বরগুনা ট্র্যাজেডি: তদন্তে পৃথক কমিটি গঠন, নিহতদের দাফন সম্পন্ন

বরগুনার আমতলীতে সেতু ভেঙ্গে কনে যাত্রীবাহী মাইক্রোবাস খালে পড়ে নয়জন নিহতের ঘটনায় পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
শনিবার রাতে জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কমিটিগুলো গঠন করেছে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অনিমেষ বিশ্বাসকে প্রধান করে ছয় সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। কমিটিতে সদস্য সচিব করা হয় আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলমকে। কমিটির অন্য সদস্য হলেন এলজিইডি বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো.মেহেদি হাসান খাঁন, সহকারী পুলিশ সুপার (আমতলী সার্কেল) রুহুল আমিন, বিআরটিএর সহকারী পরিচালক মাহফুজ আহমেদ ও ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স বরগুনার উপ-সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গির আলম।
এ কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কমিটির প্রধান ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অনিমেষ বিশ্বাস ঢাকা টাইমসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে শনিবার (২২ জুন) স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. আলী আখতার হোসেন স্বাক্ষতির চিঠির মাধ্যমে পটুয়াখালীর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মহির উদ্দিন শেখকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন-এলজিইডির বরিশাল অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী নূর উস-সাম ও বরগুনার সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান।
এ কমিটিকেও সাত কার্যদিবসের মধ্যে অনুসন্ধানপূর্বক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো.মেহেদি হাসান খাঁন ঢাকা টাইমসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, শনিবার দুপুরে দুর্ঘটনায় পতিত মাইক্রোবাসটি উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার রাতে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা এ উদ্ধার কাজ পরিচালনা করে।
জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান বরগুনা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অনিমেশ বিশ্বাস বলেন, ‘তদন্ত কাজ শুরু করেছি। রবিবার আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে সভা শেষে সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে।’
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাত কার্যদিবসের মধ্যে তাদের অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। প্রতিবেদনের আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, আমতলী উপজেলা কাউনিয়া ইব্রাহিম একাডেমি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া গ্রামের মাসুম বিল্লাহ মনিরের মেয়ে মরিয়ম বিল্লাহ হুমায়রার সঙ্গে একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আমতলী পৌর শহরের খোন্তাকাটা এলাকার বাসিন্দা সেলিম মাহমুদের ছেলে ডা. সোহাগের বিয়ে হয়। গত শুক্রবার (২১ জুন) কনেকে বরের বাড়ি তুলে নেন।
শনিবার মেয়ের পক্ষের লোকজন বরের বাড়িতে মাইক্রোবাস এবং অটোগাড়িতে চড়ে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে হলদিয়া হাট সেতু পার হওয়ার সময় সেতুর মাঝের অংশ ভেঙ্গে মাইক্রোবাস ও অটোরিকশাটি খালে পড়ে তলিয়ে যায়। অটোতে থাকা যাত্রীরা সকলে সাঁতরে কিনারে উঠতে পারলেও মাইক্রোবাসের যাত্রীরা পানিতে তলিয়ে যায়। এ ঘটনায় মাইক্রোবাসে থাকা কনে পক্ষের ৯ যাত্রী নিহত হন। নিহত ৯ জনের মধ্যে ৭ জনই হলেন শিবচর উপজেলার ভদ্রাসন ইউনিয়নের সাহাপাড়া এলাকার সাবেক সেনা সদস্য মাহাবুবুর রহমান সবুজের পরিবারের সদস্য।
নিহতেরা হলেন, সাবেক সেনা সদস্য মাহাবুবুর রহমান সবুজের ভাই সোহেলের স্ত্রী রাইতি (৩০), শাশুড়ি রুমি বেগম (৪০), মাহাবুবের মা ফরিদা বেগম (৬০), মামী মুন্নি বেগম (৪০), তার সন্তান তাহিয়া (৭), তাসদিয়া (১১), আরেক মামী ফাতেমা বেগম (৪০)। এ ছাড়া আমতলীর দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া জহিরুল ইসলামের স্ত্রী জাকিয়া এবং কন্যা রিদি (৫)।
এদিকে উদ্ধার কার্যক্রম ও আইনি প্রক্রিয়া শেষে রবিবার সকালে নিহতদের দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়।
(ঢাকাটাইমস/২৩জুন/পিএস)

মন্তব্য করুন