ঝিনাইদহে ফুলের বাজারে উত্তাপ, গোলাপ ৫০ জারবেরা ৩০ টাকা 

শাহানুর আলম, ঝিনাইদহ
 | প্রকাশিত : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯:৫৬

মনে দোলা লাগা বসন্ত ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস বরণ করতে উন্মুখ থাকে তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সী মানুষ। আবার কদিন বাদেই ২১ ফেব্রুয়ারি ফুলছাড়া এ দিনগুলি যেন একেবারেই বেমানান। ফলে অন্য সময়ের থেকে এ দিনগুলি এলে ফুলের চাহিদা বেড়ে যায় বহুগুণে। ফলে ব্যস্ততা বেড়ে যায় ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীদের। অতিরিক্ত চাহিদার কারণে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে ঝিনাইদহের দুইটি বড় ফুল বাজারে।

জেলার সব থেকে বড় ফুলের পাইকারি বাজার জেলা সদরের গান্না ও কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অন্য সময়ের থেকে দুই-তিনগুণ বেশি দামে ফুল বিক্রি হচ্ছে। এসব বাজারে পাইকারি একটি গোলাপ আকার ভেদে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। আর খুচরা বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৫০ টাকা। এক থেকে দুই সপ্তাহ আগে একই গোলাপ বিক্রি হয়েছিল ১৫ থেকে ২০ টাকা। এছাড়া জারবেরা বিক্রি হয়েছে ১৫ থেকে ২৫ টাকা। যা দুই সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছিল ৫ থেকে ৮ টাকা। রজনীগন্ধার স্টীক বিক্রি হয়েছে ৮ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছিল ৩ থেকে ৫ টাকায়। একই সময়ে গাদা ফুল বিক্রি হয়েছে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা ধোপা। যে গাদাফুল দুই সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছিল ১০০ থেকে ১৫০ টাকা ধোপা।

জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাঠে মাঠে ফুটে আছে লাল, হলুদ ও কমলা রঙের জারবেরা। ফুটে আছে রং বে-রঙের গোলাপ, রজনিগন্ধা, গ্লাডিয়াস ও গাঁদা ফুল। ফুটে থাকা ফুলের রঙে স্বপ্ন রাঙাতে ব্যস্ত সময় পার করছে জেলার ফুলচাষিরা। প্রতিবছর বসন্ত বরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি ও ২৬ মার্চ এলেই এ জেলার ফুলচাষি ও ফুলকর্মীদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। বিভিন্ন জাতীয় উৎসবে এ এলাকায় উৎপাদিত ফুল ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ফলে ফুলের বাড়তি চাহিদা মিটাতে ব্যস্ত সময় পার করে জেলার ফুলচাষিরা।

ব্যবসায়ী ও কৃষকরা বলছেন, ঝিনাইদহে গাদা ফুলের পরিমাণ সব থেকে বেশি। দেশের গাদা ফুলের মোট চাহিদার ৬৫ শতাংশ পূরণ করে ভারতীয় সীমান্তবর্তী এ জেলার উৎপাদিত ফুল।

চলতি মৌসুমে ঝিনাইদহ জেলায় প্রায় ৪০০ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়েছে। এরমধ্যে জেলা সদরে ৩৭ হেক্টর, কালীগঞ্জে ১৫০ হেক্টর, কোটচাদপুরে ৪৫ ও মহেশপুরে ১৫৯হেক্টর জমিতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের রং-বেরঙের ফুলের চাষ হয়েছে। সব থেকে বেশি ফুলের চাষ হয় জেলা সদরের গান্না ও কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নে। যে কারণে এ এলাকাটি অনেকের কাছে ফুলের নগরী বলে পরিচিত।

জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের ত্রিলোচনপুর গ্রামের ফুলচাষি টিপু সুলতান জানান, ২০১৭ সালে ৫৫ লাখ টাকা খরচ করে ৫ বিঘা জমিতে জারবেরা ফুলের চাষ করেছিলাম। বর্তমানে প্রায় ২০ বিঘা জমিতে আমার ফুল চাষ রয়েছে। এরমধ্যে গোলাপ রয়েছে ৫ বিঘার মত। বিদেশি ফুল জারবেরা কাটার পরেও ১ সপ্তাহের বেশি সময় তাজা থাকে।

কোটচাঁদপুর উপজেলার তালিনা গ্রামের কৃষক সনজিত দাস জানান, আড়াই বিঘা জমিতে গাদা ফুলের চাষ করেছেন। এরই মধ্যে ৫০ হাজার টাকা খরচের বিপরীতে বিক্রি করেছেন দেড় লাখ টাকার ফুল। এখনো অর্ধলাখ টাকার ফুল বিক্রি করা যাবে বলে যোগ করেন এ কৃষক। ওই গ্রামের কৃষানি সীমা রানী জানান, তিনি প্রায় ১২ বছর যাবৎ ফুলের মালা তৈরি করার কাজ করছেন। গাদা ফুলের প্রতি ঝোপায় তার আয় হচ্ছে ১২ টাকা। এভাবে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ আয় করি।

সদর উপজেলার গান্না বাজার ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম জানান, এখন ফুলের বাজার দাম বেশি ভালো রয়েছে। দাম ভালো পেলে ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি ও ২৬ মার্চ পর্যন্ত সদর, কালীগঞ্জ, মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর উপজেলার বিভিন্ন বাজার থেকে প্রায় ১৫ থেকে ২৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে ধারণা করছি।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর-এ-নবী জানান, দাম ভালো পেতে খেত থেকে তোলার পর ফুল সতেজ রাখা জরুরি। কারণ গ্রাহক পর্যন্ত পৌঁছাতে অনেকটা সময় লেগে যায়। এ জন্য জারবেরা খেত থেকে কাটার সাথে সাথে পানির ভেতরে দিয়ে রাখতে হবে। গোলাপের ক্ষেত্রেও পানির ভেতরে রেখে হালকা পানি স্প্রে করতে হবে। গাদা ফুলও তোলার পর খেয়াল রাখতে হবে যেন ফুলে কোনো আঘাত না লাগে।

(ঢাকা টাইমস/১৩ফেব্রুয়ারি/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :