ইনু মেনন পলক ও মামুনকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে প্রেরণ
কয়েক দফা রিমান্ড শেষে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন, সাবেক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এদিন হাসানুল হক ইনুকে তিন দফায় ১৬ দিন, মেননকে দুই দফায় ১১ দিন, পলককে তিন দফায় ২৩ দিন এবং মামুনকে আট দিনের রিমান্ড শেষে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করা হয়। আসামিদের রিমান্ডে নেওয়া মামলাগুলোয় কারাগারে পাঠানোর আবেদন করা হয়।
খিলগাঁও থানার একটি হত্যা মামলায় ইনু, মেনন, পলক ও মামুনকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়। খিলগাঁও থানার আরেক হত্যা মামলায় এবং ভাটারা থানার একটি হত্যা মামলায় মামুনকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুর রহমান শুনানি শেষে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করে আসামিদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গত ২৫ আগস্ট বিকালে উত্তরার একটি বাসা থেকে ইনুকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশের একটি টিম। পরদিন নিউমার্কেট থানার ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ হত্যা মামলায় সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এরপর মোহাম্মদপুরে ট্রাকচালক সুজন হত্যা মামলায় গত ৩ সেপ্টেম্বর তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এরপর ৮ সেপ্টেম্বর দুই দফা ১২ দিনের রিমান্ডের পর লালবাগ থানায় আইডিয়াল কলেজের ছাত্র খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ হত্যা মামলায় তার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
গত ২২ আগস্ট রাজধানীর গুলশান থেকে রাশেদ খান মেননকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন রাজধানীর নিউমার্কেটে ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ হত্যা মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। এরপর গত ২৭ আগস্ট রাজধানীর আদাবর থানার গার্মেন্টস কর্মী রুবেল হত্যা মামলায় মেননের ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
অন্যদিকে পলক গত ১৪ আগস্ট রাজধানীর খিলক্ষেত থানার নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকা থেকে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় গ্রেপ্তার হন। পরদিন রাজধানীর পল্টনে কামাল মিয়া নামে এক রিকশাচালককে হত্যার মামলায় তার ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এরপর গত ২৫ আগস্ট আইডিয়াল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র খালিদ হাসান সাইফুল্লাহকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে লালবাগ থানার মামলায় দ্বিতীয় দফায় তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ১ সেপ্টেম্বর বাড্ডা থানায় সুমন সিকদার হত্যা মামলায় এবং সূত্রাপুর থানায় ইকরাম হোসেন কাওসার ও ওমর ফারুক হত্যা মামলায় তিন দিন করে ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
আসামি মামুন গত ৩ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হন। পরদিন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে মোহাম্মদপুরে মুদি দোকানদার আবু সায়েদ হত্যা মামলায় তার ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
অন্যদিকে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়ের একটি মামলায় ধানমন্ডি জোনের সাবেক অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আব্দুল্লাহ হিল কাফীর আট দিনের রিমান্ডের পর সাভার থানার একটি হত্যা মামলায় তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
বৃহম্পতিবার ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জুলহাস উদ্দিন শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
সাভার থানার ইয়ামিন হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লা বিশ্বাস এ আসামির সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, এ মামলায় এজাহারনামীয় ১৬ নং আসামি। ঘটনার দিন গত ১৮ জুলাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সাভার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সশস্ত্র অবস্থায় পাশাপাশি অবস্থান নিয়ে মহাসড়কের ফুটওভার ব্রিজের নিচে শহীদ শাইখ আস-হা-খুল ইয়ামিনকে ঘরে টেনে পুলিশের সাঁজোয়া যানের কাছে নিয়ে বুকের বামপাশে গুলি করে। বন্দুকের গুলিতে বুকের বামপাশ ঝাজরা হয়ে যায়। এরপর দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা গুরুতর আহত আমিনকে টেনে পুলিশের সাঁজোয়া যানের ওপরে ফেলে রেখে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে ভীতি প্রদর্শনের জন্য গাড়িটি এপাশ থেকে ওপাশ প্রদক্ষিণ করতে থাকে। এভাবে প্রদক্ষিণ করা হয় কিছু সময় পর পর। এরপর চলন্ত গাড়ি থেকে ইয়ামিনকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে প্রায় মৃত অবস্থায় ফেলে দেয় এবং সাঁজোয়া যানের ভেতর থেকে একজন পুলিশ সদস্যকে বের করে শাইখ আস-হা-বুল ইয়ামিনের পায়ে পুনরায় গুলির নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর ইয়ামিনকে মৃত ভেবে পায়ে গুলি না করে পিচঢালা রাস্তার ওপরের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে টেনে নিয়ে রোড ডিভাইডারের পাশে ফেলে দেওয়া হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকতাদের নির্দেশে ইয়ামিনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তাই এ আসামিকে ৭ দিনের পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর আনোয়ারুল কবির বাবুল এবং বিএনপির পক্ষে আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। আর আসামি পক্ষে আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে ধানমন্ডি থানার মামলায় আব্দুল্লাহ হিল কাফীর আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ওই রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে হাজির করা হলে সিএমএম আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
কাফীর মামলার অভিযোগে বলা হয়, এ আসামি ধানমন্ডি জোনে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার পদে নিয়োজিত থাকাকালে মামলার অপর আসামি সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, পুলিশ কর্মকর্তা মারুফ হোসেন সরদার, হাজারীবাগ থানার ওসি ইকরাম আলী মিয়া এবং আসামি মাইনুদ্দিন কাজলসহ অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জন মিলে ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ধানমন্ডি থেকে মামলার বাদী ইঞ্জিনিয়ার আরিফ মাঈন উদ্দিনকে অপহরণ করে। এরপর তাকে অজ্ঞাত স্থানে আটকে রেখে পরিবার থেকে মুক্তিপণ আদায় করা হয়।
(ঢাকাটাইমস/১২সেপ্টেম্বর/এফএ)