্রতীকী বই হাতে একজন ছাত্রী যেন জানান দিচ্ছে যে, অর্জিত স্বাধীনতার মান যথাযথভাবে রক্ষার্থে সংবিধান লিপিবদ্ধ আইনকানুন মেনে চলা অপরিহার্য। কারণ সংবিধান বহির্ভূত কাজই বয়ে আনতে পারে দেশের অশনিসংকেত।

‘চেতনা-৭১’ মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে নির্মিত সিলেটের প্রথম মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্য। নান্দনিক এ ভাস্কর্যটির নকশা করেন নারায়ণগঞ্জে স্থাপিত ‘নৃ-স্কুল অব স্কাল্পচার’ এর প্রতিষ্ঠাতা শিল্পী মোবারক হোসেন নৃপাল। বর্ণিল বার্তা বহনকারী ভাস্কর্যটি ২০১১ সালের ৩০ জুলাই উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ।

দীর্ঘ একযুগ পার হয়ে গেলেও হারিয়ে যায়নি কৃষ্ণচূড়া, কড়াই ও কদম গাছের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা স্বাধীনতার প্রহরীর প্রতীক ‘চেতনা-৭১’র সামান্য সৌন্দর্যের ছিঁটেফোটাও।

ভাস্কর্যটি প্রতিষ্ঠার পেছনে গল্প থেকে জানা যায়, ভাস্কর্যটি প্রতিষ্ঠায় বড় ভূমিকা পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই। প্রথমে ২০০৯ সালের ২৬ মার্চ মিনি অডিটোরিয়ামের পশ্চিম পাশে ‘চেতনা-৭১’ নামে একটি অস্থায়ী ভাস্কর্য নির্মাণ করেন শিক্ষার্থীরা। ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে অস্থায়ী ভাস্কর্যটি স্থায়ী ভাস্কর্যে পুনঃস্থাপনের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠন করা হয় ‘ভাস্কর্য পুনঃস্থাপন কমিটি’।

পরবর্তীতে এ কমিটির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচ এবং ডাচ বাংলা ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীন চেতনা রক্ষায় এ ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়। প্রায় ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে এ নান্দনিক ভাস্কর্যের প্রতিফলিত রূপই হল ‘চেতনা-৭১।’

ভাস্কর্যের চতুর্দিক বসার জন্য রয়েছে রাউন্ড করা ফ্লোর। শীতের মিষ্টি রোদে কিংবা বসন্তের বিকালে এই ভাস্কর্যের পাদদেশে বসে সাধারণ শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার নানা কাজকর্মে ব্যতিব্যস্ত থাকে। ক্লাস- রুটিন, অ্যাকাডেমিক, নন-অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার নানা কাব্য রচিত হয় 'চেতনার ৭১' এর পরম পরশে। চলে গল্প, গান, আড্ডা ও ছবি তোলার প্রতিযোগিতা। এভাবেই সর্বদা প্রাণবন্ত হয়ে থাকে ‘চেতনা-৭১’।

ভাস্কর্যটির গঠনগত নান্দনিক সৌন্দর্যে দেখা যায়, সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য এবং একাডেমিক ভবনগুলোর লাল ইটের সঙ্গে মিল রেখে ভিত্তি বেদির ৩টি ধাপ বানানো হয়েছে লাল ও কালো সিরামিক ইট দিয়ে। এর মধ্যে নিচের ধাপের ব্যাস ১৫ ফুট, মাঝের ধাপ সাড়ে ১৩ ফুট এবং উপরের ধাপ ১২ ফুট। প্রত্যেকটি ধাপ ১০ ইঞ্চি করে উঁচু। বেদির ধাপ ৩টির উপরে মূল বেদিটি ৪ ফুট উচু, তার উপরে ৮ ফুট উঁচু মূল ফিগার।

বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এমরান হোসেন বলেন, ‘চেতনা ৭১’ ভাস্কর্যটি আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক। এটি আমাদের গৌরবময় ঐতিহ্যের অংশ। দেশের মাটি ও মানুষের স্বাধীনতার জন্য যে জাতীয়তাবাদী চেতনা আমাদের পূর্বপুরুষদের অনুপ্রাণিত করেছে এই ভার্স্কয। তাদের আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করানোর পাশাপাশি একটি আদর্শ জাতি বিনির্মাণের অংশ হিসেবে আমাদেরকে নতুন উদ্যমে চলার সাহস যোগায় অনুপ্রাণিত করে। স্বাধীনতা ও ন্যায়ের প্রশ্নে তাদের চেতনা ধারণ করে জাতির আত্মপ্রতিষ্ঠায় কাজ করতে সহযোগিতা করে।

সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. তুলসী কুমার দাস বলেন, ‘একটি ভাস্কর্য মানে একেকটা ইতিহাস ও প্রতীক। ভাস্কর্যগুলো প্রতিষ্ঠা করা হয় একটি জাতিকে কোনো না কোনো বার্তা দেওয়ার জন্য। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিনিয়ত তরুণ প্রজন্মের আবির্ভাব হয়, তাদেরকে স্বাধীনতা ও মুক্তির সংগ্রামের অতীত ইতিহাসকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য এসব ভাস্কর্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত ভাস্কর্য ‘চেতনা-৭১’ এ দেখতে পায় যে, একজন শিক্ষার্থী বই হাতে দাঁড়িয়ে আছে। অন্যদিকে আরেকজন পতাকা উঁচু করে এগিয়ে যাচ্ছে। এর মানে এই যে, শিক্ষার্থীদের জ্ঞান-গরিমায় অর্জনে লেগে থাকতে হবে, পাশাপাশি দেশের বিজয় অর্জনে অগ্রণী ভূমিকাও পালন করতে হবে। এটা আরও বার্তা দেয় যে, পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের দেশপ্রেমিক হতে হবে, দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস সম্পর্কে জানা ও দেশের সকল ক্রান্তিকাল মুহূর্তে লড়াকু সৈনিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। প্রয়োজনে নিজের রঙিন স্বপ্নকে তুচ্ছ করে দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় ভূমিকা পালন করতে হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৫ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/জেডএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিক্ষা এর সর্বশেষ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঢাবি পড়ুয়াদের নেতৃত্বে মাহমুদ-রিয়াদ

রাবিপ্রবিতে ‘সি’ ইউনিটের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় উপস্থিতির হার ৭৫.৫০ শতাংশ

স্কুল-কলেজের সভাপতিকে হতে হবে এইচএসসি পাস, গেজেট জারি

ঢাবির সাংবাদিকতা বিভাগের নবীনবরণ ও অগ্রায়ন অনুষ্ঠিত

শেষ হলো ঢাবি অধিভুক্ত ৭ কলেজের প্রথমদিনের ভর্তি পরীক্ষা

ঢাবির সাংবাদিকতা বিভাগের নবীনবরণ ও অগ্রায়ন আজ

বেরোবিতে সাংবাদিকতা বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ চেয়ে আইনি নোটিশ

বেরোবিতে বিশিষ্ট পরামাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

আইইউবিএটির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. এম আলিমউল্যা মিয়ানের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী শুক্রবার

পৃথিবী যতদিন থাকবে বঙ্গবন্ধু ও রবীন্দ্রনাথের দর্শন-কর্ম বেঁচে থাকবে: ঢাবি উপাচার্য

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :