মৃত্যুদণ্ড থেকে বাঁচাতে ৩৪ কোটি রুপির তহবিল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩:৫৮
আব্দুল রহিম

সৌদি আরবে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ভারতীয় নাগরিক আব্দুল রহিমকে বাঁচাতে ৩৪ কোটি রুপির তহবিল সংগ্রহ করেছে কেরালার সাধারণ মানুষ।

জানা গেছে, এক কিশোরের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় অভিযুক্ত দক্ষিণ ভারতের বাসিন্দা আব্দুল রহিমকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। গত ১৮ বছর ধরে সৌদি আরবে কারাবাস করছেন তিনি। মৃত্যুদণ্ড থেকে বাঁচতে ভারতীয় অঙ্কের ৩৪ কোটি রুপি চাওয়া হয় আব্দুল রহিমের কাছ থেকে।

ওই অর্থ বা ‘ব্লাড মানি’ সংগ্রহ করতে আব্দুল রহিমের মা এবং পরিবারের সদস্যরা জনসাধারণের কাছে সাহায্য চান। এই আবেদনে সাড়া দিয়েছেন কেরালা বসবাসকারী এবং দেশের বাইরে থাকা বহু মালয়ালি সম্প্রদায়ের মানুষ। ‘ক্রাউড ফান্ডিং’ এর মাধ্যমে ৪০ দিনে ওই বিপুল সংখ্যক অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসার এই ঘটনা এমন এক সময় প্রকাশ্যে এসেছে যখন ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নামক চলচ্চিত্রটি আরও একবার ভারতের জাতীয় টেলিভিশন চ্যানেল দূরদর্শনে সম্প্রচারকে কেন্দ্র করে বিতর্ক চলছে।

এতে দেখানো ‘লাভ জিহাদ’ এবং ধর্মীয় মেরুকরণসহ একাধিক বিষয়ের কারণে এমনিতেই বিতর্কের কেন্দ্রতে ছিল এই চলচ্চিত্রটি। গল্পের পটভূমি ছিল কেরালা।

চলতি মাসে ওই ছায়াছবি টেলিভিশন মাধ্যমে আরও একবার দেখানোর ঘটনায় বিজেপি সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছে বিরোধীরা। এই ঘটনায় বাম সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির বিরুদ্ধে একাধিকবার সরব হয়েছিল।

এবার আব্দুল রহিমের পরিবারের আর্জিতে সাড়া দেওয়ার ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন সাহায্যার্থে এগিয়ে আসা মানুষদের প্রশংসা করে বলেছেন ‘চলচ্চিত্রে ধর্মীয় মেরুকরণের যে চেষ্টা করা হয়েছিল সেটি নয়, এটাই কেরালার আসল স্টোরি।’

সামাজিক গণমাধ্যমেও গত কয়েকদিন ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ‘দ্য রিয়েল কেরালা স্টোরি’। ছায়াছবিতে দেখানো গল্প নয় কেরালার মানবিক দিকই সেই রাজ্যের আসল গল্প বলে সামাজিকমাধ্যমে এমনটা দাবি করেছেন অনেকেই।

সম্প্রতি দূরদর্শনে 'দ্য কেরালা স্টোরি' ছায়াছবির সম্প্রচার নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। এর ফলে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়াতে পারে বলেও আশঙ্কা জানিয়েছিলেন অনেকে।

বিতর্কের মাঝেই সামাজিকমাধ্যমে আলোচনা শুরু হয় 'দ্য রিয়েল কেরালা স্টোরি' নিয়ে। মূলত দু’টি বিষয়কে কেন্দ্র করে আলোচনা শুরু হয়।

একটি ছিল কংগ্রেস সংসদ সদস্য শশী থারুরের সামাজিক মাধ্যমে করা পোস্ট এবং দ্বিতীয়টি হলো সৌদি আরবে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এক ব্যক্তিকে বাঁচাতে ৩৪ কোটি রুপি সংগ্রহের ঘটনা।

শশী থারুরের ওই টুইট ছিল কেরলের একটি প্রাচীন মন্দিরের বিষয়ে, যেটি পুনরুদ্ধারের জন্য ধর্ম নির্বিশেষে মানুষ এগিয়ে এসেছেন। মি. থারুর তার টুইটে লিখেছিলেন, ‘এটাই রিয়েল কেরালা স্টোরির আরও একটা উদাহরণ যেখানে হিন্দু ও মুসলমানরা মিলে ৪০০ বছরের পুরনো দুর্গা মন্দির সংস্কার ও সৌন্দর্যায়ন করেছেন।’

আর দ্বিতীয় ঘটনা হলো আব্দুল রহিমের পরিবারের আর্জিতে সাড়া দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহের।

গত পাঁচই এপ্রিল দূরদর্শনে আরও একবার দেখানো হয় এই ছবি। ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ কেরালার চারটি মেয়ের গল্প এবং এটি ধর্মান্তরিত হওয়ার উপর ভিত্তি করে তৈরি। ধর্মীয় মেরুকরণের অভিযোগ তুলে অনেকে এর পুনর্মুক্তির বিরোধিতা করেছিলেন। ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে পৌঁছে গেলেও তা নিয়ে বিতর্ক শেষ হয়নি।

সামাজিক মাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রে থাকা ‘দ্য রিয়েল কেরালা স্টোরি’-তে যে সমস্ত ঘটনা উঠে এসেছে তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে আব্দুল রহিমের ঘটনা।

কেরালার কোঝিকোড়ের ওই বাসিন্দা আগে অটোরিকশা চালাতেন। সৌদি আরবে গিয়েছিলেন অর্থ রোজগারের আশায়।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য হিন্দু’-তে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ২০০৬ সালে হাউস ড্রাইভিং ভিসায় রিয়াদে যান তিনি। সেখানে গাড়ি চালানোর পাশাপাশি বিশেষভাবে সক্ষম ১৫ বছরের এক কিশোরকে দেখা শোনার ভার ছিল রহিমের ওপর। শ্বাস নেওয়া এবং খাবার খাওয়ার জন্য একটি বিশেষ মেডিক্যাল ডিভাইসের সাহায্য নিতে হতো কিশোরটিকে। রহিমের কাজ ছিল ওই কিশোরকে দেখাশোনা করা এবং গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া।

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুর্ঘটনাক্রমে ছেলেটির গলায় লাগোয়া মেডিক্যাল ডিভাইসটি রহিমের জন্য পড়ে যায়। এর ফলে তার মৃত্যু হয়েছে বলে মৃতের পরিবারের অভিযোগ। ওই কিশোরের মৃত্যুর জন্য তার পরিবার আব্দুল রহিমকে দায়ী করেন।

যদিও ‘দ্য হিন্দু’ তে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, আব্দুল রহিম এবং তার পরিবার এই ঘটনাকে দুর্ঘটনা বলেই দাবি জানিয়ে এসেছেন। দীর্ঘ ১৮ বছর কারাগারে বন্দি রয়েছেন ওই ভারতীয় নাগরিক। তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার কথা কয়েকদিনের মধ্যেই।

এর মাঝেই আব্দুল রহিমকে বাঁচাতে কেরালার মালয়ালি সম্প্রদায়ের মানুষেরা আইনি সহায়তা পাওয়ার চেষ্টা শুরু করে। আব্দুল রহিমের মুক্তির জন্য ২০২১ সালে তৈরি হয় আব্দুল রহিম লিগাল অ্যাকশন কমিটি। মৃত ওই কিশোরের পরিবারকেও ‘ব্লাড মানির’ বিষয়ে রাজি করানো হয়।

এর আগে আব্দুল রহিমের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আর্জি জানানো হলেও তা খারিজ হয়ে যায়। সৌদি‌ আরবের নিম্ন আদালতে (২০১৭ ও ২০২২ সালে) ওই মৃত্যুদণ্ডের সাজা- বহাল রাখা হয়।

‘দ্য টেলিগ্রাফে’ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সৌদি আরবে বসবাসকারী কেরালার ব্যবসায়ী আশরাফ ভেঙ্কট জানিয়েছেন, বেশ কয়েক বছর ক্ষমা করতে অস্বীকার করার পর দুর্ঘটনায় নিহত শিশুটির পরিবার দেড় কোটি রিয়ালের পরিবর্তে আব্দুল রহিমকে ওই সাজা থেকে অব্যহতি দিতে রাজি হন।

আশরাফ ভেঙ্কটের কথায়, ‘২০২৩ সালের ১৬ অক্টোবর ব্লাড মানির বিনিময়ে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার চুক্তিতে স্বাক্ষর করে পরিবারটি। এই লিখিত প্রতিশ্রুতির পরিপ্রেক্ষিতে ফাঁসির আদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হয়।’

ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ অনুমোদিত কেরালা মুসলিম কালচারাল সেন্টারের সৌদি ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক আশরাফ ভেঙ্কট সম্প্রতি বিজেপিসহ সমস্ত রাজনৈতিক দলের সহায়তায় অনুদান প্রচারের নেতৃত্ব দিতে কোঝিকোড়ে এসেছিলেন।

ভেঙ্কট বলেন, ‘রহিমের জীবন বাঁচানোর জন্য তৈরি কমিটিতে হিন্দু, মুসলিম এবং বিজেপি-সহ সমস্ত রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ আব্দুল রহিমকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন।’

তহবিলের প্রয়োজনীয় নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানোর খবর জানিয়ে শুক্রবার তিনি বলেন, ‘মুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় ৩৪ কোটি রুপির লক্ষ্যমাত্রায় আমরা পৌঁছে গেছি। দয়া করে আর অর্থ পাঠাবেন না। আমরা মোট ৩৪.৪৫ কোটি রুপি সংগ্রহ করেছি। তহবিলে আসা অতিরিক্ত অর্থ পরীক্ষা করা হবে এবং ভালো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হবে।’

তিনি বলেন, রহিমের মুক্তির জন্য ট্রাস্ট এখন রিয়াদে ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করবে যাতে ওই চুক্তির বিষয়ে আগানো যায়।

সূত্র: বিবিসি

(ঢাকাটাইমস/১৭এপ্রিল/এমআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :