বাস্তবভিত্তিক ও ব্যবসাবান্ধব বাজেটের জন্য একগুচ্ছ পরামর্শ

এমন একটা সময় বাজেট দিচ্ছে সরকার যখন দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। আমি মনে করি, পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা খুব ভারসাম্যহীন অবস্থায় রয়েছে। এর কারণ হলো মূল্যস্ফীতি বাড়ছেই পাশাপাশি আরও আনুষঙ্গিক বিষয় যেমন রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। সুদের হার বেড়ে যাচ্ছে।
সরকার যে রাজস্ব আদায় করবে; করের বিশাল একটি লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে। কিন্তু কোথা থেকে কর আদায় করবে? লোকের যদি আয়ের সংস্থান না থাকে কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্যের যদি প্রসার না করে তাহলে কর কিভাবে পাবে? তাই ব্যয় সাশ্রয়ী করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বাদ দিতে হবে। প্রশাসনের ব্যয় কমাতে হবে। আবার কতগুলো ভৌত অবকাঠামো করবে। এগুলোর কী প্রয়োজন? কিছু মৌলিক ভৌত অবকাঠামো ছাড়া কিছু করা উচিত নয়। ডাক্তাররা হাসপাতাল বানিয়ে রেখেছে। স্কুল বানিয়ে রেখেছে। কিন্তু পড়াশোনার উপকরণ নেই। এগুলো তৈরি করে লাভ কী? এটা অদ্ভুত ব্যাপার।
বর্তমান সরকারের বাজেট হতে হবে ব্যবসাবান্ধব। কয়েকটি জায়গায় অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে। পূর্বে এমন অনেক কিছু বাস্তবায়ন করেনি এবং জনগণের উপকারও হয়নি। বড় বড় ব্যবসায়ী ছাড়া কারও কোনো উপকার নিয়ে আসেনি পূর্বের বাজেটগুলো। তাই বৃহৎ শিল্পের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কারণ, তারাই কর পরিশোধ করবে। এছাড়াও রেমিট্যান্স বাড়াতে হবে।
অভ্যন্তরীণ এবং বৈদশিক ঋণ বাড়ছে। এ থেকে উত্তরণ ঘটাতে হবে। এজন্য শিল্প, ব্যবসা ও বাণিজ্যের প্রসার করতে হবে। বড় বড় কয়েকটি শিল্প ছাড়া আমাদের আর শিল্প নেই। বাকিগুলো মূলত অনানুষ্ঠানিক শিল্পের খাতে পড়ে। যদি শিল্প, ব্যবসা ও বাণিজ্যের উন্নতি না হয় তাহলে সরকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর আদায় করবে কিভাবে? এছাড়া এক কোটি লোক ট্যাক্স দেয়, বাকিরা দেয় না। এমনকি এক কোটি লোকের মধ্যেও সবাই ট্যাক্স দেয় না। আংশিক ট্যাক্স দিয়ে থাকে। এর দায়িত্বে রয়েছে এনবিআর। কিন্তু এনবিআরের অনেক গাফিলতি এবং দুর্বলতা রয়েছে, যা দূর করতে হবে। জাতীয় সঞ্চয় বাড়াতে হবে।
উচ্চ মূল্যস্ফীতি অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় রয়েছে। এজন্য সরবরাহ বাড়াতে হবে। শুধু চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করলেই চলবে না। আমরা অনেক পণ্য আমদানি করে থাকি। তাই টাকার অবমূল্যায়ন রোধ করতে হবে। কারণ এগুলো একটার সঙ্গে অন্যটি সম্পর্কিত। ভোক্তা সংরক্ষণ আইন রয়েছে। যারা বাজারে গিয়ে জরিমানা করে। এটি করে কী লাভ? কারণ, বাজারে কারসাজি রয়েছে। রাস্তাঘাটে চাঁদাবাজির কারণে গ্রামের লেবু ঢাকায় এসে দাম বেড়ে যাচ্ছে। এভাবে নানাবিধ কারণে মূল্য বেড়ে যাচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। সার্বিকভাবে সুশাসনের অভাব, ব্যবস্থাপনার অভাব, দক্ষতার অভাব। যাদের কাজ করার কথা তারা ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করছে না। সততার পাশাপাশি সামর্থ্যও নেই।
জিডিপির প্রবৃদ্ধির ধারা বর্তমান অর্থবছরে কমেছে। গোঁজামিল দিয়ে জিডিপি বাড়িয়ে লাভও নেই। বাজেট বাস্তবভিত্তিক হতে হবে। মানুষের জীবনযাত্রার মান বাড়ানোতে মনোযোগী হতে হবে। সার্বিক উন্নয়নে সরকারের দৃষ্টি রাখতে হবে।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর

মন্তব্য করুন