ক্ষমতা হস্তান্তরের রূপরেখা দিলো রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ সরকারের পদত্যাগের যে এক দফা দাবি জানয়েছেন সে প্রেক্ষিতে ক্ষমতা হস্তান্তরের রূপরেখা দিয়েছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।
রবিবার বেলা ১২টায় রাজধানীর তোপখানা রোডস্থ মেহেরবা প্লাজায় দলের প্রধান কার্যালয়ে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই রূপরেখা উত্থাপন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন দলের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম, অর্থনৈতিক সমন্বয়ক দিদারুল ভূঁইয়া, জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য হাবিবুর রহমান রিজু প্রমুখ।
হাসনাত কাইয়ূম বলেন, ১৬ই জুলাই ২০২৪ তারিখ থেকে দেশব্যাপী সাধারণ শিক্ষার্থী ও জনগণের ওপর বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন এক হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে। রাষ্ট্রের সম্মিলিত সশস্ত্র বাহিনী ও সরকারী দলের সন্ত্রাসীদের বহুমুখী আক্রমণের মুখেও শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধ গড়ে তুলে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষও আজ তাদের সকল সামর্থ্য নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতি গণঅভ্যুত্থানের এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। শহীদ আবু সাঈদসহ শত শহীদের রক্তের বিনিময়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন আজ পুরো বাংলাদেশ রাষ্ট্রেরই সংস্কার আন্দোলনে পরিণত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অতীতে ছাত্রদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গণঅভ্যুত্থানের ফলাফল সবসময় বেহাত হয়ে গিয়েছিল। এইবার আমরা তা অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিহত করব। শত শত শহীদের রক্তের দায় আমাদেরকে মেটাতেই হবে।
লিখিত বক্তব্যে দিদারুল ভুঁইয়া বলেন, গতকাল (৩ আগস্ট) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের জাতীয় রূপরেখা নির্মাণের যে ঘোষণা দিয়েছে তারই প্রেক্ষাপটে আমরা এই রূপরেখা তাদের কাছে এবং একইসাথে আন্দোলনরত সব দল, সংগঠন, ব্যক্তিসহ বাংলাদেশের সব নাগরিকের কাছে উত্থাপন করছি।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে সংবিধানের ৫৭ (১)(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব গ্রহণের ১০ দিনের মধ্যে আন্দোলনকারী সকল শক্তির সাথে আলাপের ভিত্তিতে সর্বজন গ্রহণযোগ্য কিছু ব্যক্তির নামের তালিকা প্রস্তুত করবেন। সংক্ষিপ্ত তালিকার মধ্য থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিগণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান মনোনীত করবেন এবং রাষ্ট্রপতি তাকে নিয়োগ দেবেন।
হাবিবুর রহমান রিজু বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চলমান আন্দোলনে জনগণের মধ্যে দানা বাঁধা ‘রাষ্ট্র সংস্কারের আকাঙ্ক্ষাকে’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট সংস্কারের প্রস্তাব তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাস্কফোর্স গঠন এবং গণ-আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। এবং উত্থাপিত প্রস্তাবসমূহের সমন্বয়ে ‘সংবিধান সংস্কারের ফ্রেমওয়ার্ক’ তৈরি করবেন। পরবর্তী নির্বাচিত সরকার যাতে সেই ফ্রেমওয়ার্ক বাস্তবায়ন করতে বাধ্য থাকে তার ব্যবস্থা করবেন। শেষে সংবিধান সংস্কার এবং সরকার গঠনের জন্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করবেন এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
এসময় রাজনৈতিক সমন্বয়ক ফরিদুল হক, মিডিয়া ও প্রচার সমন্বয়ক সৈয়দ হাসিবউদ্দিন হোসেন, সাংগঠনিক সমন্বয়ক ইমরান ইমন, জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আবদুল জলিল, ঢাকা জেলা সমন্বয়ক শাহাবুদ্দিন কবিরাজ লিটন, রাষ্ট্র সংস্কার যুব আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক মাশকুর রাতুল, রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক আহমেদ ইসহাক রাষ্ট্র সংস্কার শ্রমিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
(ঢাকাটাইমস/৪আগস্ট/এমআই/ইএস)