সোনাগাজী পৌরসভায় সড়কে বর্জ্য, দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

ফেনীর সোনাগাজী পৌরসভায় বর্জ্য অপসারণের নির্ধারিত জায়গা না থাকায় যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা স্তূপ করে রাখা হয়েছে। এতে চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, বাড়ছে রোগব্যাধি। মশা-মাছি ও পোকামাকড়ের উপদ্রবে দিশেহারা পৌরবাসী। এতে পৌরবাসীর মাঝে চরম ক্ষোভ আর অসন্তোষ বিরাজ করছে।
গত ৫ আগস্ট পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন ভারতে আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পর থেকে এ অচলাবাস্থার সৃষ্টি হয়।
জানা যায়, ২০০৩ সালে সোনাগাজী ‘গ’ শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে যাত্রা করে। পরে দ্বিতীয় শ্রেণি অর্থাৎ ‘খ’ শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত হয়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। কিন্তু প্রথম শ্রেণির পৌরসভা ঘোষিত হলেও বর্জ্য অপসারণের নির্ধারিত স্থান পায়নি সোনাগাজী।
সর্বশেষ দুই মেয়াদের মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম খোকন নিজ ক্ষমতাবলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় সীমানা প্রাচীরের মধ্যে বর্জ্য অপসারণ করেন। এ নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর মেয়রকে বিবাদী করে ফেনীর পরিবেশ আদালতে মামলা করেন। মামলাটি এখনো বিচারাধীন।
ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পরপর পাউবোর নির্ধারিত স্থানের আশপাশের বাসিন্দারা পৌরসভা ঘেরাও করে দাবি জানান আগের জায়গায় আবর্জনা না ফেলতে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদেরও কঠোর হুঁশিয়ারি দেন তারা।
পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা আবর্জনা ফেলার জায়গা না পেয়ে গত দুই মাস ধরে ড্রেনের ময়লা পরিষ্কার করে পাশের গলি কিংবা সড়কের ওপর রেখে দিচ্ছেন। বাসাবাড়ির লোকজন তাদের গৃহস্থালি বর্জ্য নির্ধারিত ডাস্টবিনে বস্তায় ভরে ফেলে যাচ্ছেন। এসব বর্জ্য পচে চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
এভাবে যেখানে-সেখানে ফেলায় ময়লার শহরে পরিণত হয়েছে সোনাগাজী পৌরসভা। পৌরসভার মালিকানাধীন নির্ধারিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও জায়গা না থাকায় পৌর কর্তৃপক্ষও দিশাহীন।
বর্তমানে পৌর প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান। অনেকটা অসহায়ত্ব প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বর্জ্য অপসারণের জন্য স্থান নির্ধারণ না করে পৌরসভা ঘোষণা করা ঠিক হয়নি। এখন চাইলেও পৌর কর্তৃপক্ষ দ্রুত জমি কিনতে পারবে না। তবে পৌরবাসীর দুর্ভোগের কথা ভেবে জমি খোঁজা হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো ও জনবসতিহীন এলাকায় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে বর্জ্যের ভাগাড় স্থাপনের চেষ্টা করছি আমরা।’ বর্তমান আবর্জনা অব্যবস্থাপনায় দুর্গন্ধে জনগণের দুর্ভোগের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
সোনাগাজী বাজারের ব্যবসায়ী বেলায়েত হোসেন বলেন, এভাবে চলতে থাকলে সোনাগাজী পৌরসভা বসবাস অযোগ্য জনপদে পরিণত হবে।
বর্জ্য অপসারণ না করায় পরিবেশদূষণে নানা রোগও ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানান ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাখরিয়া গ্রামের মাঈন উদ্দিন ডিলার। তিনি বলেন, ‘কাঁচা বাজার এলাকায় গলি ও ড্রেনে ময়লায় একাকার হয়ে গেছে। মাছ বাজারের অবস্থাও খুব খারাপ।’ দ্রুত জমি কিনে বর্জ্য অপসারণের দাবি জানান তিনি।
পৌর প্রশাসক সঠিক দায়িত্ব পালন করছেন না অভিযোগ করে সাবেক মেয়র ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন সেন্টু বলেন, পৌরবাসী খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। পৌরসভার পক্ষ থেকে জমি কিনে দ্রুত বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা করতে হবে।
সোনাগাজী পৌরসভা গঠনের পর এক বছর পৌর প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন তৎকালীন ইউএনও কুদরত উল্যাহ মিয়া। ২০০৪ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা জামাল উদ্দিন সেন্টু। তিনি পরপর দুই মেয়াদে মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তী দুই মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম খোকন।
গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপর মেয়র খোকন ভারতে পালিয়ে যান।
(ঢাকাটাইমস/১১অক্টোবর/মোআ)

মন্তব্য করুন