রমজান মাস জাকাত আদায়ের উত্তম সময়

মাওলানা মুহাম্মাদ আনওয়ার হুসাইন
  প্রকাশিত : ২০ মার্চ ২০২৪, ১৩:৫৯| আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৪, ১৪:০৬
অ- অ+

জাকাত ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি। ঈমান ও সালাতের পরেই ইসলামের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ফরয ইবাদত হল জাকাত। যাকাতের বিধি-বিধান সম্পর্কে কোরআন-সুন্নাহে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। মাসারিফে জাকাত তথা জাকাত ব্যয়ের খাতসমূহ কুরআন-হাদীস দ্বারা এবং সাহাবা-তাবেয়ীনের বক্তব্য দ্বারা সুনির্ধারিত ও সুস্পষ্ট একটি বিষয়।

জাকাত ব্যক্তির হক। দরিদ্র ও অভাবী ব্যক্তিরাই জাকাত গ্রহণ করতে পারে। জনকল্যাণমূলক কোনো কাজ যাকাতের অর্থ ব্যয় করা বৈধ নয়। যাকাতের যে আটটি খাতের কথা কোরআন মাজীদে বর্ণিত হয়েছে সবক’টি খাতই ব্যক্তি কেন্দ্রিক। জনকল্যাণমূলক কোনো কাজ, তা যতই গুরুত্বপূর্ণ বা ফযিলতপূর্ণ হোক, সেটা যাকাতের খাত নয়। নির্ধারিত ৮টি খাতেই যাকাতের অর্থ ব্যয় করতে হবে।

জাকাত আদায় করা হয় আরবি মাসের হিসেবে। অনারব দেশগুলোতে সাধারণত আরবি মাস গণনায় সাধারণ মানুষদের অবহেলা বা অজ্ঞতা থাকে। কিন্তু রমজান মাস বিশেষভাবে স্মরণীয় থাকে সবার কাছেই। সেজন্য দেখায় যায় এ মাসেই জাকাত আদায় করা হয়। তাছাড়া রমজানে জাকাত আদায়ের বাড়তি ফজিলত রয়েছে। যেহেতু এ মাসে নেক আমলে বেশি সওয়াব ও মর্যাদা পাওয়া যায় সেহেতু এ মাসেই জাকাত আদায় করা উত্তম।

হযরত আলী ইবনে জায়েদ ইবনে জাদয়ান রা. বলেন; রাসূল সা. বলেছেন, ‘রমজান মাসে যে একটি নফল আদায় করল, সে যেন অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করল। আর যে এ মাসে একটি ফরজ আদায় করল, সে যেন অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ আদায় করল।’ (শুয়াবুল ঈমান : ৩৬০৯)। সুতরাং রমজানে জাকাত আদায় করলে বিশেষ ফজিলত পাওয়া যাবে নিঃসন্দেহে।

যাকাতের গুরুত্ব ও ফযিলত সম্পর্কে বহু আয়াত ও হাদীস রয়েছে। জাকাত কার ওপর ফরয, কোন ধরনের সম্পদের জাকাত আদায় করা ফরয, কাকে জাকাত দেওয়া যাবে, কাকে দেওয়া যাবে না এর বিস্তারিত বিবরণ কুরআন মাজীদ ও হাদীস শরীফে আছে।

মুমিনের কর্তব্য হল, এসকল বিধি-বিধান জেনে সে অনুযায়ী জাকাত আদায় করা। যেন সম্পদের জাকাত কুরআন-সুন্নাহ বর্ণিত যথাযোগ্য খাতে যথাযোগ্যভাবে ব্যয়িত হয় এবং ফরয দায়িত্ব থেকে মুক্ত হওয়া যায়। জাকাত সাধারণ দান-খয়রাত নয় যে, কোনো ধরনের বাছবিচার না করে যাকে ইচ্ছা, যা ইচ্ছা এবং যে পরিমাণ ইচ্ছা দিয়ে দেয়া হল। সাধারণ দান যে কোনো বৈধ খাতে, যে কোনো ব্যক্তিকে করা যায়।

এমনকি ধনী ব্যক্তিকেও দেওয়া যায়। সাধারণ দানের জন্য কোনো নেসাব ও বর্ষপূর্তির দরকার হয় না এবং যে কোনো সম্পদই দান করা যায়। কিন্তু যাকাতের বিষয়টি তেমন নয়। জাকাত সব ধরনের সম্পদের ওপর ফরয নয়।

