রংপুরে পানির অভাবে এবারও সেচ সুবিধার বাইরে ৩৯ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমি

রেজাউল ইসলাম বাবু, রংপুর
  প্রকাশিত : ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৫৬
অ- অ+

পানির অভাবে এবারও সেচের সুবিধা আওতার বাইরে রয়েছে তিস্তা সেচ প্রকল্পের ৩৯ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমি। নদীতে পানির নিশ্চয়তা না থাকলেও এরই মধ্যে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা সেচ প্রকল্প সংস্কার ও সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

তবে পানির ন্যায্যতা নিশ্চিত ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ছাড়া বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করাকে কেবল অপচয় বলে মনে করছেন নদী বিশেষজ্ঞরা।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, ১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা সেচ প্রকল্প সম্প্রসারণ ও সংস্কার কাজ শেষ হলে ৭০৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেকেন্ডারি ও টারসিয়ারি সেচ ক্যানেলের মাধ্যমে এক লাখ হেক্টর কৃষি জমিতে সেচ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। এতে করে প্রতি বছর অতিরিক্ত ১০ লাখ মেট্রিকটন খাদ্যশস্য উৎপাদন করা যাবে।

তিস্তার পানির ওপর নির্ভর করেই ১৯৯০ সালে প্রথম দফায় কাজ শেষ হওয়ার পর ৮৪ হাজার ৩৭৮ হেক্টর কৃষি জমিতে সেচ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সে লক্ষ্যমাত্রা এখনো পর্যন্ত পূরণ হয়নি। যার মূল কারণ শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা নদী থাকে পানিশূন্য।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৪ সালে ১৮ হাজার হেক্টর, ২০১৫ সালে ১০ হাজার হেক্টর, ২০১৭ সালে ৮ হাজার হেক্টর, ২০২০-২১ সালে ৪০ হাজার হেক্টর, ২০২৩ সালে ৪৫ হাজার হেক্টর ও ২০২৪ - ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া হয়েছে।

এই অঞ্চলের দুই কোটি মানুষের জীবন-জীবিকার অন্যতম অবলম্বন প্রমত্তা তিস্তা। বর্ষা মৌসুমে পানি প্রবাহ গড়ে ২ লাখ কিউসেক থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে গড়ে থাকে ২ হাজার কিউসেক। তবে কোনো কোনো সময় তা নেমে আসে ৫০০ কিউসেকে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে তিস্তা পাড়ের জনজীবন। হুমকিতে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ।

রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার খলেয়া ইউনিয়নের এলাকার কৃষক আবু তাহের জানান, মূল ক্যানেলে পানি না থাকায় তাদের শ্যালো মেশিনের সাহায্যে জমিতে সেচ দিতে হচ্ছে। এতে করে তাদের খরচ হচ্ছে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। তিস্তার পানি পেলে খরচ হতো মাত্র পাঁচশত টাকা।

একই এলাকার কৃষক তবারোক হোসেন বলেন, ‘তিস্তার সেচ নালাগুলো পানিশূন্য অবস্থায় পড়ে আছে। মাঝেমধ্যে লোকজন এসে খোঁড়াখুঁড়ি করে চলে যায়। পানি কবে পাবো আল্লাহ জানে।’

‘তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও’ সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী জানান, তিস্তা নদীকে বাঁচাতে হলে সঠিক পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। তিনি জাবলেন, ‘নদী ড্রেজিং করে ক্যানালে সংযুক্ত, গভীর ও জলাধারা নির্মাণ করতে হবে। এছাড়া তিস্তার শাখা নদীগুলোর সঙ্গে সংযোগ ফেরাতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে তিস্তা নদী নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছি। আমাদের আন্দোলনের মূল কথা ছিল, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা। কিন্ত সরকার তা না করে ১৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে যে প্রকল্প হাতে নিয়েছে এতে কৃষকের কী উপকার হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। আমরা চাই নদীকে বাঁচাতে। আগামী ২৫ এপ্রিল তিস্থা নদী এলাকার ১৪ উপজেলায় মানববন্ধনের ডাকা দিয়েছি। এরপর এই অঞ্চলের সংসদ সদস্যদের নিয়ে তিস্তা পাড়ে একটি সেমিনারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

তিস্তায় পানি না থাকলে এ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ কী হবে- এমন প্রশ্নে উত্তরাঞ্চল পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মো. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ওভারকাম করার জন্য যতটুকু পারা যায় আমরা তা করব। মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ড্রেজিংয়ের টার্গেট নিয়েছি। যেখানে নদী চার-পাঁচ কিলোমিটার বিস্তৃত আছে, সেখানে আমরা সেটা ১৬০০ মিটারে নিয়ে আসবো। এ পরিকল্পনার প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কিছুটা হয়তো সুফল পাবো।’

রিভারাইন পিপলসের রংপুরের পরিচালক অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘তিস্তার পানি নিশ্চিত করা না হলে তিস্তা সেচ প্রকল্পের পেছনে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে, তা কোনো কাজেই আসবে না।’

তিনি বলেন, ‘এটা একটা অপরিকল্পিত কাজ। তিস্তা সেচ প্রকল্প বৃদ্ধির কাজ করা হচ্ছে, এটাতো শুভঙ্করের ফাঁকি। কারণ এখানে পানি কোথায়? এক খাল সংস্কারের ভেতর দিয়ে যে ধান উৎপাদনে উৎসাহিত করা হচ্ছে বা যে জমিগুলোতে ভুট্টা হতে পারে, মরিচ ও আলু হতে পারে, আমাদের এসব কাজে উৎসাহিত করতে হবে।’

তিস্তা সেচ প্রকল্প সম্প্রসারণ ও সংস্কার প্রকল্পের কাজ এখন পর্যন্ত ৪০ শতাংশ শেষ হলেও পানির অভাবে বাড়াতে পারেনি প্রকল্পের পরিধি। সে কারণেই প্রশ্ন ওঠছে, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন কিংবা পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত না করে এ প্রকল্পে এতো টাকা কী কাজে আসবে?

(ঢাকাটাইমস/১৭এপ্রিল/এজে)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল: সাম্প্রতিক জারিকৃত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও প্রাসঙ্গিক কিছু প্রশ্ন
বিনিয়োগ সংস্থাগুলোকে এক ছাতার নিচে আনার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
বিএনপি রাজত্বের রাজনীতি করে না: মজনু
‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার সর্বদলীয় বৈঠক
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা