ডিজে পার্টিতে মোবাইল খোয়া নিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের দ্বন্দ্ব, নৃশংসভাবে আকাশকে খুন করেন তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২৪, ১৪:২৪ | প্রকাশিত : ২৫ মার্চ ২০২৪, ১৩:৪৪

একটি ডিজে পার্টিতে মোবাইল ফোন খোয়া যাওয়াকে কেন্দ্র করে সাভারে দুই কিশোর গ্যাং গ্রুপের দ্বন্দ্ব হয়। সেই দ্বন্দ্বে কুপিয়ে হত্যা করা হয় আকাশ নামের এক যুবককে। প্রকাশ্যে একটি হোটেলে এমন হত্যার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্তসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। সাভারে পৃথক অভিযানে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এসব তথ্য জানান বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

র‌্যাব বলছে, সাভারে আকাশ হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি হৃদয় গ্রুপের প্রধান সন্ত্রাসী হৃদয় হোসেন ওরফে গিয়ার হৃদয়সহ ৮ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সম্প্রতি সাভার এলাকায় বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে হৃদয় গ্রুপের সদস্যদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। গত বছরের ৯ জুলাই মাদক ব্যবসার টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে ‘হৃদয় গ্রুপের’ সদস্যরা ‘পিনিক রাব্বি গ্রুপের’ সদস্য আকাশ মাহমুদ নামের এক যুবককে দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে।

এছাড়াও এই গ্রুপের সদস্যরা ১২ মার্চ সাভার পৌর এলাকায় সোহেল নামে এক ব্যক্তিকে এবং গত ২১ মার্চ সোবহানবাগ এলাকায় আমজাদ নামে অপর এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাতে নৃশংসভাবে হত্যা করে বলে জনশ্রুতি আছে।

র‌্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা হৃদয় গ্রুপের প্রধান হৃদয় হোসেন ওরফে গিয়ার হৃদয়, আরিয়ান আহম্মেদ জয় ওরফে ড্যাগার আরিয়ান, নাসির উদ্দিন নাসু ওরফে বাবা নাসু, আবিরুল হক আবির ওরফে কাটা আবির, জোবায়ের হাসান খন্দকার ওরফে পাইটু জোবায়ের, জাকির হোসেন রনি, জাহিদুল ইসলাম ওরফে জাহেদ এবং আমির হামজা। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় বিপুল সংখ্যক দেশীয় অস্ত্র, হেরোইন ও কষ্টিপাথর সদৃশ্য মূর্তি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্তরা সব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাদের নিজেদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, অভিযুক্ত গ্রেপ্তার সবাই ঢাকার সাভার এলাকার ‘হৃদয় গ্রুপে’র সদস্য। তারা এলাকায় নিজেদের আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছিলেন। তাদের গ্রুপে ১০-১৫ জন সদস্য রয়েছে।

অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ছিনতাই:

মঈন বলেন, ৪/৫ বছর ধরে হৃদয়ের নেতৃত্বে ‘হৃদয় গ্রুপ’ পরিচালিত হয়ে আসছে। তারা এলাকায় ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা, জমি দখল, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতো। এই গ্রুপের সন্ত্রাসীরা একাকি পথচারীদের আকস্মিকভাবে ঘিরে ধরে চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোর করে অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনতাই করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

তাদের আয়ের অন্যতম উৎস ছিল সাভার এলাকায় নির্মাণ কাজে চাঁদাবাজি করা। প্রায়ই মাদক সেবন ও মাদক কেনা-বেচাসহ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটত বলে জানা যায়। এই গ্রুপের সদস্যরা বিভিন্ন সময় ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবেও কাজ করতেন।

মোবাইল হারানোর ঘটনায় কুপিয়ে হত্যা:

কমান্ডার খন্দকার আই মঈন বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা আড়াপাড়া এলাকায় একটি বাসায় ডিজে পার্টির আয়োজন করে। এই অনুষ্ঠানে একটি মোবাইল হারানোর ঘটনাকে কেন্দ্র মোবাইল চুরির অভিযোগে দুই যুবককে মারধর করে। পরবর্তীতে ঘটনার জের ধরে সাভারের একটি খাবার হোটেলের ভেতর ‘হৃদয় গ্রুপ’ ও ‘পিনিক রাব্বি গ্রুপের’ সংঘর্ষে আকাশ নামে এক যুবককে ধারালো দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। গ্রেপ্তারকৃতরা পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ছিনতাই করা টাকা ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে গত ২২ মার্চ আমজাদকে হত্যার উদ্দেশ্যে কৌশলে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর জখম করে এবং সাভার এলাকার সবুজবাগ পুকুর পাড়ে ফেলে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পরবর্তীতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে সবাই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে চলে যায়।

কে এই গিয়ার হৃদয়

গিয়ার হৃদয় সাভার এলাকায় ৪/৫ বছর যাবত একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ পরিচালনা করে আসছিলেন। তিনি বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতেন। একই সঙ্গে গ্রুপেরও নেতৃত্ব দিতেন। হৃদয় সাভারের এনাম মেডিকেলের সামনে জনসম্মুখে সংগঠিত চাঞ্চল্যকর কিশোর গ্যাংয়ের দুই গ্রুপের মধ্যকার সংঘর্ষে নিহত আকাশ হত্যা মামলার এক নম্বর পলাতক আসামি। তার বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় মাদক, হত্যা, মারামারি ও ছিনতাইসহ ছয়টি মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা কষ্টি পাথর ও ধাতব মুদ্রা প্রতারণার সঙ্গে জড়িত বলে জানায় র‌্যাব। এছাড়া ভুয়া পাথরের মূর্তিকে কষ্টি পাথর বলে বিক্রিও করতেন তারা।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার জাকির হোসেন রনি ওরফে মেশিন রনি হৃদয় গ্রুপের অন্যতম সদস্য। সে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের দিন হৃদয়ের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকায় একটি আগ্নেয়াস্ত্র কিনে। এই অস্ত্র দিয়ে সে সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতো। আগ্নেয়াস্ত্র ভাড়া দেওয়ায় তাকে সবাই মেশিন রনি হিসেবে চিনত। তার বিরুদ্ধে সাভার থানায় হত্যা মামলা রয়েছে।

ঢাকাটাইমস/২৫মার্চ/এসএস/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

অপরাধ ও দুর্নীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অপরাধ ও দুর্নীতি এর সর্বশেষ

সোনালী লাইফের বহিষ্কৃত সিইও মীর রাশেদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

কোস্ট গার্ডের অভিযানে ৪৫ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার

চাকরির পরীক্ষার আগেই মিলত উত্তর, চুক্তি ১২-১৪ লাখ টাকায়: ডিবি

আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সক্রিয় সদস্য গ্রেপ্তার

আন্তর্জাতিক শিশু পর্নোগ্রাফি চক্রের মূলহোতা গ্রেপ্তার, বিপুল কনটেন্ট জব্দ

এফডিসিতে সাংবাদিকদের উপর হামলা: ১১ সদস্যের তদন্ত কমিটি

স্ত্রীসহ নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ডিবিতে যা বলেছেন কারিগরি বোর্ডের চেয়ারম্যান

শেরপুরের ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি মামলার আসামি ঢাকায় গ্রেপ্তার

খেলনার প্যাকেটে আমেরিকা থেকে এসেছে কোটি টাকার গাঁজার চকলেট-কেক

সাবেক আইজিপি বেনজীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :