৭২ বছর পর ৭ ভাষা সৈনিকের নামে স্মরণিকা, এখনো হয়নি পূর্ণাঙ্গ তালিকা
![](/assets/news_photos/2024/02/21/image-344261.jpg)
ভাষা আন্দোলনের ৭২ বছরে এসে ৭ জন ভাষা সৈনিকের নামে স্মরণিকা প্রকাশ করতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট। তবে প্রত্যাশিত ভাষা সৈনিকদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা এখনো দেখেনি আলোর মুখ।
২১ ফেব্রয়ারি বুধবার দুপুর তিনটায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক এই স্মরণিকা উন্মোচণের কথা রয়েছে। এতে থাকছে ভাষা সৈনিক আবুল বরকত, রফিক উদ্দিন আহমেদ, সফিউর রহমান, আব্দুল জব্বার, আব্দুল সালাম, আব্দুল আউয়াল ও অলি উল্লাহর নাম।
রক্তের বিনিময়ে আজ আমাদের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। ৫২’য় ভাষার জন্য প্রথম ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করেছিল বাংলার দামালরা। সেই মহান ভাষা সৈনিকদের ৭ জনকে নিয়ে স্মরণিকা প্রকাশ হলেও পূর্ণাঙ্গ তালিকা হয়নি ৭২ বছরেও। প্রতি বছর জাতি তাদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিয়ে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করলেও তাদের সকলের ইতিকথা আমাদের আজো অজানা।
বাংলা ভাষার অধিকার আন্দোলনের বিরুদ্ধে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারি করে পাকিস্তানের সরকার। নিজেদের মায়ের ভাষা ও বাঙালি জাতির অস্তিত্ব রক্ষায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করলে ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে পাকিস্তানি পুলিশ। এতে নিহত হয় রফিক, বরকত, জব্বার, সালামসহ অনেকেই। এরপর ২২-২৩ ফেব্রুয়ারি বাঙালিরা পূর্ণ হরতাল পালন করে পুনরায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে। ভাষা আন্দোলনের শহীদ স্মৃতিকে অম্লান করতে ১৯৫২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন দৈনিক আজাদ পত্রিকার সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দীন।
বাংলাভাষা নিয়ে সকল প্রাপ্তি ও স্বীকৃতি পেলেও বাঙালি জাতির ব্যর্থতার দায় যেন এখন শুধুই মহান ভাষা সৈনিকদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করতে না পারা। এ বিষয়ে ২০১০ সালে হাইকোর্ট থেকে নির্দেশনা দেওয়া থাকলেও ১৪ বছরেও তা আলোর মুখ দেখেনি।
এ বিষয়ে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা ইন্সিটিটিউটের (ভাষা, গবেষণা ও পরিকল্পনা) পরিচালক মোহা. আমিনুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা উল্লিখিত সাতজনের নামে স্মরণিকা প্রস্তুত করেছি, প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন। আমাদের কাজ তো চলছে। তবে পূর্ণাঙ্গ তালিকার বিষয়ে এখনো কাজ বাকি আছে নাকি চলছে সে বিষয়ে বলতে পারছি না। আমি ৭ মাস ধরে পরিচালক হিসেবে কাজে নিযুক্ত রয়েছি। এ বিষয়ে আমার জানা নেই।’
২০১০ সালে বাংলা ভাষার আন্দোলনে সম্পৃক্তদের তালিকা তৈরির নির্দেশনা চেয়ে রিট করেছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ। পরে ২০১১ সালের ২০ জানুয়ারি আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় আন্তর্জাতীক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট ও বাংলা একাডেমি সহকারে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি এক বছর পরে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নেওয়া ১৪ নারীসহ জীবিত ৬৮ জনকে ভাষাসৈনিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি গেজেট প্রকাশ করে। তালিকাটি গেজেট আকারে প্রকাশ হয় ২০১২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। তবে এই তালিকা নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়। পরে ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদ ও ভাষা সৈনিকদের রাষ্ট্রীয় সম্মান-সম্মানী ভাতা ও ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি সংরক্ষণের নির্দেশনা চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করা হয়। এরপর ৬ মাসের মধ্যে ভাষা শহীদ ও ভাষা সৈনিকদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করতে নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। পর্রবতীতে ২০২০ সালে ৮ই র্মাচ এই মামলাটি ভাষা শহীদ ও ভাষা সৈনিকদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করতে পুনরায় নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে এ সংক্রান্ত রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সুবীর নন্দী দাস ও ইশরাত হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
২০২০ থেকে ২০২৩ প্রযন্ত মামলাটির রাষ্ট্রপক্ষ আইনজীবি হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিষ্টার এ.বি.এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ (বাশার)। সবশেষ তথ্য সম্পর্কে তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘একটি কমিটি করার কথা ছিল, যে কমিটির কাজ হবে যারা ভাষা সৈনিক আছেন এবং যারা ইতিহিাস গবেষক আছেন, তাদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে তালিকা তৈরী করা। বিষয়টি অতি গুরুত্বের সঙ্গে দেখার জন্য বাংলা একডেমি ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ও ইতিহাস গবেষকদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হলেও পরবর্তীতে কমিটি রিপোর্ট দেয় যে, ভাষা আন্দোলনের এত বছর পরে যদি আমরা নতুন করে ভাষা সৈনিকদের তালিকা করতে যাই তাহলে তথ্য বিভ্রাট ঘটতে পারে। এরকম একটা আন্দোলনে কাউকে রাখা বা কারও নাম বাদ দেওয়া যৌক্তিক মনে হয়নি। ফলে তারা বলেছিলেন এই তালিকাটি আসলে করা সম্ভব নয়।’
ভাষা আন্দোলনে শহীদ রফিকউদ্দিন আহমদের ভাতিজা আব্দুল রউফ বলেন, ‘বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৫২-র ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সম্মুখের রাস্তায় ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে বিক্ষোভ প্রদর্শনরত ছাত্র-জনতার মিছিলে আমার চাচা (রফিক) অংশগ্রহণ করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হোস্টেল প্রাঙ্গনে পুলিশ গুলি চালালে সেই গুলি রফিকউদ্দিনের মাথায় লাগে। গুলিতে মাথার খুলি উড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। মেডিকেল হোস্টেলের ১৭ নম্বর রুমের পূর্বদিকে তার লাশ পড়ে ছিল। ছয় সাত জন ধরাধরি করে তার লাশ অ্যানাটমি হলের পেছনের বারান্দায় এনে রাখেন। তাদের মাঝে ডা. মশাররফুর রহমান খান রফিকের গুলিতে ছিটকে পড়া মগজ হাতে করে নিয়ে যান। রাত তিনটায় সামরিক বাহিনীর প্রহরায় ঢাকার আজিমপুর গোরস্তানে শহীদ রফিকের লাশ দাফন করা হয়। এইটুকু আমরা জানতে পারলেও আজ পর্যন্ত সনাক্ত করতে পারেনি কেউ।’
এদিকে ২০০৮ সালের ১৫ মে ভাষা শহীদ রফিক উদ্দিন আহমেদের স্মৃতিকে চিরজাগ্রত রাখতে তার জন্মস্থান সিঙ্গাইর উপজেলার বলধারা ইউনিয়নের পারিল গ্রামের নাম পরিবর্তন করে রফিকনগর নামকরণ করা হয়। তবে তা শুধু মানুষের মুখে মুখেই রয়ে গেছে বলে আক্ষেপ করেন আব্দুল রউফ।
(ঢাকাটাইমস/২০ফেব্রুয়ারি/এএম/এসআইএস)সংবাদটি শেয়ার করুন
জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
জাতীয় এর সর্বশেষ
![](/cache-images/news_photos/2024/07/27/resize-90x60x0image-360345.jpg)
আন্দোলন চলাকালীন এক নেতা নুরকে চার লাখ টাকা দেন: ডিবিপ্রধান
![](/cache-images/news_photos/2024/07/27/resize-90x60x0image-360344.jpg)
গর্তে লুকিয়ে থাকা জঙ্গিদের খুঁজে বিচার করা হবে: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী
![](/cache-images/news_photos/2024/07/27/resize-90x60x0image-360340.jpg)
মেট্রোরেল কবে চালু হবে বলা যাচ্ছে না: ওবায়দুল কাদের
![](/cache-images/news_photos/2024/07/27/resize-90x60x0image-360333.jpg)
মিয়ানমারে বাংলাদেশসহ ছয় দেশের নিরাপত্তা বৈঠক
![](/cache-images/news_photos/2024/07/27/resize-90x60x0image-360332.jpg)
সন্ধ্যা পর্যন্ত ইন্টারনেটের ধীরগতি থাকবে
![](/cache-images/news_photos/2024/07/27/resize-90x60x0image-360331.jpg)
বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ শহরের তালিকায় ৬ষ্ঠ ঢাকা
![](/cache-images/news_photos/2024/07/27/resize-90x60x0image-360324-1722059967.jpg)
আহতদের দেখতে পঙ্গু হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী, সুচিকিৎসার নির্দেশ
![](/cache-images/news_photos/2024/07/27/resize-90x60x0image-360323-1722066429.jpg)
দেশের অর্থনীতি পঙ্গু করে ভিক্ষুকের জাতি বানাতে সহিংসতা: প্রধানমন্ত্রী
![](/cache-images/news_photos/2024/07/27/resize-90x60x0image-360319.jpg)
জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত হলেই কারফিউ শিথিল হবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
![](/cache-images/news_photos/2024/07/27/resize-90x60x0image-360318.jpg)