চরফ্যাশনের বিস্ময় বালক নয়ন, তৈরি করলো রিমোট কন্ট্রোল নিয়ন্ত্রিত লঞ্চ

চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ৩১ মার্চ ২০২৪, ১৮:২২| আপডেট : ৩১ মার্চ ২০২৪, ২০:৪৪
অ- অ+

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচায় পড়ালেখার পাশাপাশি কীর্তনখোলা-১০ নামে একটি রিমোট কন্ট্রোল নিয়ন্ত্রিত লঞ্চ তৈরি করে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে মো. নয়ন (১৫) নামের এক স্কুলছাত্র। ৭ ফুট দৈর্ঘ্যের লঞ্চটি দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন স্থানীয় উৎসুক জনতা। যা ইতোমধ্যে এলাকায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।

রিমোট কন্ট্রোল নিয়ন্ত্রিত লঞ্চটি তৈরি করতে নয়নের সময় লেগেছে প্রায় ১০ মাস। আর খরচ হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। লঞ্চটি তৈরি করে ইতোমধ্যে পুকুরেও ভাসিয়েছে নয়ন।

নয়ন চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানার চরমানিকা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নাসির ফরাজি বাড়ির মো. আলা উদ্দিন ফরাজির ছেলে। সে চর আইচা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। বাবা আলাউদ্দিন ফরাজি একজন ক্ষুদ্র মৎস্য ব্যবসায়ী ও মা কুলছুম বেগম গৃহিণী। নয়ন ৫ ভাই-বোনের মধ্যে বড়।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কীর্তনখোলা-১০ এর আদলে নয়নের বানানো লঞ্চটি পানিতে চালাতে একটি রিমোট কন্ট্রোল ব্যবহার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে লঞ্চটিতে লাগানো হয়েছে দুইটি মোটর। মোটর দুইটি চালু রাখতে পাওয়ার হিসেবে মোটরসাইকেলের ১২ ভোল্টের একটি ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে। মোটর দুটির সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে দুইটি পাখা যা ঘুরিয়ে সামনে-পেছনে নিয়ে যায় লঞ্চটিকে। তিনতলায় মাস্টার ব্রিজ থাকা এ লঞ্চটিকে বিভিন্ন তলায় বাহারি রঙের আলোকবাতি লাগানো হয়েছে। এবং লঞ্চের নিচ তলায় ডেক ও সামনে দোতলায় ওঠার সিঁড়ি, দোতলা-তিনতলায় কেবিন এবং তিনতলার উপরে পেছনের অংশে সাইলেন্সারের ধোঁয়া বের হওয়ার জায়গা এবং সামনে হেড লাইটও রয়েছে।

স্কুলছাত্র নয়ন জানায়, আমি ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন সবসময় দেখি, সেজন্য লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি হাতে সময় পেলে কিছু বানানোর চেষ্টা করি। তার ভাষ্যমতে, সে যখন নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করতো তখন থেকেই স্কুলে যাওয়ার সময় বাবা-মায়ের কাছ থেকে প্রতিদিন কিছু টাকা নিয়ে তা জমিয়ে রাখতো। এভাবে ৩৫ হাজার টাকা জমায় সে। ওই টাকা দিয়ে ককসিট, প্লাস্টিকের পাইপ, কাগজ, মোটর, ব্যাটারি, বৈদ্যুতিক তার, রিমোট কন্ট্রোলার ও পাখা সংগ্রহ করি। এরপর প্রায় ১০ মাসের চেষ্টায় কীর্তনখোলা-১০ এর আদলে এই লঞ্চটি বানিয়েছি। ৭ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৩ ফুট প্রশস্তের এ লঞ্চটি পানিতে চালাতে নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত রিমোট কন্ট্রোল এবং হাতেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই লঞ্চটি ১০ মিনিটের মধ্যে আদা কিলোমিটার দূরে যেতে পারবে।

নয়ন আরও বলে, গত মঙ্গলবার ২৬ মার্চ আমার এই লঞ্চটি পানিতে ভাসাই। আমার বানানো লঞ্চটি কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চ কোম্পানির মালিককে উপহার হিসেবে দিতে চাই। তাহলে আমার মনের আশা কিছুটা পূরণ হবে।

নয়নের বাবা আলাউদ্দিন ফরাজি জানান, আমার ছেলে নয়ন পড়ালেখার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরেই এসব কাজ করে যাচ্ছে। তার কাজের জন্য তাকে পরিবার থেকে সব সময় আর্থিক সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা দেওয়া হয়। তার বড় স্বপ্ন সে পড়াশোনা করে ইঞ্জিনিয়ার হবে। তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে আমি সব ধরনের চেষ্টা চালাবো। আমার বিশ্বাস সে একদিন ইঞ্জিনিয়ার হবে।

চরমানিকা ইউনিয়নের নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক নিজাম উদ্দিন রাসেল বলেন, আলাউদ্দিন ফরাজির ছেলে একটি লঞ্চ তৈরি করে দেখিয়ে দিয়েছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছেলেরাও অনেক কিছু করতে পারে। তার মেধার যদি মূল্যায়ন করা হয় এবং অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করা হয় তাহলে সে নতুন নতুন আবিষ্কার করতে পারবে বলে প্রত্যাশা করেন এ জনপ্রতিনিধি।

(ঢাকাটাইমস/৩১মার্চ/প্রতিনিধি/পিএস)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
কড়া বার্তা দিতেই ভাঙা হয়েছে ৩টি রিকশা, ক্ষতিপূরণসহ পুনর্বাসনের উদ্যোগ ডিএনসিসির
জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আ.লীগ নিষিদ্ধ জরুরি ছিল: প্রেস সচিব
ভিটামিনের ঘাটতি পূরণে খাবারে ভিন্নতা আনতে হবে
ফরিদপুরে চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার আসামি আকাশ গ্রেপ্তার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা