বাণিজ্যিক ‘স্পেসওয়াকে’ ইতিহাস গড়লেন মার্কিন ধনকুবের
মহাকাশযান থেকে বের হয়ে মহাশূন্যে নভোচারীরা যখন বিচরণ করেন, তাকে ইংরেজিতে বলা হয় ‘স্পেসওয়াক’। তবে এতোদিন শুধুমাত্র কোনো দেশের সরকারি সংস্থার পেশাদার নভোচারীরাই মহাজাগতিক এই অনুভূতি নিতে পারতেন। প্রথমবারের মতো বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে অপেশাদার নভোচারী হিসেবে ‘স্পেসওয়াক’ সম্পন্ন করেছেন এক মার্কিন ধনকুবের এবং এক নারী প্রকৌশলী।
বৃহস্পতিবার ভূপৃষ্ঠ থেকে ৭০০ কিলোমিটার উচ্চতায়, এই মহাজাগতিক ইতিহাস রচিত হয়। মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেসএক্স-এর ‘পোলারাইস ডন’ (Polaris Dawn) অভিযানে এই মাইলফলক তৈরি হয়েছে। এই মিশনে দুই ক্রুসহ মোট চারজন মহাকাশচারী অংশ নেন। তাদের মধ্যে দুজন ‘স্পেসওয়াক’ করেন।
বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত এই স্পেসওয়াক সম্পন্নকারী দুইজন হলেন জ্যারেড আইজ্যাকম্যান ও সারাহ গিলিস। এর মধ্যে ৪১ বছর বয়সী আইজ্যাকম্যান ইলেকট্রনিক পেমেন্ট কোম্পানি শিফট৪-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও। অন্যদিকে সারাহ ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেসএক্সের প্রকৌশলী। এছাড়া মহাকাশযানের ক্রু হিসেবে ছিলেন স্কট পোটিট এবং অ্যানা মেনন।
মিশনে প্রথমে ধনকুবের আইজ্যাকম্যান যিনি এই স্পেসএক্সের ক্যাপসুল (ক্রু ড্রাগন) থেকে বাইরে বেরিয়ে মহাশূন্যে বিচরণ করেন, যা কোনো বেসরকারি সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত প্রথম স্পেসওয়াক হিসেবে ইতিহাস গড়ে। তার প্রায় ১৫ মিনিটের ব্যবধানে বের হয়ে এসে ‘স্পেসওয়াক’ করেন সারাহ।
এদিকে এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের ছবি এবং ভিডিও সামনে এসেছে, তা অভূতপূর্ব। মুহূর্তের মধ্যে সেগুলো ভাইরাল হয়ে গেছে সামাজিক মাধ্যমে।
ভিডিওতে দেখা যায়, নীল-সাদা পৃথিবী রয়েছে সম্মুখভাগে। নিকশ কালো অন্ধকারে দুলছে ক্যামেরা। ধীরে ধীরে মহাকাশযানের ওপরের ঢাকনাটি খোলে এবং বেরিয়ে আসেন আইজ্যাকম্যান। ঝুঁকে নীচের দিকেও তাকান তিনি। সামনে উজ্জ্বল পৃথিবীকে দেখে উল্লাসে মুষ্টিবদ্ধ হাতটি তোলেন। স্পেসওয়াকের আগে নিজেকে প্রস্তুত করেন আইজ্যাকম্যান। স্পেসস্যুটটির নমনীয়তা পরীক্ষা করে দেখতে বিভিন্ন ভঙ্গিতে হাত-পা নাড়ান তিনি।
ভিডিওতে আরও দেখা যায়, স্পেসওয়াকের সময় মহাকাশযানের সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় ছিলেন আইজ্যাকম্যান এবং সারাহ। স্থিতিশীলতা বজা রাখতে স্কাইওয়াকার নামের হ্যান্ড রেল প্রযুক্তিও ব্যবহার করেন। দুইজনই ১২ মিনিট করে মোট ২৪ মিনিট মহাকাশযানটির বাইরে ছিলেন। অন্যদিকে মহাকাশযানের ভেতর থেকে সবকিছু পরিচালনা করেন স্কট পোটিট এবং অ্যানা মেনন।
স্পেসএক্সে জানিয়েছে, এই স্পেসওয়াকের লক্ষ্য ছিল তাদের তৈরি নতুন স্পেসস্যুট পরীক্ষা করে দেখা। আগামীতে চাঁদ এবং মঙ্গলে অভিযানে এই স্পেসস্যুট কাজে লাগবে বলে এই মিশনে প্রমাণ হয়েছে।
সূত্র: বিবিসি, এনডিটিভি
(ঢাকাটাইমস/১৩সেপ্টেম্বর/এমআর)