ক্যানসার-ডায়াবেটিসসহ বহু জটিল রোগের মোক্ষম দাওয়াই আখের রস

ফিচার ও স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ২৭ মে ২০২৪, ০৮:২৪ | প্রকাশিত : ২৭ মে ২০২৪, ০৮:২১

চড়া রোদের দুপুরে আখের রসে চুমুক দিলেই প্রাণ জুড়িয়ে যায়। প্রাকৃতিক শক্তিবর্ধক এই পানীয় শরীরে প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। এটি এমন একটি পানীয়, যা ১০০ শতাংশ প্রাকৃতিক এবং এতে বিন্দুমাত্র ক্ষতিকারক উপাদান নেই। এই রস পান করলে শরীর ঠান্ডা থাকে এবং ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি কমে।

আখের রসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে। দেহের টক্সিন বের করে শরীরে শক্তি জোগায় এই সুস্বাদু পানীয়। আখের রসে প্রচুর ফাইবার এবং খনিজ রয়েছে, যা শরীরের নানা উপকার করে। এছাড়া ত্বকের অনেক সমস্যাও দূর হয়।

পানিশূন্যতা দূরীকরণে ও জন্ডিস রোগের মহৌষধ হিসেবেও কাজ করে আখের রস। ২৫০-৩০০ মিলিলিটার আখের রসে সাধারণত ১১১ ক্যালরি থাকে। এর মধ্যে কার্বোহাইড্রেট থাকে ২৭ গ্রাম, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাসিয়াম থাকে ০.২৭ গ্রাম। আখের রস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে এবং বহু রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা যোগায়। দেখে নিন যাদুকরী পানীয় আখের রসের সেসব উপকারিতা-

ক্যানসার প্রতিরোধ করে

জার্নাল অব ফাইটোকেমিস্ট্রি-তে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, আখের রসে বিদ্যমান ফ্লেভোনস দেহে ক্যানসারের কোষ বৃদ্ধি ও ছড়ানো প্রতিরোধ করতে বিশেষভাবে কার্যকরী। আখের রসে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ থাকে যা প্রোস্টেট ও স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক।

কিডনির সুস্থতা নিশ্চিত করে

আখের রস প্রাকৃতিক অ্যাল্কালাইন, যা অ্যান্টিবায়োটিক এজেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং কিডনির সুস্থতা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে। এছাড়া আখের রস পানের অভ্যাস কিডনিতে পাথর জমা, বুক জ্বালা পোড়া ধরনের সমস্যা এবং মূত্রনালীর ইনফেকশন প্রতিরোধ করে। সেই সঙ্গে কিডনির কার্যকারিতা বাড়ায়।

ওজন কমাতে

আখের রস মিষ্টি হলেও এই রস ওজন কমাতে সাহায্য করে। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। এমনকি কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।

হৃদরোগ উপশম

হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে এই রস। হার্ট অ্যাটাক রুখতেও সাহায্য করে। এমনকি শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের নিঃসরণ কমাতেও সাহায্য করে।

লিভার ভালো রাখে

লিভার ভালো রাখতে ও কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে আখের রস বেশ উপকারী। জন্ডিসের রোগীদের ক্ষেত্রেও আখের রস একটি প্রচলিত পথ্য। প্রস্রাবের সংক্রমণ-জনিত সমস্যায় ভুগলেও আখের রস খেলে উপকার পেতে পারেন।

দাঁত ও মাড়ির সমস্যা প্রতিরোধ

আখের রসের প্রাকৃতিক অ্যাল্কালাইন অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে, যা দাঁতের ক্ষয় বা মাড়ির ইনফেকশন প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে। এছাড়া আখের রস মুখের দুর্গন্ধ দূর করতেও বিশেষভাবে সহায়ক।

কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে

আখে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, যা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। ফাইবার নিয়ন্ত্রণে রাখে কোলেস্টেরলের সমস্যাকেও।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে

যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা আখের রস এড়িয়ে চলেন। আখের রস খেতে মিষ্টি হলেও এটি ডায়াবেটিসের পক্ষে খুবই কার্যকরি। এতে জিআই-এর পরিমাণ খুব কম থাকে। যার জন্য ডায়াবেটিস রোগীরা নিয়মিত এই আখ খেতেই পারেন।

বিভিন্ন গবেষণায় জানা গেছে, আখের মধ্যে আইসোম্যাল্টোজ নামক একটি উপাদান রয়েছে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। টাইপ-টু ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ করে নেমে গেলে আখের রস খেলে উপকার পেতে পারেন। হাইপোগ্লাইসিমিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের জন্যেও এই রস উপকারী।

চুলের যত্নে আখের রস

সাজগোজের অন্যতম অঙ্গ চুল। পাতলা চুল কিন্তু আপনার গোটা সাজটাই নষ্ট করে দিতে পারে। আখের রসে রয়েছে আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়ামের মতো স্বাস্থ্যকর নানা পুষ্টিগুণ, যা নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। ঘন চুল পেতে প্রতিদিন এক গ্লাস করে খেতে পারেন আখের রস।

ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া ঠেকায়

আখের রস ত্বককে এক্সফলিয়েট হতে সাহায্য করে এবং মরা চামড়ার জমার পরিমাণ কমায়। সুস্থ ত্বকের জন্য আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড অনেক উপকারী। এরা ব্রণ কমায়, ব্লেমিশ রোধ করে, ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া ঠেকায় এবং ত্বকে আর্দ্রতা বজায় রাখে। আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিডের মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর হলো গ্লাইকলিক অ্যাসিড এবং আখ তার একটি প্রাকৃতিক উৎস। ত্বকে শুধু আখের রস প্রয়োগ করুন অথবা ফেস মাস্কের সঙ্গে যোগ করুন।

ব্রণের সমস্যা দূর করে

আখের রসে থাকা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল যৌগ ত্বকের ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাক্টেরিয়াগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে। আখের মধ্যে থাকা আলফা-হাইড্রক্সি অ্যাসিড ত্বকের অতিরিক্ত সেবাম উৎপাদনের হার কমিয়ে দেয়। চিকিৎসকেরা বলেন, নিয়মিত আখের রস খেলে ব্রণর দাগ-ছোপও দূর করে।

ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে

এই রসে থাকা গ্লাইকোলিক অ্যাসিড, ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। খাওয়ার পাশাপাশি আখের রস মুখে মাখলেও উপকার পাওয়া যায়। জেল্লাহীন ত্বককে চকচকে করে তুলতে আখের রসে তুলো ভিজিয়ে মেখে রাখতে পারেন মিনিট দশেক।

মৃত কোষ দূর করে

আখের রসে প্রাকৃতিক ভাবে থাকা আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড্‌স (এএইচএএস) ত্বকের উপর থেকে ধুলো-ময়লার পরত সরিয়ে ফেলতেও সাহায্য করে। আখের রস দিয়ে নিয়মিত এক্সফোলিয়েট করলে ত্বক ভিতর থেকে জেল্লাদার হয়ে ওঠে।

নিরাপদ গর্ভধারণ নিশ্চিত করতে

আখের রস গর্ভবতী নারীদের খাদ্য তালিকায় যুক্ত করলে উপকার লাভ করা যায়। এটি গর্ভধারণে সাহায্য ও নিরাপদ গর্ভাবস্থা নিশ্চিত করে। আখের রসে প্রচুর ফলিক এসিড বা ভিটামিন বি ৯ থাকে, যা স্পিনা বিফিডা’র মতো জন্মগত ত্রুটি থেকে সুরক্ষা দেয়। আখের রস নারীর ডিম্বস্ফুটনের সমস্যা কমায় এবং গর্ভধারণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে।

ইনস্ট্যান্ট এনার্জি বুস্টার

আখের রস এনার্জি ড্রিংক হিসেবে কাজ করে। এতে প্রচুর পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, আয়রন, পটাসিয়াম এবং অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান আছে, যা তাৎক্ষণিক শক্তির সঞ্চয় ও তৃষ্ণা নিবারণের খুব ভালো উৎস। এই রসে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্লুকোজ। এই গ্লুকোজ মুহূর্তেই মানব দেহ রিহাইড্রেট করে চাঙা করে তোলে।

বিলিরুবিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে

আখের রসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সংক্রমণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং ইমিউন সিস্টেমকে উন্নত করে। এছাড়া লিভারে সংক্রমণ হওয়া রক্ষা করে এবং বিলিরুবিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এটা যকৃতের উপর অত্যধিক চাপ ছাড়াই হজম হয় এবং বিলিরুবিন মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য রক্ষা করে

আখের রস ক্ষারীয় প্রকৃতির হওয়ায় শরীরের ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য রক্ষা করায় সাহায্য করে। জন্ডিসে আক্রান্ত হলে প্রতিদিন দুই বেলা আখের রস পান করুন। আখের রস যকৃত শক্তিশালী করতে এবং জন্ডিস প্রতিকারে সাহায্য করে।

বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধেও সক্ষম

আখের রস বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধেও সক্ষম। গর্ভবতী মায়েদের জন্য আখের রস খুবই উপকারী। স্পার্ম কাউন্ট বৃদ্ধি করতেও এটি ভূমিকা নেয়। নারী ও পুরুষ, উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রজননের নানা সমস্যার সমাধানে বেশ কার্যকরী আখের রস।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরুষদের বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়াতে আখের রস বেশ উপযোগী। মহিলাদের নির্ঝঞ্ঝাট ভাবে সন্তান প্রসবেও সহায়তা করে আখের রস। স্তনদুগ্ধ নিঃসরণেও আখের রস সহায় হয় বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

(ঢাকাটাইমস/২৭মে/এজে)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :