প্রধানমন্ত্রীর অনুদানের চেক হাওয়া, জানে না কেউ
প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া অনুদানের চেক হাওয়া হলেও কিছুই জানেন না সংশ্লিষ্টরা। উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসন ও মন্ত্রণালয় ঘুরেও হদিস পাওয়া যাচ্ছে না চেকটির। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তাহলে চেকটি গেল কোথায়।
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার বড় কাবলা গ্রামের আব্দুস সাত্তার মিয়া (৭০) সেই অনুদানের চেকটির সন্ধানে ঘুরতে ঘুরতে এখন হাঁপিয়ে উঠেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাত্তার মিয়া বয়সের ভারে চলাফেরা করতে কষ্ট হলেও জীবিকার তাগিদে লড়ে যাচ্ছেন। ঘরে তার একমাত্র স্ত্রী। তিনিও অন্ধ। রাতে ঘুমানোর মতো জায়গাও নেই। তার দুঃখ কষ্ট দেখে বদলগাছীর বাবলু নামে এক ব্যক্তি তার মেয়ের ঘরবাড়ি দেখাশোনার দায়িত্ব দেন। আশ্রয় হিসেবে সেখানেই থাকেন ওই দম্পতি। এর আগে করোনার সময় মাটি কাটার কাজ করতে গিয়ে চোখে বালি পড়ে এক চোখে সমস্যা দেখা দেয়। এরপর অপারেশন করলেও একটি চোখ অন্ধ হয়ে যায়।
ভুক্তভোগী আব্দুল সাত্তার মিয়া বলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে আর্থিক সাহায্য চেয়ে আবেদন করেন। যাচাই বাছাই শেষে তার আবেদন গ্রহণ করা হয় এবং গত বছর ২২ অক্টোবর পত্রের মাধ্যমে তাকে বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় অথবা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে অনুদানের চেক গ্রহণ করতে বলা হয়।
পত্র পাওয়ার পর তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে চেকটি সংগ্রহ করতে যান। কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজির পর অফিস থেকে ভুক্তভোগীকে জানানো হয়, এখানে আপনার চেক নেই। আপনি জেলা প্রশাসক অফিসে খোঁজ নিন।
এরপর জেলা প্রশাসক অফিসে গিয়ে খোঁজার পর জানানো হয় চেকটি অন্য কেউ নিয়ে গেছে। তবে চেকটি কে নিয়েছে? এমন প্রশ্নের উত্তর বারবার এড়িয়ে গেছেন ঐ অফিসের কর্মকর্তারা। সবশেষে ভুক্তভোগীকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে খোঁজ নিতে বলা হয়।
নিরুপায় হয়ে ভুক্তভোগী সাত্তার মিয়া ঢাকায় গিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম তরফদারের সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে গিয়ে উক্ত স্মারকের পত্রটি দেখান। পত্রটি দেখার পর এমপি সেলিম তরফদার তাকে সচিবালয়ে ৪নং গেটে যাওয়ার পরামর্শ দেন। অনেক ঘুরাঘুরি আর অনুরোধ করে সচিবালয়ে গিয়ে জানতে পারেন ঐ স্মারকের চেকটি নওগাঁ জেলা প্রশাসক অফিসে পাঠানো হয়েছে। ভুক্তভোগী আবার জেলা প্রশাসক অফিসে খোঁজ নিতে আসেন। কিন্তু তার চেকের কোনো সন্ধান পাননি। তাহলে চেকটি গেল কোথায়? ভুক্তভোগীর এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছে না কেউ।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের অফিস সহকারী একরামুল ইসলাম বলেন, ওই ব্যক্তি আমার অফিসে বারবার এসেছে। আমি বারবার খুঁজে দেখেছি। কিন্তু তার নামে চেক বা চিঠি কোনোটিই এখানে আসেনি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অ.দা.) মো. কামরুল হাসান সোহাগ বলেন, এমন হওয়ার তো কথা না। হয়ত কোনো কারণে আসেনি। ওই চেক অন্য কেউ ব্যবহারও করতে পারবে না। তারপরও আমরা খোঁজ নেব।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক গোলাম মওলা বলেন, এমনটা হওয়ার কথা না। আপনার কাছে কাগজপত্র থাকলে হোয়াটসঅ্যাপে দিন। তারপর তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(ঢাকাটাইমস/২২মে/প্রতিনিধি/পিএস)