ছাত্ররাজনীতি: থমথমে বুয়েট
মধ্য রাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রবেশকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে আন্দোলন করছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। এরই মধ্যে সমাবেশ করে অবিলম্বে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি চালুর দাবি জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি। তার এমন দাবির পর রবিবার দুপুরে রাজধানীর পলাশী এলাকায় বুয়েট ক্যাম্পাসে গিয়ে একরকম থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করতে দেখা গেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করছেন।
রবিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় বুয়েট ক্যাম্পাসে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা নেই বললেই চলে। গেটগুলোতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছেন দায়িত্বরত সিকিউরিটি গার্ডরা। রয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনের আনাগোনাও।
বুয়েট ক্যাম্পাসের ১নং গেটের দায়িত্বরত সিকিউরিটি গার্ডরা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ছাত্রলীগ নেতাদের প্রবেশের পর শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন করছেন। ছয় দফা দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা, যা পূরণ না হলে আন্দোলন চলবে বলেও জানিয়েছেন তারা।
মধ্য রাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রবেশকে ঘিরে আন্দোলন পাল্টা আন্দোলনের পর রবিবার নেতাকর্মীদের নিয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসে এসেছেন ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান। ক্যাম্পাস হলের অভ্যন্তরে প্রবেশ না করলেও তারা শহীদ মিনারে ফুল দেন। রবিবার দুপুর আড়াইটার দিকে প্রায় কয়েক শ নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে বুয়েট শহীদ মিনারে ফুল দেন ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। ফুল দিয়ে কিছুক্ষণ পরেই তারা বুয়েট ত্যাগ করেন। এসময় বুয়েটের মূল ফটক এবং বিভিন্ন হলগুলোর প্রবেশ পথগুলো বন্ধ ছিল।
এ ঘটনার পরিপেক্ষিতে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা আজ বিকাল ৪টার দিকে সংবাদ সম্মেলনের কথা জানিয়েছিল। কিন্তু তাও স্থগিত করেন তারা। পরে আবার আজ বিকাল সোয়া ৫টার দিকে ব্রিফিং করবেন বলে জানিয়েছে ঢাকা টাইমসকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থী ঢাকা টাইমসকে বলেন, আগে ভিসি স্যারের সঙ্গে দেখা করব, তারপর গণমাধ্যমে প্রেস রিলিজ দেব। কারো নাম প্রকাশ করে তারা কথা বলতে চাচ্ছেন না গণমাধ্যমে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, ২০১৯ সালে আবরার ফাহাদ হত্যার পর বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হয়। এরপরও গত বুধবার মধ্যরাতের পর ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন, রাজনৈতিক কার্যক্রম চালান। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা গত শুক্রবার বেলা আড়াইটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন। পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ করেন। এই পরিস্থিতির মধ্যে আজকে ক্যাম্পাসে শহীদ মিনারে ফুল দিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এর আগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক সমাবেশে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি ফেরানোর আল্টিমেটাম দেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।
আন্দোলনরত একজন শিক্ষার্থী ঢাকা টাইমসকে বলেন, পরীক্ষা স্থগিতই রয়েছে। পরীক্ষায় কেউ অংশগ্রহণ করেনি।
তিনি বলেন, ভিসি স্যার বলেছেন ৮ তারিখের মধ্যে দাবি পূরণ করা হবে। কিন্তু আমরা মৌখিক আশ্বাস মেনে নিচ্ছি না। আমাদের ফলাফল না এলে ঈদের পরও আন্দোলন চালিয়ে যাব।
এই শিক্ষার্থী বলেন, ভিসির স্যারের সঙ্গে একটা বৈঠক হতে পারে। বৈঠক হলে তারপর পরবর্তী সিদ্ধান্তের কথা জানানো যাবে। ভিসির সঙ্গে আজকে বৈঠকের চেষ্টা করছেন শিক্ষার্থীরা। তবে কখন তার সাক্ষাৎ পাবেন তা নিশ্চিত নন তারা।
শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবি
১. বিশ্ববিদ্যালয়ের সুস্পষ্ট বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে বুয়েটের সব ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ২৮ মার্চের মধ্যরাতে রাজনৈতিক সমাগমের মূল সংগঠক ২১তম ব্যাচের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বির বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার ও হল বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।
২. ইমতিয়াজের সঙ্গে বুয়েটের বাকি যেসব শিক্ষার্থী জড়িত ছিল, তাদের বিভিন্ন মেয়াদে হল ও টার্ম বহিষ্কার করতে হবে।
৩. বহিরাগত রাজনৈতিক যারা ক্যাম্পাসে ঢুকেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা, তারা কেন, কীভাবে প্রবেশের অনুমতি পেলো, এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট জবাবদিহি বুয়েট প্রশাসনকে দিতে হবে।
৪. উপরিউক্ত ১ ও ২ নম্বর দাবি আগামীকাল সকাল ৯টার মধ্যে বাস্তবায়ন করা না হলে আমরা সব ব্যাচের শিক্ষার্থী ছাত্রকল্যাণ পরিদফতরের পরিচালকের (ডিএসডব্লিউ) পদত্যাগ চাই।
৫. ক্যাম্পাসে মধ্যরাতে বহিরাগতদের প্রবেশের কারণে আমরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। এর প্রতিবাদ হিসেবে আগামী ৩০ ও ৩১ মার্চের টার্ম ফাইনালসহ সব অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করছি।
৬. আন্দোলনরত বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনও হয়রানিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না, এই মর্মে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
(ঢাকাটাইমস/৩১মার্চ/টিআই/ইএস)