ক্ষমতায় থাকার কৌশল বাস্তবায়নের একতরফা নির্বাচন হয়েছে: টিআইবি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘ক্ষমতায় অব্যাহত থাকার কৌশল বাস্তবায়নের একতরফা নির্বাচন’ বলছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এর আইনগত বৈধতা নিয়ে কোনো চ্যালেঞ্জ করা না গেলেও নৈতিকতার মানদণ্ডে চিরকাল প্রশ্নবিদ্ধ থাকবে বলেও মনে করে সংস্থাটি।
বুধবার ধানমন্ডিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) কার্যালয়ে ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়া ট্র্যাকিং’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ কথা বলেন।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘দুই বড় দলের বিপরীতমুখী ও অনড় অবস্থানের কারণে একপাক্ষিক ও পাতানো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়নি।’
আরও পড়ুন>> নির্বাচনে সীমার চেয়ে সাড়ে ১১ গুণ বেশি খরচ করেছেন আ.লীগের প্রার্থীরা: টিআইবি
২০২৩ সালের জুন মাস থেকে জানুয়ারি ২০২৪ সাল পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে টিআইবি এই প্রতিবেদন করেছে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘নির্বাচনের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির সার্বিক অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ভবিষ্যতের জন্য অশনি সংকেত; গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনা ও স্বপ্নের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিতে দুই বড় দলের বিপরীতমুখী ও অনড় অবস্থানের কারণে অংশগ্রহণমূলক ও অবাধ নির্বাচন হয়নি এবং এ বিপরীতমুখী ও অনড় অবস্থানকেন্দ্রিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের লড়াইয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জিম্মিদশা প্রকটতর হয়েছে।’
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘ক্ষমতায় অব্যাহত থাকার কৌশল বাস্তবায়নের একতরফা নির্বাচন সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে, যার আইনগত বৈধতা নিয়ে কোনো চ্যালেঞ্জ হয়তো হবে না বা হলেও টিকবে না। তবে নৈতিকতার মানদণ্ডে চিরকাল প্রশ্নবিদ্ধ থাকবে।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ধারণা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার অন্যতম উপাদানসমূহ তথা অবাধ, অংশগ্রহণমূলক, নিরপেক্ষ ও সর্বোপরি সমান প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র নিশ্চিতের যে পূর্বশর্ত, তা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিপালিত হয়নি।’
‘নির্বাচন কমিশন একতরফা নির্বাচনের এজেন্ডা বাস্তবায়নের অন্যতম অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অর্থবহ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষহীন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারি দলের প্রার্থীর সঙ্গে একই দলের ‘স্বতন্ত্র’ ও অন্য দলের সরকার সমর্থিত প্রার্থীদের যে পাতানো খেলা সংঘটিত হয়েছে, তাতেও ব্যাপক আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ অসুস্থ ও সহিংস প্রতিযোগিতা হয়েছে, যার সঙ্গে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের বাইরে রাজনৈতিক আদর্শ বা জনস্বার্থের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া কঠিন।’
‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক অঙ্গন ও শাসনব্যবস্থার ওপর ক্ষমতাসীন দলের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ চূড়ান্ত প্রাতিষ্ঠানিকতা পেয়েছে। সংসদে ব্যবসায়ী আধিপত্যের মাত্রাও একচেটিয়া পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে, যা রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে ব্যাপকতর স্বার্থের দ্বন্দ্ব ও নীতি-দখলের ঝুঁকি বৃদ্ধি করেছে’-বলেন টিআিইবির নির্বাহী পরিচালক।
টিআইবির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার বৃদ্ধির হার অন্যান্য বছরের তুলনায় দ্বিগুণ বেড়েছে, যা বিতর্কিত।
নতুন কিংস পার্টি খ্যাত দুটি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দেওয়ার ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে টিআইবি।
(ঢাকাটাইমস/১৭জানুয়ারি/টিআই/এফএ)

মন্তব্য করুন