স্ট্রোকের প্রবণতা বাড়ছে অল্প বয়সিদের, কখন সতর্ক হবেন

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৪ মে ২০২৪, ১৬:১৬ | প্রকাশিত : ০৪ মে ২০২৪, ১০:৩৪

স্ট্রোক সম্পূর্ণই মস্তিষ্কের রক্তনালির জটিলতাজনিত রোগ। মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণের ফলে অক্সিজেন সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটলে মস্তিষ্কের কোষগুলো যখন দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয় সে অবস্থাকে স্ট্রোক বলে। চিকিৎসকের মতে, ইদানীং অল্প বয়সিদের অর্থাৎ ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সিদের মধ্যে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের (স্ট্রোক) প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। অতিরিক্ত চিন্তা, দুশ্চিন্তা, হতাশা, মারাত্মক কাজের চাপ, অনাকাঙ্ক্ষিত নানা খবরের কারণে এ বয়সীদের মধ্যে এ রোগ দেখা দিচ্ছে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে অকালে ঝরে যেতে পারে বহু প্রাণ। কিন্তু সঠিক উপায়ে শরীরের যত্ন ও কয়েকটি নিয়ম পালন করলে স্ট্রোক থেকে দূরে থাকা যায়। চলুন জেনে আসি এ রোগ থেকে দূরে থাকতে কি কি করতে হবে।

স্ট্রোক সাধারণত দুই ধরনের। একটি, ইস্কেমিক স্ট্রোক (ধমনির ভেতরে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে, মস্তিষ্কে রক্ত যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়, ফলে সেই অংশটি মরে যায়), হ্যামারেজ স্ট্রোক (ধমনি ছিঁড়ে গিয়ে শরীরের ভেতরেই রক্তক্ষরণ হওয়া)। কোন ধরনের স্ট্রোক হয়েছে, তা বুঝতে প্রথমেই সিটি স্ক্যান করতে হয়। এর ওপর ভিত্তি করেই আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা শুরু হয়। কারণ, দুটি স্ট্রোকের চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পূর্ণ আলাদা।

অতিরিক্ত চিন্তা, দুশ্চিন্তা, হতাশা, মারাত্মক কাজের চাপ, অনাকাঙ্ক্ষিত নানা খবর ছাড়াও শারীরিক কসরত, না হাঁটা, বেশিক্ষণ বসে থাকা, স্বাস্থ্যকর খাবারের বদলে অনেক বেশি ফাস্ট ফুড বা জাঙ্ক ফুড নির্ভর হয়ে পড়া, সঠিক সময়ে খাবার না খাওয়া, পর্যাপ্ত সময় না ঘুমানোর কারণেও স্ট্রোকে আক্রান্ত হয় মানুষ। তা ছাড়া বাড়তে থাকা মানসিক চাপ, অনিয়ন্ত্রিত ধূমপান, মদ্যপান ও জিনগত কারণে কমবয়সিদের মধ্যে স্ট্রোকের প্রবণতা বাড়ছে।

এসব কারণে রক্তবাহের ভেতরের দেয়ালে কোলেস্টরল বা চর্বি জমে ধমনি সরু করে দেয়। যাকে মেডিকেলের পরিভাষায় বলা হয়, অ্যাক্রোস্কেলোরসিস। ইউরোপ, আমেরিকার বাসিন্দাদের মধ্যে এই প্রবণতা সাধারণত ৩৫ বছরের পর দেখা যায়। কিন্তু দক্ষিণ এশীয়দের মধ্যে ২৫ বছরের পরই এ প্রবণতা তৈরি হয়।

সাধারণত কোনো ইঙ্গিত দিয়ে স্ট্রোক হয় না। কেউ স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছে কিনা সেটি বোঝার কয়েকটি লক্ষণ রয়েছে। কারও স্ট্রোক হয়েছে কিনা বোঝার জন্য চিকিৎসা জগতে একটি সুন্দর ছয়অক্ষরের অ্যাক্রোনিম আছে— বিইএফএএসটি হলো, এখানে বি ফর ব্যালান্স, ই ফর আই, এফ ফর ফেস, এ ফর আর্মস, এস ফর স্পিচ এবং টি ফর টাইম। দেখতে হবে, কোনও রোগীর হাঁটতে গেলে ব্যালান্স বা ভারসাম্য চলে যাচ্ছে কি না, হঠাৎ একটা চোখের দৃষ্টি চলে যাচ্ছে কি না, মুখের একটা দিক বেঁকে যাচ্ছে কি না, একটা হাতের জোর চলে যাচ্ছে কি না, কথা বলার সময় জিভ জড়িয়ে যাচ্ছে কি না। যদি এগুলোর মধ্যে কোনও এক বা একাধিক লক্ষণ দেখা যায়, তা হলে একদম সময় নষ্ট না করে রোগীকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত। যাতে চিকিৎসকদের হাত থেকে গোল্ডেন টাইম বেরিয়ে না যায়। দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে পারলে অনেক ক্ষতি আটকানো সম্ভব হয়।