বরং বিশেষ বিশেষ সম্পদের উপর শর্তসাপেক্ষে জাকাত ফরয হয়। হাদীস ও আসারে যার বিস্তারিত উল্লেখ আছে এবং সে অনুযায়ী ফিকহ-ফতোয়ার কিতাবেও যাবতীয় মাসআলা লিপিবদ্ধ রয়েছে। তদ্রুপ জাকাত যে কোনো খাতে ব্যয় করা যায় না। যে কোনো ব্যক্তিকে দেওয়া যায় না। যাকাতের খাত সুনির্ধারিত। নির্ধারিত খাতেই কেবল জাকাত আদায় করা যায়।

এর বাইরে অন্যত্র যাকাতের সম্পদ ব্যয় করা হলে ফরয দায় থেকে মুক্ত হওয়া যায় না। ইমাম শাফেয়ী রাহ.-এর ভাষায়; ‘আল্লাহ তাআলা যাকাতের ফরযকে তাঁর কিতাবে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। অতএব আল্লাহ তাআলার বণ্টনের বাইরে ভিন্ন খাতে বণ্টন করার অধিকার কারো নেই।’ [কিতাবুল উম্ম ২/৭৭]

জাকাত যথাযথ খাতে প্রদত্ত হওয়া এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, আল্লাহ তাআলা বান্দাকে শুধু জাকাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েই ক্ষান্ত হননি; বরং জাকাত ব্যয়ের খাতসমূহ সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন; ‘জাকাত হল কেবল ফকির, মিসকীন, জাকাত উসূলকারী ও যাদের চিত্তাকর্ষণ প্রয়োজন তাদের হক এবং তা দাস মুক্তির জন্যে, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে (জিহাদকারীদের জন্য) এবং মুসাফিরদের জন্যে। এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়’। [সূরা তাওবা (৯) : ৬০]

এই আয়াতে যাকাতের আটটি খাত নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তা হলো; ১. ফকীর, ২. মিসকীন, ৩. আমিলীন (ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধান কর্তৃক জাকাত উসুলের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ), ৪. আলমুআল্লাফা কুলূবুহুম, ৫. আলগারিমীন (ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি), ৬. রিকাব (দাস মুক্তকরণ), ৭. ফী সাবীলিল্লাহ (আল্লাহর পথে জিহাদকারী), ৮. ইবনুস সাবীল (নিঃস্ব মুসাফির)।

এই আট খাতের প্রত্যেকটির পরিচয় হাদীস-আসারের মজবুত দলীল দ্বারা সুপ্রমাণিত। সাহাবা-তাবেয়ীন ও সালাফের নিকট এ খাতগুলোর পরিচয় সুস্পষ্ট ছিলো।

এ জন্য জাকাত প্রদানকারীর কর্তব্য হল, যাকাতের খাতগুলো সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রাখা। সুতরাং উপযুক্ত সময়ে জাকাত সঠিক খাতে আদায় করা ফরয দায়িত্ব। না হয় আল্লাহর পাকরাওয়ের শিকার হতে হবে। আল্লাহ তাআলা জাকাত অনাদায়ের কঠিন শাস্তি বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বান্দার সকল গোণাহ ক্ষমা করলেও বান্দার হক নষ্টের গোণাহ ক্ষমা করবেন না। আর জাকাত হল বান্দার তেমনই এক হক। তাই জাকাত আদায় না করলে কেয়ামতে রয়েছে মর্মান্তিক শাস্তি। হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে ‘রাসূল সা. বলেছেন, ‘যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন, কিন্তু সে এর জাকাত আদায় করেনি, কেয়ামতের দিন তার সম্পদকে টাক (বিষের তীব্রতার কারণে) মাথাবিশিষ্ট বিষধর সাপের আকৃতি দিয়ে তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। সাপটি তার মুখের দুই পাশ কামড়ে ধরে বলবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার জমাকৃত সম্পদ।’ (সহিহ বুখারি: ১৪০৩)। আল্লাহ তাআলা আমাদের সামর্থবানদের সঠিক সময়ে সঠিক উপায়ে জাকাত আদায়ের তাওফিক দান করুন।

(ঢাকাটাইমস/১৯মার্চ/এসআইএস)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
নওগাঁয় বিস্ফোরক মামলায় উপজেলা আ.লীগের সভাপতি গ্রেপ্তার 
টেস্ট ড্রাইভের কথা বলে প্রাইভেটকার ছিনতাই: গাড়ি ও বিদেশি পিস্তলসহ যুবক গ্রেপ্তার
কবিরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
সাত বিশিষ্ট ব্যক্তির স্বাধীনতা পুরস্কার তুলে দিলেন প্রধান উপদেষ্টা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা