সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমের মৃত্যু ঘিরে যেসব রহস্য
গত ১১ মে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার চিকিৎসার জন্য ভারত যান। বাংলাদেশের দর্শনা স্থলবন্দর দিয়ে তিনি দেশটিতে প্রবেশ করেন। এরপর দুই দিন পরিবার ও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। কিন্তু ১৪ মে হঠাৎ সবার সঙ্গে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। দেশটিতে তার দীর্ঘদিনের বন্ধু গোপাল বিশ্বাস উত্তর ২৪ পরগনা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর নড়েচড়ে বসে দেশটিতে বাংলাদেশ দূতাবাস ও সেখানকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাকে খুঁজে বের করতে বেশ কয়েকটি ইস্যু সামনে নিয়ে মাঠে নামেন গোয়েন্দারা।
নিখোঁজ হওয়ার পর নানা প্রশ্ন জাগে। সংসদ সদস্য আনোয়ারুল ভারতে গিয়ে সেখানকার নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করার কারণে গ্রেপ্তার হয়েছেন কি না, এ নিয়েও শুরু হয় নানান গুঞ্জন। আবার কারও দাবি, ব্যবসা-বাণিজ্যের শত্রুতার কারণেও অপহরণ করা হতে পারে।
সূত্র বলছে, আনোয়ারুল আজীম আনারের বিরুদ্ধে হুন্ডি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে। ঢাকা থেকে সড়কপথে ভারতে স্বর্ণ চোরাচালানের রুটও তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন বলে অভিযোগ আছে। বিশেষ করে ঢাকা বা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভারতে হুন্ডিতে টাকা পাঠানোর সিন্ডিকেটের একটি বড় ‘চেইন’ ঝিনাইদহে নিয়ন্ত্রিত হয়। অর্থাৎ ভারতের হুন্ডি সিন্ডিকেট যোগাযোগ করে ঝিনাইদহে। ঝিনাইদহ থেকে ভারতে নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে টাকা (ভারতীয় রুপি) পৌঁছে দেওয়ার মেসেজ পাঠানো হয়। এক্ষেত্রে দুই দেশের হুন্ডি সিন্ডিকেটের মধ্যে টাকা/রুপি অবৈধ লেনদেনের সময় একটি মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের বিরুদ্ধে। ওই সিন্ডিকেটই কৌশলে তাকে কলকাতা থেকে ডেকে নিয়ে অপহরণ করেছে বলে গোয়েন্দাদের ধারণা।
বুধবার পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তাকে হত্যা করা হয়েছে কি না সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। নিউটাউনের অভিজাত আবাসন সঞ্জীবা গার্ডেনে এই সংসদ সদস্য কীভাবে গেলেন তা নিয়েও চলছে তদন্ত। শোনা যাচ্ছে, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে দুইজনকে আটক করেছে দেশটির পুলিশ।
এক সময় ইন্টারপোলের ওয়ারেন্টভুক্ত আনোয়ারুল আজীম আনারের মৃত্যুর পেছনে আর্থিক কোনো বিরোধ থাকতে পারে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত শত্রুতা, নারী-সংক্রান্ত বিষয় ও সীমান্তকেন্দ্রিক কারবার নিয়ে বিরোধের জেরে কেউ তাকে জিম্মি করে হত্যা করেছে কি না– তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
জানা গেছে, কলকাতায় চিকিৎসা করাতে গিয়ে আনোয়ারুল আজীম পূর্ব পরিচয়ের সূত্রে বরাহনগর থানা এলাকার মণ্ডলপাড়া লেনের গোপাল বিশ্বাস নামে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর বাড়িতে উঠেন। গেদে সীমান্ত হয়ে গত ১২ মে সন্ধ্যা ৭টার দিকে পৌঁছান ওই পরিচিতের বাড়িতে। পরের দিন ডাক্তার দেখাতে বেরিয়ে যান ওই পরিচিতের বাড়ি থেকে। শেষবার বরাহনগর বিধানপার্ক এলাকার কলকাতা পাবলিক স্কুলের সামনে থেকে তাকে গাড়িতেও উঠতে দেখা যায়।
তবে নিউটাউন সঞ্জীবা গার্ডেনে কবে গেছেন, তিনি সেখানে অবস্থান করতে গিয়েছিলেন কি না- এসব নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা রয়েছে।
কোনো স্বর্ণ পাচারকারী চক্র জড়িত কি না সেই বিষয়ে ইতিমধ্যে তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।
আনোয়ারুল আজীম আনার ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য। তিনি ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে টানা তিনবার আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
(ঢাকাটাইমস/২২মে/এসএস/এফএ)