‘হামারা এহন রাস্তায় থাহুম, একটা তাম্বুও কেউ দেয় নাই’
‘হামারা এহন রাস্তায় থাহুম, একটা তাম্বুও কেউ দেয় নাই। বউ পোলা লইয়া এই শীতের মধ্যে কেমনে থাহুম আল্লাহই জানে। দেহেননা পোলাডা আমার শীতে কাঁপতাছে। এই চাদইরডা এক লোকে হের গায়েত্তে খুইলা হামার পোলারে দিয়া গেছে। হারা দিন না খাইয়া আছিলাম। রাইতে হুনছি খিচুরি দিবো কেউ।’ কথাগুলো বলছিলেন, বস্তিতে ক্ষতিগ্রস্থ মাছকাটার কাজে নিয়োজিত বাবু। তার মতো এমন ৩ শতাধিক পরিবার এই কনকনে শীতে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন।
সন্ধ্যার পর সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো বস্তি এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়ে আছে। অনেকেই সেই ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে নিয়ে অনত্র বিক্রি করছেন। ধ্বংসস্তূপ দেখলে মন হয় না এখানে ৩শ পরিবারের স্বপ্ন লুকায়িত ছিল। দুর্গত এসব মানুষের প্রতিদিনের সকাল নতুন নতুন আশা নিয়ে শুরু হলেও, শনিবারের সকালটা ছিল বিষাদের। আর রাতটা কাটছে সর্বহারা মানুষগুলোর বুকে এক চাপা কান্না নিয়ে।
রফিকুল ইসলাম কাওরান বাজার এলাকায় মিন্তির কাজ করেন। সারারাত মিন্তির কাজ করে আয় করেন ৪-৫শ টাকা। সেই টাকা দিয়ে সকালে বাজার নিয়ে বস্তিতে ফিরতেন পরিবারের কাছে। তবে শনিবার তার আর বস্তিতে ফেরা হয়নি। রাতেই সর্বনাশা আগুন কেড়ে নিয়েছে তার সহায় সম্বল।
রফিকুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাগোতো এহন আর ঘরবাড়ি নাই। আমরা পরিবার নিয়া এই ব্রিজটার নিচেই থাহুম। কয়ডা টাহা জমাইছিলাম পোলাডারে স্কুলে ভর্তি করামু। আগুন লাগার পর আমার বউ খালি পোলাডারে লইয়া বাইর হইতে পারছে। আল্লায় মনে হয় আমার পোলাডার কপালে পরালেহা রাহে নাই। রাইতে কইছিল আব্বা সকালে আমারে লইয়া স্কুলে যাবা। আর আইজকা আমি পোলারে লইয়া ব্রিজের তলে শীতের মধ্যে কাঁপতাছি। ’
৬০ বছর বয়সী তহুরা ঢাকা টাইমকে বলেন, ‘আমি আর আমার মাইয়া কাঁচাবাজারে মাছ কাটি। হারা রাইত মাছ কাইটা সকালে বস্তিতে যাই। আমরা ২০ বছর ধইরা এই এলাকায় থাহি। ঘরে আমাগো সব কিছুই পুইড়া গ্যাছে। এহন আমরা রাস্তায় বইসা আছি। সরকার আমাগো দিকে একটু তাকাইলে এই শীতের মধ্যে আমাগো রাস্তায় আকাশের নিচে থাকতে হইতো না।’
রেহানা নামের আরেক নারী বলেন, ‘আমি রাইতে কাওরান বাজারে কাঁচামাল টোকাইয়া সকালে কম দামে বেইচা সংসার চালাই। কাইল রাইতে আগুনে আমার ঘরের সব পুইড়া গ্যাছে। যহন আগুন লাগছে তহন আমি কাওরান বাজারে আছিল। আমার মাইয়া ঘরের মধ্যে আছিল। অয় আগুন লাগার পর কোনোরহম বাইর হইতে পারছিল। রাইত হইয়া গেছে, আহনো কিছুই খাই নাই। আগুনের খবর হুইনা দৌড় দিছিলাম। আমার টোকানো তরকারি কেডা যেন লইয়া গেছে। আর লগে কয়ডা টাহা আছিল হেইডাও পইড়া গেছে। কই থাকমু আইজ। চলার শেষ সম্বল পুইড়া গেছে। এই শীতের মধ্যেই মনে হয় আমাগো মরণ হইবো।’
(ঢাকাটাইমস/১৪জানুযারি/এইচএম/এসআইএস)