বাংলাদেশে কতটা সক্রিয় হিযবুত তাহরীর

লিটন মাহমুদ, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ২২:২৮ | প্রকাশিত : ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ২১:৫৯

যুক্তরাজ্যে একটি সমাবেশ থেকে গত অক্টোবরে জিহাদের ডাক দেওয়ার পর চার দিন আগে দেশটি হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ করেছে। এই সংগঠনটি বাংলাদেশেও সক্রিয়। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার লাগানো, প্রচারপত্র বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। এছাড়াও অনলাইনে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে সভা আয়োজনও থাকে। তবে দেশে সংগঠনটির শক্তিশালী অবস্থান এই মুহূর্তে নেই বলে জানাচ্ছে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে কাজ করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ইউনিটগুলো।

কর্মকর্তারা বলছেন, হিযবুত তাহরীরকে খুব একটা সংগঠিত দেখা যাচ্ছে না। আর অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি রয়েছে। নানামুখী তৎপরতায় সংগঠনের সদস্যরা জঙ্গিবাদ প্রচার বা সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির প্রচেষ্টাকালেই ধরা পড়ছে। ফলে তারা বাংলাদেশে কোনো শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পারছে না। হিযবুত তাহরীরের এই নড়বড়ে অবস্থানকে সফলতা হিসেবে দেখছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তারা বলছেন, জঙ্গিবাদকে আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেওয়া হবে না।

ধর্মভিত্তিক সংগঠন হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্য। এই সংগঠনকে ইহুদি বিরোধী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে এর সদস্য হওয়া ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করার কথা বলেছে দেশটি। এ অপরাধে ১৪ বছরের সাজা হতে পারে।

জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত সংস্থা অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ)। এই সংস্থাটি ২০২৩ সালে হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে নয়জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। তবে সপ্তাহখানেক আগেও রাজধানীর সবুজবাগ, মালিবাগ রেলগেট, রামপুরা এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় হিযবুত তাহরীরের পোস্টার দেখা গেছে। এসব পোস্টারে সেনাকর্মকর্তাদের প্রতি সরকার উৎখাতে সক্রিয় হওয়ার আহ্বানসহ বিভিন্ন বক্তব্য প্রচার করা হয়।

সংগঠনটির তৎপরতার বিষয়ে এটিইউর পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মাহফুজুল আলম রাসেল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘দেশে হিযবুত তাহরীরের কোনো শক্ত অবস্থান নেই। বর্তমানে তাদেরকে খুব সংগঠিত দেখতে পাচ্ছি না। তবে যদি তারা সংগঠিত হতে চেষ্টা করে, আমাদের ইনটেলিজেন্স (গোয়েন্দা বাহিনী) আছে, আমরা লোকেট (শনাক্ত) করতে সক্ষম হবো।’

এটিইউর এই কর্মকর্তা বলেন, ‘যেসব নিষিদ্ধ সংগঠন বর্তমানে অনলাইনভিত্তিক কাজ করে তাদের সরাসরি সংগঠিত হওয়ার সুযোগ খুবই কম। যেহেতু সোশ্যাল মিডিয়াসহ সব পর্যায়ে আমাদের মনিটরিং রয়েছে, আমরা যেটুকু লোকেট করতে পারি, সেক্ষেত্রে অপারেশনের মাধ্যমে আমরা তাদেরকে গ্রেপ্তারও করি।’

২০২৩ সালে অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট কর্তৃক হিযবুত তাহরীরের বিরুদ্ধে সাতটি অভিযান হয়। এতে নয়জনকে আটক করা হয়। নিষিদ্ধ এই সংগঠনটিকে পুরোপুরি নির্মূলে সাইবার পেট্রোলিং চলমান রয়েছে বলেও জানান মাহফুজুল আলম।

বর্তমানে দেশে হিযবুত তাহরীরের অবস্থান প্রসঙ্গে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘হিযবুত তাহরীর একটি নিষিদ্ধ সংগঠন, তাদের কোনো অবস্থান থাকার প্রশ্নই উঠে না, তারপরও তারা মাঝেমধ্যে তাদের অনলাইন প্লাটফর্ম বা পোস্টার লাগানোর কার্যক্রম দেখা যায়। কিন্তু পরবর্তী সেগুলো আমরা শনাক্তও করি, গ্রেপ্তারও করতে সক্ষম হই।’

সম্প্রতি সংগঠনটির দুই শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান সিটিটিসি প্রধান। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এই গ্রেপ্তারের মাধ্যমে তাদের যে তৎপরতা ছিল সেটা অনেকাংশে আমরা নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছি।’

গত সেপ্টেম্বরে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, কারওয়ানবাজার, বাংলামোটরসহ বিভিন্ন এলাকায় হিযবুত তাহরীরের পোস্টার দেখা গেছে। পোস্টারে বর্তমান সরকারকে উৎখাত, মার্কিন উপনিবেশ থেকে মুক্তির উপায়সহ নানা ধরনের উস্কানিমূলক কথা বলা হয়। এছাড়া ওই পোস্টারে তাদের একটি অনলাইন মিটিংয়ের তারিখ ও সময়সূচিও জানানো হয়েছিল। তবে এসব কাজ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অগোচরে হয়েছিল বলে দাবি পুলিশের।

১৯৫৩ সালে জেরুজালেমে তোকি উদ্দিন আল নকানি এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই সংগঠন কার্যক্রম শুরু করলেও বাংলাদেশে শুরু করে ১৯৯৬ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর শিক্ষক মহিউদ্দিন আহমেদের মাধ্যমে দেশব্যাপী তাদের কর্মকাণ্ড শুরু হয়।

এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক গোলাম মাওলা উচ্চশিক্ষার জন্য লন্ডনে যান। সেখানে তিনি হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে যুক্ত হন। এরপর তিনি দেশে ফিরলে ২০০১ সালে মহিউদ্দিন আহমেদকে হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে যুক্ত করেন। মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি সেমিনার আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করে এই সংগঠন। বর্তমানে তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছেন।

২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর দেশে হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ সরকার। যদিও সংগঠনটির আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক রয়েছে। বিশ্বের প্রায় অর্ধশত দেশে বর্তমানে হিযবুত তাহরীরের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। দেশগুলোর মধ্যে আমেরিকা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, পাকিস্তান, সুদান, লিবিয়া, ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান, তুরস্ক উল্লেখযোগ্য। তবে জঙ্গি কার্যকলাপের অভিযোগে সবশেষ যুক্তরাজ্য এই সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে।

এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়ান ফেডারেশন, পাকিস্তান, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স, কাতার, সুদান, ওমান, জর্ডান, সিরিয়া, ইরাক, মিসর, লিবিয়া, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, আজারবাইজান, তুরস্ক ও তিউনিশিয়া সরকার হিযবুত তাহরীরের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে। তারপরও এসব দেশে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সংগঠনটি।

(ঢাকাটাইমস/১৮ডিসেম্বর/এলএম/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এখন তিন হাসপাতালে রোগী দেখছেন সেই ডা. সংযুক্তা সাহা

কোরবানির ঈদ সামনে, মশলার বাজারে উত্তাপ

প্রতিমন্ত্রীর শ্যালকের অপহরণকাণ্ড: ১৬ দিনেও গ্রেপ্তার হননি আলোচিত লুৎফুল হাবীব

মে দিবস বোঝে না শ্রমিকরা, জানে ‘একদিন কাজ না করলে না খেয়ে থাকতে হবে’

গামছা বিক্রেতা থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক, মনে আছে সেই গোল্ডেন মনিরকে?

সোনার ধানের মায়ায় হাওরে নারী শ্রমে কৃষকের স্বস্তি

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর বার্তা দেবে আ. লীগ 

গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন: চাহিদা বেড়েছে তরমুজের, ক্রেতা কম ডাবের

গাছ কাটার অপরাধে মামলা নেই 

কথায় কথায় মানুষ পেটানো এডিসি হারুন কোথায়? থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের তদন্ত কোথায় আটকে গেল?

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :