বাংলাদেশে আছে ‘এলিয়েন রোড’, কোথায় জানেন কি?

এলিয়েন শব্দটি শুনলেই সবার প্রথমে চলে আসে বহির্জাগতিক প্রাণ বা ভিনগ্রহী কোনো প্রাণীর কথা।
‘এলিয়েন’ একটি ইংরেজি শব্দ। এলিয়েন বা ভিনগ্রহী কোনো প্রাণীর অস্তিত্বের প্রমাণ এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা দিতে না পারলেও অনেক বিজ্ঞানীই মনে করেন এলিয়েনের অস্তিত্ব আছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবার কাছেই এলিয়েন একটি কাল্পনিক প্রাণি।
আর এই কাল্পনিক প্রাণীর নামেই আমাদের বাংলাদেশে একটি রাস্তার অস্তিত্ব রয়েছে। সেই রাস্তাটির অবস্থান উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক পেরিয়ে প্রবেশের পর হাতের বামপাশে জিমনেশিয়াম এবং ওয়াজেদ ভবনের মাঝামাঝি বিভিন্ন গাছ-গাছালির সমৃদ্ধ ছায়াঘেরা একটি বাগান রয়েছে। আর এই বাগানের মধ্যে দিয়েই যে বাইপাস রাস্তাটির দেখা মিলবে সেটিই মূলত ‘এলিয়েন রোড’।
আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে এতো সুন্দর একটি বাগানের মধ্য দিয়ে রাস্তাটির নাম কেনই বা ‘এলিয়েন রোড’ রাখা হলো। এই রাস্তাটি দিয়ে কি এক সময় এলিয়েনরা বিচরণ করতো? এই রাস্তার সঙ্গে এলিয়েনদেরই বা কি সম্পর্ক?
এমন নামকরণের পেছনে রয়েছে অবাক করা একটি ঘটনা। জিমনেশিয়াম থেকে এম.এ ওয়াজেদ ভবনে যাওয়ার জন্য একটি পিচঢালা রাস্তা থাকলেও অনেক শিক্ষার্থী সেই পিচঢালা রাস্তা ব্যবহার করে না। শিক্ষার্থীরা অল্প রাস্তা বা শর্টকার্টে এম. এ ওয়াজেদ ভবনে যাওয়ার জন্য গাছ-ছালিতে ঘেরা বাগানের ঘাস যুক্ত স্থানের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করে। অনেকবার শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে লিফলেট বিতরণ করা হলেও এই ঘাস যুক্ত স্থানের মধ্য দিয়ে যাতায়াত বন্ধ করা সম্ভব হয়নি।
মূলত যারা জিমনেশিয়াম এবং এম. ওয়াজেদ ভবনে যাতায়াতের জন্য পিচঢালা রাস্তা ব্যবহার না করে গাছ-গাছালিতে ঘেরা বাগানের মধ্য দিয়ে বাইপাস রাস্তা বানিয়ে বাগানের সৌন্দর্য নষ্ট করে তাদেরকে ‘এলিয়েন’ বলা হয়। আর এলিয়েন চলাচলের রাস্তা বিবেচনা করে স্থানটির নামকরণ করা হয় এলিয়েন রোড। আর এই নামকরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটায় বিশ্বিবদ্যালয়ের একদল সচেতন শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রিয়া মোদক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন স্থান হচ্ছে ‘এলিয়েন রোড’। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম এ ওয়াজেদ ভবনের সম্মুখে অবস্থিত। এই ভবনে প্রায় সকল ফ্যাকাল্টির ক্লাস হওয়ায় সকাল থেকে এই রাস্তায় শিক্ষার্থীদের ভিড় দেখা যায়। বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা এই রোডের সৌন্দর্য্য বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। এই গাছপালাগুলো ছায়া ও শীতলতা প্রদান করে।
এ ছাড়াও, এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সৌন্দর্য যাতে নষ্ট না হয় তাই নবীন শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসার পর পরই সিনিয়ররা তাদের এলিয়েন রোড পরিহার করে পিচঢালা রাস্তা ব্যবহার করতে বলে। কিন্তু এরপরও যারা এই রাস্তা ব্যবহার করে তাদের ব্যঙ্গ করে ‘এলিয়েন’ বলা হয়। আমি মনে করি একমাত্র সচেতনতায় পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সৌন্দর্যগুলো বাঁচিয়ে রাখতে।
মার্কেটিং বিভাগের একই ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী নাঈম ইসলাম সংগ্রাম বলেন, এলিয়েন রোডের কথা আসলেই ক্যাম্পাসের ১,১ এর কথা মনে পড়ে। ২০২০ সালে যখন ভর্তি হই তখন কিছু নির্দেশনা ছিল ফুলহাতা শার্ট পরতে হবে, হাতার বাটন লাগাতে হবে। ‘এলিয়েন রোড’ হাঁটা যাবে না কারণ এলিয়েন রোড শর্টকার্ট রাস্তা। আর শর্টকার্ট রাস্তা ব্যবহার করা জুনিয়রদের জন্য এক অনানুষ্ঠানিক দণ্ডনীয় অপরাধ। আমরা যখন সিনিয়র হলাম তখন দিব্বি এলিয়েন রোডে হেঁটে বেড়াই এখনও হাঁটি। তবে আমার মনে হয় শুধু জুনিয়ররা নয় সিনিয়রসহ বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সকলেরই এলিয়েন রোডে হাঁটা উচিত না। এলিয়েন রোডে হাঁটার ফলে কোনো দুর্বাঘাস জন্মাতে পারে না। যা একটি সবুজ ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার অন্যতম বাধা। এলিয়েন রোডে যখন সবুজ ঘাসে পূর্ণ হবে তখন আমরাই সেখানে সাংগঠনিক আলোচনা, গান কবিতার আড্ডায় মেতে উঠতে পারবো।
আশা রাখছি আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্টের ২০২০ সালে তৈরিকৃত নান্দনিক কর্ম দেখতে পারবো। যা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল কর্মকাণ্ড তুলে ধরবে।
(ঢাকাটাইমস/২৩ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/জেডএম/এসআইএস)

মন্তব্য করুন