স্ট্রোক হলে সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে। যদি সময় লেগে যায় সে ক্ষেত্রে রোগীকে মাটিতে শুইয়ে, মাথাটা উঁচু করে রাখতে হবে। গলার কাছে চাপা পোশাক থাকলে তা আলগা করে দিতে হবে। আক্রান্ত হওয়ার সাড়ে ৪ ঘণ্টার মধ্যে থ্রম্বোসিস প্রক্রিয়ায় চিকিৎসা শুরু করে দিতে হবে।

যারা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের কিন্তু এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। চিকিৎসকদের মতে, ‘রক্তচাপ বেশি আছে, এমন রোগীদের কিন্তু এ বিষয়ে একটু বেশি সচেতন থাকতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে রক্তচাপে আক্রান্ত জেনেও চিকিৎসা না করানো, ঠিক মতো ওষুধ না খাওয়া, নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা না করানো এই সব অভ্যাস কিন্তু স্ট্রোকের ঝুঁকি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়।’

কোন কোন অভ্যাস স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ৮০ শতাংশ কমাতে পারে স্ট্রোকের ঝুঁকি। অতিরিক্ত লবণ, চিনি ও স্নেহপদার্থ যুক্ত খাবার বাড়ায় স্ট্রোকের আশঙ্কা। অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল ডেকে আনতে পারে বড় বিপদ। এই রোগের ঝুঁকি এড়াতে ‘জাঙ্ক ফুড’, বাইরের অতিরিক্ত মশলাদার ও খুব তেল দেওয়া খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার, প্যাকেটজাত খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়ায় অভ্যস্ত হয়ে উঠতে হবে।

শরীরচর্চার অভাব ও সারা দিন শুয়ে-বসে থাকা ডেকে আনে এই রোগ। অলস জীবনযাপনে বাড়ে ওজন। এক জায়গায় দীর্ঘ ক্ষণ বসে কাজ, শরীরচর্চা না করা ওবেসিটির সমস্যার অন্যতম কারণ। ওবেসিটি থেকেই স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।

ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাসও কিন্তু স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই এই অভ্যাসে রাশ টানাটা ভীষণ জরুরি।

বাড়িতে কারও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে কিংবা স্ট্রোক হওয়ার ইতিহাস থাকলেও কিন্তু এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তা ছাড়া মানসিক চাপ এড়াতে কাজ থেকে দুই তিন মাসের জন্য বিরতি নেওয়া জরুরি।

রোগীর যদি ডায়াবেটিস থাকে এবং বাড়িতে সুগার মাপার মেশিন থাকে, তা হলে ব্লাডসুগার চেক করে নিতে পারেন। অনেক সময়ে হাইপোগ্লাইসিমিয়া বা সুগার ফল করে যাওয়ার লক্ষণ কিন্তু হুবহু স্ট্রোকের মতোই হয়। সুগার লেভেল খুব নীচে থাকলে চিনির পানি ইত্যাদি খাওয়ানো যেতে পারে যদি রোগীর জ্ঞান থাকে, তার পর হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে বাকি চিকিৎসা। কিন্তু সুগার লেভেলে সমস্যা না থাকলে মুখে কোনও কিছুই দেওয়া যাবে না।

পরিবারের কারও স্ট্রোকের ইতিহাস থাকলে ২৫ বছর বয়সের পর থেকে নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার। ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়লে নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে। চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। সব মিলিয়ে স্ট্রোক থেকে বাঁচতে হলে কিন্তু জীবনযাত্রায় বদল আনতেই হবে। একটু সতর্ক হলেই কিন্তু আমরা এই রোগের ঝুঁকি অনেকটা কমিয়ে ফেলতে পারি।

(ঢাকাটাইমস/৪ মে/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :