সারাদেশে মন্দির পাহারায় চরমোনাই পীরের কর্মীরা

শাহনূর শাহীন, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০৭ আগস্ট ২০২৪, ০২:২৪| আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২৪, ০৩:২১
অ- অ+

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সারাদেশে মেতে উঠেছে বিজয় উল্লাসে। সবাই যখন আনন্দে আত্মহারা এই সময়ে দুষ্কৃতিকারী, ষড়যন্ত্রকারী ও সুযোগ সন্ধানী মহল সারাদেশে অরাজকতা রাষ্ট্রীয় সম্পদক ধ্বংস, লুটপাট ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধ্বংসের চেষ্টা করছে।

এ অবস্থায় সারাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পাহারা বসিয়েছে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও দলের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র ও যুব আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাকর্মীরা। এছাড়া দেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণেও কাজ করছে চরমোনাই পীরের অনুসারীরা। করছেন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষার কাজও।

মঙ্গলবার সকাল থেকে সারাদিন দেশের বিভিন্ন জেলায় ইসলামী আন্দোলন এবং ইসলামী ছাত্র ও যুব আন্দোলনের নেতাকর্মীদের দেখা গেছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপসনালয়ে পাহারা বসিয়েছে। নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় সংখ্যালঘুদের উপাসনালয় পাহারারত দেখা গেছে ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের।

নারায়ণগঞ্জে মন্দির পাহারায় ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা

স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী ষড়যন্ত্র ও সুযোগ সন্ধানীদের হাত থেকে ধর্মী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা সুরক্ষায় তারা মাঠে নেমেছেন। তারা বলছেন, বাংলাদেশ ধর্মীয় সম্প্রতির দেশ। এখানে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ভাই ভাই। সাবাই বাংলাদেশি নাগরিক। সমান নিরাপদে বাঁচার অধিকার আছে। সংখ্যাগুরু হিসেবে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তাদের দায়িত্ব।

শরীয়তপুরের সংবাদ প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন জেলার মন্দিরে মন্দিরে জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে নিজেদের উদ্যোগে নিরাপত্তার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কর্মীরা। জেলার ছয়টি উপজেলায় মানুষের জানমাল রক্ষায় নিজস্ব ট্রাফিকেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে দলের পক্ষ থেকে।

মঙ্গলবার রাতে দিকে আংগারিয়া মাধব মন্দির ও কালী মন্দিরসহ বিভিন্ন মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সদস্যরা প্রধান গেটে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। সংগঠনের ইউনিফর্মধারী সদস্যরা এই নিরাপত্তা দিচ্ছেন।

শরীয়তপুরের আংগারিয়ায় কালী মন্দির পাহারা

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ শরীয়তপুর জেলা শাখার সভাপতি মুফতি তোফায়েল আহমেদ কাসেমী বলেন, ‘জেলার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সব মন্দির পাহারা দেওয়া হচ্ছে। আমরা বাঙালি সবাই ভাই ভাই। দেশের এই মুহূর্তে কোনো মহল সংখ্যালঘুদের বাড়িতে কিংবা মন্দিরে যাতে হামলা করতে না পারে, সে জন্য আমরা জেলার প্রতিটি মন্দিরে রায় বসেছি।

এছাড়া জেলার ছয়টি উপজেলায় আমাদের সদস্যরা জানমাল রক্ষায় নিজস্ব ট্রাফিকের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তারা এ দায়িত্ব পালন করে যাবেন বলেও জানান তিনি।

চট্টগ্রামের সব থেকে বড় মন্দির ও আশ্রম কৈবল্যধাম মন্দির পাহারা

চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় মন্দির ও আশ্রম কৈবল্যধাম মন্দির পাহারার দায়িত্বে রয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আকবর শাহ থানা শাখার দায়িত্বশীল নেতাকর্মীরা।

এছাড়াও গাজীপুরেও দেখা গেছে মন্দিরসহ সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পাহারার দায়িত্ব পালন করছেন দলটির নেতাকর্মীরা।

আমাদের সংবাদ কর্মীরা জানান, মঙ্গলবার সকালে গাজীপুর মহানগরীর কালীমন্দির, শিববাড়ি মন্দিরে ইসলামী আন্দোলনের সদস্যদের সংগঠনের ইউনিফর্ম পরে ফটকে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।

সংগঠনের গাজীপুর সদর মেট্রো থানার সভাপতি ও গাজীপুর মহানগর কমিটির প্রচার ও দাওয়া বিষয়ক সম্পাদক এস এম ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দলের আমির মুফতী সৈয়দ রেজাউল করীমের নির্দেশে সারা বাংলাদেশে জাতীয় সম্পদ রক্ষা ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দির ও উপসনালয় পাহারা দেওয়া হচ্ছে।

ওয়াহিদুল আরও বলেন, ‘আমরা বাঙালি, সবাই ভাই ভাই। দেশের এই মুহূর্তে কোনো মহল হিন্দুদের বাড়িতে কিংবা মন্দিরে যাতে হামলা করতে না পারে, সেজন্য আমরা পাহারায় বসেছি।’

গাজীপুরের শিব মন্দির

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমদ বলেন, ‘ইসলাম ধর্মে সবার শান্তি ও নিরাপত্তার কথা বলা হয়েছে। আমাদের ধর্ম আমাদেরকে নৈতিকতা শিখিয়েছে। আমাদের রাজনীতি, আমাদের সামাজিক কর্মসূচি; যা কিছু আছে সব কিছুর উদ্দেশ্য দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি। এটা করতে হলে দেশের নাগরিকদের কোনো অংশকে বাদ দিয়ে কিংবা নির্যাতন করে সম্ভব হবে না। আমাদের সংখ্যালঘু ভাইরাও এদেশের নাগরিক। তাদেরও শান্তির সাথে বাঁচার এবং জীবনধারনের সমান অধিকার রয়েছে। এখন যেহেতু দেশে একটা ক্রান্তিকাল চলছে, প্রশাসনিক শূন্যতা চলছে, সেহেতু আমাদের মুহতারাম আমিরের নির্দেশে আমরা সারাদেশে আমাদের কর্মী সমর্থকদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত করেছি।’

অধ্যক্ষ ইউনুছ বলেন, ‘সংখ্যাগুরু হিসেবে তাদের (সংখ্যালঘুদের) পূর্ণ সুরক্ষা নিশ্চিত করা আমরা আমাদের গুরু দায়িত্ব মনে করি।’

চাঁদপুরে হিন্দু পুরোহিতদের সঙ্গে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা

এ বিষয়ে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক ইউসুফ পিয়াস বলেন, ‘মুহতারাম পীর সাহেব হুজুরের নির্দেশনায় আমরা ইসলামী আন্দোলন, ছাত্র আন্দোলন এবং যুব আন্দোলনের কর্মীরা সারাদেশে মন্দির সুরক্ষায় সতর্ক অবস্থান নিয়েছি। আমরা চাই না কোনো দুষ্কৃতিকারী দেশের এই ক্রান্তিকালে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের সুযোগ পাক। আমরা সবাই এই স্বাধীন বাংলাদেশের, নতুন বাংলাদেশের মুক্ত নাগরিক। আমাদের সংখ্যালঘু ভাইদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এই মুহূর্তে আমাদের দায়িত্ব।’

পল্টনে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের এক কর্মী(ঢাকাটাইমস/০৬আগস্ট/এসআইএস)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
পুশ ইন ঠেকাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার বিজিবির
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দলীয়করণ করা হবে না: আমিনুল হক 
বেগমগঞ্জে ট্রাক-সিএনজি সংঘর্ষে মা-মেয়ে নিহত, বাবা আহত
আ.লীগ নিষিদ্ধে দ্রুত সিদ্ধান্ত না এলে ফের ‘মার্চ টু ঢাকা’:  নাহিদ ইসলাম
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা