দ্রব্যমূল্যের সিন্ডিকেট ভাঙতে কঠোর হতে হবে: উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেটের উৎস চিহ্নিত করে প্রয়োজনে বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের সিন্ডিকেট ভাঙতে কঠোর হতে হবে। প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা থাকার পরও আপনারা যদি কাজ করতে না পারেন তাহলে আমরা নতুনদের নিয়ে আসি। আপনাদের রেখে আমরা কী করবো।’
উপদেষ্টা বলেন, `দ্রব্যমূল্য নিয়ে আপনারা বলছেন ভোক্তা অধিকারের আইন কঠোর না, কিন্তু আমাদের তো বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটকের বিধান আছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেটগুলোর উৎস চিহ্নিত করে প্রয়োজনে বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রয়োগ করতে হবে।‘
শনিবার বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রাম বিভাগ এবং জেলা দপ্তরসমূহের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে প্রশাসনকে সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। যতবড় ক্ষমতাধরই হোক না কেন তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে বাজার ব্যবস্থাকে স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘প্রাইভেট সেক্টর ও উদ্যোক্তাদেরকে নিয়ে সিন্ডিকেটকে বাইপাস করে একটা স্থায়ী সমাধানের পথে এগোতে হবে। বিগত কিছু বছর ধরে কৃষি উদ্যোক্তা এবং শ্রমজীবী থেকে শুরু করে তরুণ সমাজ পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। কোনো সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী দল যাতে আপনাদের বাঁধা দিতে না পারে সেজন্য সরকার এবং প্রশাসন সর্বোত্তম সহযোগিতা করবে।’
সরকারের সবগুলো দপ্তরের মাঝে সমন্বয় ঘটাতে হবে উল্লেখ করে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা বলেন, ‘মানুষের ভোগান্তি কমাতে এবং জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে সবাইকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। দ্রব্যমূল্য বা আইন শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাঝে জবাবদিহিতা ও সমন্বয় থাকতে হবে। নতুন বাংলাদেশে মানুষের ভোগান্তি কমানোর ক্ষেত্রে আমাদের সর্বোত্তম চেষ্টা করে যেতে হবে। এতে মানুষের মাঝে কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি পাবে এবং বৈষম্যহীন এক নতুন বাংলাদেশের সূচনা হবে।’
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনার বিষয়ে কর্মকর্তাদের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘টাস্কফোর্স বা ভোক্তা অধিকার আপনারা কয়টা অভিযান চালিয়েছেন, কি পরিমাণ কাজ করেছেন সে বিষয়ে আমি কিছুই পাইনি। আমাকে বাণিজ্য সচিব তিনদিনের টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন পাঠিয়েছিলেন। আমি একদিন সেখানে চট্টগ্রামের নাম পেয়েছি, বাকি দুইদিন চট্টগ্রামের নামই নেই। ৪০-৪৫টা জেলার মধ্যে টাস্কফোর্সের অভিযান হয়েছে কিন্তু চট্টগ্রামে তিনদিনের মধ্যে দুইদিন আসলে কোনো অভিযানই হয়নি। আমার মনে হয় এই জায়গায় আপনাদের সদিচ্ছার ঘাটতি আছে কিংবা সরকারের প্রতি অসহযোগিতার একটা ব্যাপার আছে।’
সমন্বয়করা তাদের বক্তব্যে বলেছেন, ‘দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের জীবনযাপন কষ্টকর হয়ে উঠেছে। সেজন্য ছাত্ররা নিজ উদ্যোগে আগামীকাল থেকে বাজারে পণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখার জন্য কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি পণ্য নিয়ে এসে আমরা বাজারজাত করব। রিয়াজউদ্দিন বাজার ও কর্ণফুলী মার্কেটে পণ্য ক্রয়ের রশিদ ব্যবসায়ীদেরকে দোকানের সামনে টাঙিয়ে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও পণ্যের দাম কমানোর ক্ষেত্রে অব্যশই সিন্ডিকেটদের পাশাপাশি যারা স্লিপ বাণিজ্য করে তাদের বিরুদ্ধেও অভিযান চালাতে হবে।’
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামানের সভাপতিত্বে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম, জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মাসুদ আহম্মদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ. এন. এম ওয়াসিম ফিরোজ, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, জুলাই বিপ্লবের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি, মোহাম্মদ রাসেল ও জুবাইদুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এরআগে সকালে একদিনের সফরে এসে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম ও এম এ আজিজ স্টেডিয়াম পরিদর্শন করেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
(ঢাকা টাইমস/১৯অক্টোবর/এসএ)

মন্তব্য করুন