বর্ষায় ভেষজ আদা চা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৩ জুলাই ২০২৪, ০৯:০৫| আপডেট : ০৩ জুলাই ২০২৪, ০৯:০৯
অ- অ+

চলছে বর্ষাকাল। বর্ষায় গরম থেকে কিছুটা স্বস্তি মিললেও দেখা দেয় নানান রকমের রোগ। টাইফয়েড, ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার মতো পানি ও মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়াও ত্বকের সমস্যা ও পরিপাক তন্ত্রের সমস্যাও দেখা দেয়। সুস্থ থাকতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, বিশুদ্ধ পানি পান করা, রাস্তার খাবার এড়িয়ে চলা, মশা নিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। তবে বর্ষায় ভেষজ আদা চা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সবকিছু থেকে মুক্তি দেয় ভেষজ আদা চা। কারণ আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে বহু শতাব্দী ধরে আদাকে স্বাস্থ্যকর ও বহু গুণসমৃদ্ধ ভেষজ হিসেবে ধরা হয়। আদার মধ্যে রয়েছে ব্যাকটেরিয়ারোধী, ভাইরাসরোধী, প্রদাহরোধী উপাদান। আদার অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে। এটি ভিটামিন এ, সি, ই এবং বি-কমপ্লেক্সের ভাল উৎস। আদা হজম পদ্ধতি ভালো করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, লিভার পরিষ্কার রাখে, অ্যাজমা ও হৃদরোগ প্রতিরোধে কাজ করে। আয়ুর্বেদিক ভেষজ আদার মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, জিঙ্ক, কপারের মতো খনিজ উপাদানের পাশাপাশি শক্তি, ফাইবার, প্রোটিনের মতো অনেক পুষ্টি উপাদান। এছাড়াও আদা হল ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন কে, ভিটামিন ই এর প্রধান উৎস। চলুন জেনে নেওয়া যাক, বর্ষায় সুস্থ থাকতে আদার চা পান করলে যেসব স্বাস্থ্য উপকারিতা বেশি করে পাবেন-

ব্লাড সুগার কমায়​

গবেষণায় দেখা গেছে, শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমাতেও অত্যন্ত কার্যকরী আদা চা। এই চা খেলে দেহের ফ্যাট দ্রুত ভেঙে যায়। এমনকি শরীরে নতুন করে ফ্যাট জমতেও বাধা দেয় এই পানীয়। তাই ওজন কমাতে চাইলে এই চা হতে পারে আপনার নিত্যসঙ্গী। এদিকে টাইপ ২ ডায়াবিটিসে আক্রান্তদের জন্যও এই চায়ের কোনও বিকল্প নেই। আদা চা দেহে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে। এই কারণে তিন মাসের গড় সুগার বা এইচবিএ১সি স্কোর অনেকটাই কমে।

ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকরী

ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর জীবনে কষ্টের সীমা থাকে না। রোগীর পাশাপাশি ভুগতে হয় পরিবারকেও। তাই যেনতেন প্রকারেণ ক্যানসার প্রতিরোধ করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। এই কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে আদা চা। সাতটি গবেষণায় দেখা গেছে, আদায় থাকা জিজ্ঞেরল ও শ্যাগল নামক দুটি উপাদান ক্যানসার কোষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এমনকি দেহ থেকে মৃত কোষকে বের করে দিতেও সাহায্য করে এই দুই উপাদান। ফলে ক্যানসার প্রতিরোধ করতে অনেকটাই সুবিধা হয়।

রিফ্রেশ করতে সাহায্য করে

সারাদিন রাস্তায় বাদুরঝোলা হয়ে অফিস সামলে যখন বাড়ি ফেরেন, আপনার মন মাথা শরীর কিছুই তো সতেজ থাকে না। এক কাপ আদা চা তো খেতেই পারেন। এর যে গন্ধ থাকে, তা আপনাকে অনেকটাই রিফ্রেশ করে দেবে। আস্তে আস্তে আবার চনমনে হয়ে যাবেন আপনি।

শরীরের ব্যথা কমায়

বর্তমানে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ব্যথায় আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়। বিশেষত, মহিলাদের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ বেশি। জানলে অবাক হয়ে যাবেন, সামান্য আদা চা খেলেই কিন্তু ব্যথা অনেকটাই কমে যায়। আদায় রয়েছে জিঞ্জেরল নামক একটি উপাদান। এই উপাদান ব্যথা কমানোর পাশাপাশি প্রদাহনাশ করতেও সাহায্য করে। তাই যারা ব্যথার সমস্যায় ভুগছেন, তারা নিয়মিত আদা চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিতেই পারেন।

মস্তিষ্কের বন্ধু​

বর্তমানে একটু বয়স হলেই অনেকে ডিজেনারেটিভ ডিজিজে ভুগতে থাকেন। মূলত অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও প্রদাহজনিত কারণে অ্যালঝাইমার্সের মতো অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। এই অসুখে আক্রান্ত রোগী সব কিছু ভুলতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে এনাদের পক্ষে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অতিবাহিত করাও কঠিন হয়ে যায়। আদা চা মস্তিষ্কের ডিজেনারেশন রোধ করতে পারে। ফলে এই ধরনের রোগব্যাধি থাকে দূরে।

ব্লাড প্রেশার কমাতে সিদ্ধহস্ত​

দিনে এক থেকে দুই কাপ আদা চা প্রত্যেকেরই খাওয়া উচিত। এতে একাধিক উপকার মেলে। বিশেষত, ব্লাড প্রেশারের সমস্যায় ভুক্তভোগীরা অবশ্যই আদা চা খান। নিয়মিত আদা চা পান করা ব্যক্তিদের ব্লাড প্রেশার সহজেই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এমনকি রক্তে কমে কোলেস্টেরলের মাত্রা। এই কারণে আদা চা হার্ট সুস্থ রাখার কাজেও ধন্বন্তরির মতো কাজ করে। তাই হার্টের রোগে আক্রান্ত হতে না চাইলেও আদা চা নিয়মিত খেতেই পারেন।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

আদায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। সহজে যে কোনো রোগের ভাইরাস আক্রমণ করতে পারে না আপনাকে। আর এই বর্ষায় যখন ঠান্ডা লেগে আপনি জেরবার, সর্দি কাশি আপনাকে ছেড়ে যাচ্ছেই না, তখন অবশ্যই আপনাকে খেতে হবে আদা চা। দেখবেন আলাদা করে আর ওষুধ লাগছে না আপনার।

বমি ভাব থেকে রেহাই দেয়

আপনার কি বমি বমি পায়, বা গা গুলোতে থাকে কখনো কখনো? চুমুক দিন আদা চা-এ। আদা চা-এর গন্ধে আপনার এই সমস্যা আর থাকবে না। কোথাও বেড়াতে যাওয়ার আগে তাই আদা চা খেয়ে বেরোতেই পারেন। সফরজুড়ে আর কোনো সমস্যা থাকবে না তা হলে।

হজমের সমস্যা মেটায়

গ্যাস-অম্বলের সমস্যা রোজনামচা? আদা চা আপনার বন্ধু হলে উপকার আপনারই। আমাদের অন্ত্রের যেকোনো সমস্যায় আদার রস অনেক ক্ষেত্রেই সুস্থ সমাধান দেয়। তাই আদা চা খান, পেটে থাকা গ্যাস আপনাকে বিদায় জানাতে বাধ্য হবেই। হজম হবে সহজেই।

হার্ট সুরক্ষিত রাখে

আদায় থাকা মিনারেল আর অ্যামিনো অ্যাসিড শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে। তাই আপনার হৃদপিণ্ডও সুরক্ষিত থাকে। কাজেই আদা চা খেলে আপনার হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকের সমস্যার সম্ভাবনা কমে যায় অনেকটাই।

পিরিয়ডসের পেট ব্যথা কমায়

মহিলাদের ক্ষেত্রে পিরিয়ডসের সময়ে পেটে ব্যথা খুব চেনা বিষয়। কিন্তু এ সময়ে আদা চা যে আপনার প্রদাহ কমাতে পারে জানতেন কি? আদায় থাকা অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি গুণ আপনার পেট ব্যথা অনেকটাই কমিয়ে দেয়। আর গরম চা যখন আপনি খাচ্ছেন, স্বাভাবিকভাবেই সেটা ব্যথার আরাম দিচ্ছে।

কোলেস্টরল কম রাখে ও ওজন কমায়

স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি ব্রিটিশ জার্নাল বলছে, আদা শরীরের ব্লাড সুগার আর কোলেস্টরল কম রাখতে সাহায্য করে। যেহেতু আপনার কোলেস্টরল কম থাকছে, সুগারও থাকছে নিয়ন্ত্রণে, তাই স্বাভাবিকভাবেই আপনার ওজনও থাকবে নিয়ন্ত্রণে। তাই রোগা হওয়ার সহজ উপায় হিসেবে আপনি আদা চা বেছে নিতেই পারেন।

(ঢাকাটাইমস/৩ জুলাই/আরজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
এক মোটরসাইকেলে যাচ্ছিল ৪ বন্ধু, ট্রাক চাপায় প্রাণ গেল দুজনের
ভারতের সামরিক অভিযানের দ্রুত, দৃঢ় ও কঠোর জবাব দেওয়া হবে: পাকিস্তানের সেনাপ্রধান
সুনামগঞ্জে কোটি টাকা মূল্যের ভারতীয় ৯০টি গরুসহ নৌকা জব্দ 
সাবেক আইজিপি মোদাব্বির হোসেন চৌধুরীর ইন্তেকাল 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা