চাকরির প্রলোভনে ট্যুরিস্ট ভিসায় কিশোরীকে দুবাইতে বিক্রি করে দেয় দুই বোন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৪ মার্চ ২০২৪, ১২:১৮| আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২৪, ১২:২২
অ- অ+
গ্রেপ্তার ফারজানা ও সোহাগী

রাজধানীর ডেমরা এলাকার এক কিশোরীকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে যৌনকর্মী হিসেবে দুবাইতে পাচার ও সেখানে নির্যাতনে মৃত্যুর ঘটনায় প্রধান দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

শনিবার রাতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন- ফারজানা ও সোহাগী ওরফে রিয়া।

রবিবার সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, ২০২৩ সালের ১৬ আগস্ট দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা ১৭ বছর বয়সী জান্নাত আক্তারকে দুবাই প্রবাসী ফারজানা ও তার বোন সোহাগী মিলে দুবাইতে যৌনকর্মী হিসেবে পাচার করেন। সেখানে যাওয়ার কয়েক দিন পর ৮ সেপ্টেম্বর জান্নাতের মৃত্যু হয়। তবে বিষয়টি পাচার চক্র পরিবারের কাছে গোপন রাখে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ দূতাবাসে এক কিশোরীর লাশ দেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেন দুই প্রবাসী। এরই সূত্রে নিহত জান্নাতের পরিবার জানতে পারে জান্নাতের মৃত্যু হয়েছে। পরবর্তীতে তার লাশ দেশে আনা হয়। এই ঘটনায় নিহতের পরিবার আদালতে মানব পাচার আইনে একটি মামলা দায়ের করে। মামলায় দুই বোন ফারজানা ও সোহাগীসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২ থেকে ৩ জনকে আসামি করা হয়। পরবর্তীতে আদালত যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা গ্রহণের নির্দেশ দেন। ২০২৩ সালের ৬ ডিসেম্বর মামলাটি গ্রহণ করে থানা পুলিশ। পরবর্তীতে অভিযান চালিয়ে দুই বোনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অভিযুক্তদের বরাত দিয়ে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক জানান, নিহত কিশোরী জান্নাত রাজধানীর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী এলাকায় আসামিদের প্রতিবেশী ছিল। নিহত জান্নাতের বাবা জাহাঙ্গীর সিএনজি চালক এবং মা অন্যের বাসায় কাজ করে সংসার চালান। এভাবে টানাপোড়েনের সংসারে হাল ধরতে জান্নাতকে বিদেশে নিয়ে ভালো চাকরির প্রলোভন দেখান প্রতিবেশী সোহাগী ও ফারজানা।

দুই বোন মিলে জান্নাতের পরিবারকে বুঝান, তাকে দুবাই নিয়ে একটি হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ দেবেন। এর মাধ্যমে অনেক ভালো বেতন এবং ভাতাসহ অন্যান্য অনেক সুবিধা পাবেন। আর এতে পরিবারের সচ্ছলতা ফিরে আসবে। দুবাই নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ার খরচের কথা বলে তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নেন দুই বোন, যা জান্নাতের পরিবার ঋণ করে জোগাড় করে দেয়।

জানা গেছে, কিশোরী জান্নাতের নামে ভুয়া নাম ঠিকানায় পাসপোর্ট ও টুরিস্ট ভিসা দিয়ে দুবাই পাঠানো হয়। ২০২৩ সালের ১৬ আগস্ট জান্নাতকে দুবাই পাঠানো হয়। দেশটিতে যাওয়ার দুই দিন পর জান্নাত তার বাবাকে জানান, আসামিরা দুবাইতে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তাকে যৌনকর্মী হিসেবে পাচার করেছে। দুবাই যাওয়ার পর অমানুষিক নির্যাতনের মাধ্যমে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে।

র‌্যাব-৩ অধিনায়ক আরও জানান, অমানবিক নির্যাতনের ফলে ২০২৩ সালের ৮ সেপ্টেম্বর দুবাইতে মারা যান জান্নাত। ফলে দীর্ঘদিন পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ না করায় সোহাগীর দ্বারস্থ হন জান্নাতের বাবা-মা। সোহাগী ও ফারজানা মিলে জান্নাতের পরিবারকে বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিয়ে জানান, তাদের মেয়ে দুবাইতে খুব ভালো আছে, সময় পেলেই যোগাযোগ করবে।

পরবর্তীতে একই বছরের ২৪ নভেম্বর একজন দুবাই প্রবাসী দূতাবাসে লাশ দেখতে পেয়ে পাসপোর্টের তথ্য ও ছবি দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করে। এই পোস্টের সূত্রে ২৬ নভেম্বর মেয়ের মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পারেন জান্নাতের বাবা-মা। পরবর্তীতে জান্নাতের বাবা মামলা করলে জানুয়ারিতে দেশে ফিরে সোহাগী ও ফারজানা আত্মগোপনে চলে যান। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় গত শনিবার রাতে র‍্যাব-৩ তাদের গ্রেপ্তার করে।

ঢাকাটাইমস/২৪মার্চ/এসএস/এফএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
এক মোটরসাইকেলে যাচ্ছিল ৪ বন্ধু, ট্রাক চাপায় প্রাণ গেল দুজনের
ভারতের সামরিক অভিযানের দ্রুত, দৃঢ় ও কঠোর জবাব দেওয়া হবে: পাকিস্তানের সেনাপ্রধান
সুনামগঞ্জে কোটি টাকা মূল্যের ভারতীয় ৯০টি গরুসহ নৌকা জব্দ 
সাবেক আইজিপি মোদাব্বির হোসেন চৌধুরীর ইন্তেকাল 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা