জরায়ুর টিউমার অপারেশন করতে গিয়ে রোগীর মূত্রনালি কেটে ফেলার অভিযোগ

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
অ- অ+

গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তার ‘মাওনা ল্যাব এইড হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ থেকে জরায়ুতে হওয়া টিউমার অপারেশন করিয়ে ছিলেন জেসমিন আক্তার (৩৯) নামের এক পোশাক শ্রমিক। কিন্তু তিনি আর সুস্থ জীবনে ফিরতে পারেননি। চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় তার জীবন এখন সংকটাপন্ন। নতুন করে অপারেশন করতে লাগবে দুই লাখ টাকা। তারপরও যে তিনি সুস্থ হবেন এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই।

জেসমিন আক্তার শ্রীপুর পৌর এলাকার কেওয়া গ্রামের আফাজ উদ্দিনের মেয়ে। হতদরিদ্র বাবার কোনো সম্পত্তি নেই। সরকারি খাস জমিতে বাড়ি তুলে থাকেন। প্রায় ১৫ বছর আগে এক ব্যক্তির সঙ্গে তার বিয়ে হয়, দুই বছর পর একমাত্র ছেলে জাহিদুল ইসলাম জোবায়েরের জন্ম হলে তার স্বামী জেসমিনকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যান। অন্যের বাড়িতে ভাড়া থেকে অনেক সংগ্রাম করে একমাত্র ছেলেকে লেখাপড়া করাচ্ছিলেন জেসমিন।

জানা গেছে, শারীরিক সমস্যার কারণে গত বছরের ২০ মার্চ শ্রীপুরের মাওনা ল্যাব এইড হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি হন জেসমিন আক্তার। পরে গাইনি চিকিৎসক ডা. মাহমুদা আলম তার জরায়ুর টিউমার অপসারণে অস্ত্রোপচার করেন। যদিও অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, ‘অবস্থা ভালো না থাকায় জরায়ু ফেলে দিয়েছেন।’

এরপর ধার দেনা করে হাসপাতালের ৩১ হাজার টাকা পরিশোধ করেন জেসমিন। এরপর হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে আসেন। তবে সুস্থ হয়ে না ওঠায় ফের চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন জেসমিন। প্রায় ৬ মাস কয়েক ধাপে ওষুধ দিয়ে তার চিকিৎসা করা হয়। এতে আরও প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু দিন দিন জটিলতা আরও বাড়তে থাকে। সঙ্গে অনবরত প্রস্রাবও ঝরতে থাকে।

এ অবস্থায় জেসমিন ঢাকার ‘মামস ইন্সস্টিটিউট অব ফিস্টুলা অ্যান্ড ওমেন হেলথ’ প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পরীক্ষা-নীরিক্ষা করান।

সেখানকার চিকিৎসকেরা জেসমিনকে জানান, ‘তার মূত্রনালির কয়েকস্থানে কেটে ফেলেছেন পূর্বের চিকিৎসকেরা।’ এ সময় তারা দেশের অভিজ্ঞ গাইনি চিকিৎসক অধ্যাপক সাঈবা আক্তারের কাছে জেসমিনকে পাঠান। সেখান থেকে তাকে জানানো হয় তার কিডনি খারাপের দিকে যাচ্ছে, দ্রুত অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। অস্ত্রোপচারের ব্যয় দুই লাখ টাকার মতো। তবে ভবিষ্যতে যে তিনি ভালো হবেন তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তায় অবস্থিত ‘মাওনা ল্যাব এইড হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার’র কোনো অনুমোদন নেই। মাওনা বাজার রোডে বহুতল ভবন ভাড়া নিয়ে তা পরিচালিত হচ্ছে।

এ বিষয়ে জেসমিন আক্তার বলেন, ‘প্রথমবার অস্ত্রোপচারের পর ভালো না হলেও জীবিকার তাগিদে পুরনো প্রতিষ্ঠান ‘ভিনটেজ ডেনিমে’ কাজে ফিরি। প্রস্রাব ঝরায় শরীর থেকে দুর্গন্ধ তৈরি হওয়ায় আমার চাকরি চলে যায়। এদিকে প্রতিমাসে ১৭০০ টাকা বাসা ভাড়া দিতে হচ্ছে। আগে বিভিন্ন মানুষের সহায়তায় চিকিৎসা করালেও এখন চিকিৎসার অর্থ না থাকায় বিনা চিকিৎসায় দিন কাটাতে হচ্ছে। যে চিকিৎসক আমার এ অবস্থা করল তার বিচারের জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করেও কোনো সাড়া পাইনি। আমি কার কাছে যাব এখন।’

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেসমিনের অপারেশন করা মাওনা ল্যাব এইড হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চিকিৎসক ডা. মাহমুদা আলমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক রিয়াজ উদ্দিন এ বিষয়ে হাসপাতাল মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।

জেসমিনের একমাত্র ছেলে জাহিদুল ইসলাম জোবায়ের স্থানীয় আব্দুল মালেক মাস্টার কিন্ডারগার্টেনের দশম শ্রেণির ছাত্র। মেধাক্রমে সে ক্লাসে প্রথম অবস্থানে রয়েছে। জোবায়ের জানায়, ‘অনেক স্বপ্ন ছিল বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়ার, সংসারের অস্বচ্ছলতায় বাণিজ্য বিভাগে পড়ছি। সন্তানের সামনে মা বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর দিকে যাচ্ছে। মায়ের অসহ্য যন্ত্রণার কান্নায় এখন নিজেকে খুব অসহায় লাগে। কিন্তু আমি তো কিছুই করতে পারছি না। তবে যে ভুল চিকিৎসায় মায়ের এ অবস্থা তার বিচার চাই।’

এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রণয় ভূষণ দাস দৈনিক ঢাকা টাইমসকে বলেন, জেসমিনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/৩মার্চ/এআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
২০৩০ সালের মধ্যে ১৫০ পৌরসভায় শেষ হবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ: অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী
উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের মাথায় বোতল মারল কে?
কিছু ঘটলেই যমুনায় যাওয়ার প্রবণতা সহ্য করা হবে না: উপদেষ্টা মাহফুজ 
সিলেট থেকে ৪১৮ যাত্রী নিয়ে মদিনায় গেল প্রথম হজ ফ্লাইট
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা