তথ্যপ্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে: আসিফ মাহমুদ 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ১৭ মে ২০২৫, ১৮:১১
অ- অ+

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, তথ্যপ্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের সরকার এগুলো শুরু থেকে বিবেচনা নিয়েছে। আমরা চাই দেশের সাইবার স্পেস তথা তথ্যপ্রযুক্তি খাত নারী পুরুষ, শিশু,বৃদ্ধ সকলের জন্য নিরাপদ থাকুক।

শনিবার রাজধানীর বিটিআরসি ভবনে বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, আইসিটি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, আমাদের দেশে অত্যন্ত সফল একটি সেক্টর হচ্ছে আর‌এমজি সেক্টর। যার সফলতার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে নারীদের বিপুল অংশগ্রহণ। বর্ধমান সেক্টর হিসেবে আইসিটি সেক্টরে ও নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য কোথায় কোথায় প্রতিবন্ধকতা আছে তা চিহ্নিত করে সেভাবেই পলিসি গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তথ্যপ্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের নিরাপদ ব্যবহার বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে ।

এ সময় উপদেষ্টা বলেন, 'সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ' এ ইন্টারনেটকে নাগরিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। সুতরাং, ইন্টারনেট যেনো সর্বস্তরের জনগণ ব্যবহার করতে পারে সেজন্য মূল্য যুক্তিসঙ্গতভাবে কমিয়ে আনতে হবে। আইআইজি পর্যায়ে দাম কমিয়েছে সরকার যার সুফল গ্রাহকরা দুই-এক মাসের মধ্যে পাবেন বলে জানান তিনি। এছাড়াও শিক্ষা খাতে ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু কৃষি-স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যবহার আরো বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন আসিফ মাহমুদ।

উপদেষ্টা আরও বলেন, বিশ্বে অন্যতম ভাইব্রেন্ট এবং ইনোভেটিভ খাত হচ্ছে টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি; এই সেক্টরে আমাদের তরুণ এবং নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। আরএমজি সেক্টরে যেমন নারীরা বিশেষ অবদান রেখে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করেছে, সেভাবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সেক্টরে নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে লাগানোর বিষয়ে তাগিদ দেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা।

আসিফ মাহমুদ বলেন, সাইবার নিরাপত্তা প্রদান করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব এবং সরকার এ বিষয়ে বদ্ধপরিকর। বিশেষ করে নারীদের সাইবার নিরাপত্তা প্রদান এবং সাইবার সচেতনতা বাড়ানোর বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদানের আহ্বান জানান তিনি।

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা একটি অভাবনীয় ডিজিটাল রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এই রূপান্তর সমাজে সুযোগ তৈরির পাশাপাশি বৈষম্য ও তৈরি করছে। ডিজিটাল গভর্নেন্স, ই লার্নিং, ইন্টারনেট সূচক এসব সূচকে সেবা গ্রহীতার দিক থেকে আমাদের নারীরা পিছিয়ে আছে। পলিসি মেকার হিসেবে নারীদের এই পিছিয়ে থাকার বিষয়টি মোকাবেলা করা আমাদের কর্তব্য। সে লক্ষ্যে আমাদের চেষ্টাগুলো অব্যাহত রেখেছি। তবে আমি মনে করি বৈষম্য দূর করতে ইন্ডাস্ট্রির সকল স্টেক হোল্ডারদের সাথে সরকারকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। আমরা যদি ফাইবারাইজেশনের টার্গেট গুলো অ্যাচিভ করতে পারি, এক্সেস টু ডিভাইস বানাতে পারি, ডিজিটাল সেবাগুলোকে অফিস থেকে বিকেন্দ্রীকরণ করে নাগরিকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পারি তাহলে বৈষম্য নিরসনে সফলতা আসবে।’

তিনি বলেন, ‘আজকের এই দিবসের কার্যক্রম আমরা ভিন্নভাবে আয়োজন করার চেষ্টা করেছি। যে নিছক একটা দিবস উদযাপনের বাইরে এসে তথ্যপ্রযুক্তিতে বিদেশে বাংলাদেশের সুনাম অর্জনকারী কৃতি সন্তান এবং সফল প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দিয়েছি। ইন্ডাস্ট্রির স্টেক হোল্ডার এবং উদ্যোক্তাদের নিয়ে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় বাংলাদেশের ইনোভেটিভ আইডিয়া নিয়ে যারা কাজ করেছে তাদের শোকেস করার চেষ্টা করেছি।’

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আরও বলেন, যারা কানেক্টেড না তাদেরকে যদি কানেক্টিভিটির আওতা আনা যায় এবং একই সাথে যারা ডিজিটাল ডিভাইস এক্সেসিবিলিটির বাইরে আছে তাদের যদি ডিজিটাল ডিভাইস এক্সেসিবিলিটির মধ্যে আনা গেলে তা জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে এবং দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সে লক্ষ্যে আমরা টেলিযোগাযোগ এবং আইসিটি থেকে যে পলিসি গুলো গ্রহণ করবো সেখানে এনক্লুসিবিটিকে গুরুত্ব দিব। নারী এবং পুরুষ বায়োলজিক্যালি ভিন্ন হতে পারে কিন্তু রাষ্ট্রের প্রশ্নে এবং নাগরিক অধিকার প্রশ্নে তাদের সমান অধিকার আছে এবং এই সমান অধিকার নিশ্চিত করতে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উদ্যোগগুলোতে আমরা সেভাবে পলিসি প্রণয়ন করব। সরকারি সেবাকে শহর থেকে মোবাইল ডিভাইসে অথবা তৃণমূলের বিস্তৃত করতে নাগরিক সেবা নামে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছি এবং এই উদ্যোগে আমাদের উদ্যোক্তাদের ট্রেনিং শুরু করেছি সেই ট্রেনিং আমরা চেষ্টা করেছি নারী উদ্যোক্তাদের হার শতকরা ৫০ শতাংশের কাছাকাছি রাখার জন্য।

তিনি বলেন, সাইবার আইনের ২৫ ধারায় আমরা নারীবান্ধব একটি নতুন ধারা রেখেছি, যৌন হয়রানি ব্ল্যাকমেইলিং এবং অশ্লীল বিষয়বস্তু প্রকাশের ক্ষেত্রে নারীদের বর্ধিত সুরক্ষার কথা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আইনে প্রতিস্থাপিত হয়েছে। সেখানে যৌন নিপীড়ন সংক্রান্ত উপাদান, চাইল্ড সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ মেটেরিয়াল, সেক্সটোশন ইত্যাদি কন্টেন্ট বা যেকোনো ধরনের বুলিংকে আমরা অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছি। আশা করছি আইনটি আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে গ্যাজেট আকারে প্রকাশিত হবে। ইতিমধ্যে আইনটি মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদন হয়েছে। সেক্ষেত্রে সাইবার স্পেসে আমাদের নারীদেরকে বর্ধিত সুরক্ষা দিতে পারব।

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় তথ্য ও সম্প্রচার সচিব বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে অন্তর্বর্তী সরকার নারী পুরুষের সমতায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ। শিল্পায়ন, নাগরিক জীবন এবং শিক্ষা স্বনির্ভরতা নারীকে ঘরের বাইরে কাজ করার সুযোগ করে দিয়ে প্রশস্ত করেছে দেশের কর্মক্ষেত্র। ফলে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং তথ্য প্রযুক্তিসহ দেশের সকল ক্ষেত্রে নারীদের আবার বিচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। তিনি বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব কে কর্মজীবী নারীদের তথ্য প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ প্রদানের অনুরোধ করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় আইসিটি সচিব বলেন, নারীদের নিরাপত্তায় আমরা কাজ করছি। সাইবার সেফটি অর্ডিন্যান্স যা মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদিত হয়েছে তাতে সাইবার বুলিং এর বিষয় রয়েছে। এআই পলিসিতেও নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টি আছে। আমরা পরিস্থিতি বিবেচনায় কাজ করছি যাতে নারীরা বৈষম্য থেকে বেরিয়ে আসতে পারে।

প্রসঙ্গত, 'ডিজিটাল রূপান্তরে নারী-পুরুষ সমতায়ন’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্বব্যাপী আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস। বাংলাদেশও আজ এ দিবসটি পালন করা হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে সভা, সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া বিটিআরসি প্রাঙ্গণে মেলা, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক ডাক টিকেট অবমুক্তকরণ এবং দেশের বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে হ্যাকাথন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে একটি ন্যাশন ওয়াইড আইএসপি ও অপর এক ডিভিশনাল আইএসপির হাতে ই-লাইসেন্স তুলে দিয়ে বিটিআরসির ই লাইসেন্সিং সেবার উদ্বোধন করা হয়।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. জহিরুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিটিআরসি চেয়ারম্যান অব. মেজর জেনারেল এমদাদ উল বারীসহ সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা এবং টেলিকম সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

(ঢাকাটাইমস/১৭মে/এমআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
পঞ্চগড় সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে পুশইন করা নারী-শিশুসহ ১১ জন আটক
আমিরাতের বিপক্ষে প্রথম টি-২০তে টস হেরে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ
২০২৫-২৬ অর্থবছরের এডিপির আকার ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা
মতিঝিলে বাণিজ্যিক ভবনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা