কোন কোন খাবার খেলে প্রাণঘাতী ব্রেন স্ট্রোক দূরে থাকে
স্ট্রোক একটি ভয়ংকর রোগ। মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে এবং এর ভেতরের ধমনিগুলোকে প্রভাবিত করে। এই রোগের ফাঁদে পড়লে প্রাণ নিয়ে পড়তে পারে টানাটানি। আর প্রাণ যদি বেঁচেও যায়, সেক্ষেত্রে প্যারালাইসিস হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। তাই যে ভাবেই হোক আপনাকে স্ট্রোকের ফাঁদ এড়িয়ে চলতে হবে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, স্ট্রোকের শারীরিক ও মানসিক লক্ষণ তেমন থাকে না, তবে আগে থেকেই দীর্ঘস্থায়ী বিভিন্ন রোগের সঙ্গে যেমন—উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, অতিরিক্ত ওজন, ডায়াবেটিস ইত্যাদির সম্পর্ক থাকতে পারে। বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও স্ট্রোক দেখা যাচ্ছে।
পেটে মেদ জমতে দেবেন না। ভুঁড়ি এবং নিতম্বের অনুপাত যে ০.৮৫ এর মধ্যে থাকে খেয়াল রাখতেই হবে। তাহলে আচমকা স্ট্রোক থেকে রেহাই পাবেন। স্ট্রোকের লক্ষণ হিসেবে কখনও হাঁটা-চলা বা ভারসাম্য রক্ষার সমস্যা, পড়ে যাওয়া, হাত-পা অবশ হয়ে যাওয়া, কথা বলতে ও বোঝাতে অসুবিধা হওয়া, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া, মাথা ঝিমঝিম করা ও মাথা ঘোরার মতো নানা উপসর্গ দেখা যায়।
পুষ্টিবিদদের মতে, প্রেশার, সুগার ও কোলেস্টেরলকে বশে রাখতে হবে। এর পাশাপাশি এড়িয়ে চলতে হবে ধূমপান ও মদ্যপান। এমনকী ফাস্টফুড খাওয়াও চলবে না। তার বদলে কিছু উপকারী খাবারকে ডায়েটে জায়গা করে দিতে পারেন। তাতেই স্ট্রোকের থেকে দূরে থাকবেন।’
বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদের থেকেই স্ট্রোক প্রতিরোধে সাহায্যকারী কিছু খাবার সম্পর্কে জেনে নিন। তার পর এগুলিকে ডায়েটে করে দিন জায়গা।
স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে চাইলে আপনাকে হেলদি ফ্যাট যুক্ত খাবার খেতে হবে। এক্ষেত্রে মাছ ও সামুদ্রিক খাবারে রাখুন ভরসা। এর পাশাপাশি ডায়েটে জায়গা করে দিতে পারেন বিভিন্ন ধরনের বাদাম, বীজ এবং অ্যাভোকাডোকে। সেই সঙ্গে রান্না করুন এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ তেল দিয়ে। ব্যস, তাহলেই শরীরে উপকারী ফ্যাট পৌঁছে যাবে। যার ফলে কমবে প্রদাহ। এড়িয়ে চলা যাবে স্ট্রোকের ফাঁদ।
সুস্থ থাকতে চাইলে নিয়মিত খেতেই হবে ফল ও সবজি। কারণ, এই সব প্রাকৃতিক খাবারে রয়েছে ভিটামিন, খনিজের ভাণ্ডার। শুধু তাই নয়, এতে ভরপুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা প্রদাহ কমায়। এর পাশাপাশি এতে মজুত ফাইবারের গুণে বশে থাকে কোলেস্টেরল, নিয়ন্ত্রণে থাকে সুগার। যার জন্য এড়িয়ে চলা যায় স্ট্রোকের ফাঁদ। তাই আজ থেকেই রোজের পাতে মরশুমি সবজি এবং ফলকে জায়গা করে দিন। তাতেই উপকার পাবেন হাতেনাতে।
অত্যন্ত উপকারী হোল গ্রেইন খাবার হলো ডালিয়া, ওটস, আটার রুটির মতো খাবার। এই ধরনের খাবার স্বাস্থ্যের হাল ফেরানোর কাজে সেরা অস্ত্র। আসলে এগুলিতে রয়েছে ফাইবারের ভাণ্ডার। এই উপাদান অন্যান্য খাবারে উপস্থিত এলডিএল কোলেস্টেরলকে অন্ত্রে বেঁধে ফেলে। তার পর মলের মাধ্যমে বের করে দেয়। শুধু তাই নয়, হোল গ্রেইনে মজুত সব ভিটামিন, খনিজ ও ফাইবারের গুণে প্রেশার ও সুগারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সুবিধা হয়। তাই রোজের ডায়েটে অবশ্যই হোল গ্রেইন খাবারকে জায়গা করে দিন। ব্যস, তা হলেই মিলবে উপকার।
টোমেটোতে রয়েছে লাইকোপেন নামক একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আর এই উপাদান স্ট্রোক প্রতিরোধে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, নিয়মিত এই সবজি খেলে সুগার, প্রেশারের মতো জটিল কয়েকটি অসুখকেও বশে রাখা যায়। তাই আর সময় নষ্ট না করে নিয়মিত টোম্যাটো খাওয়া শুরু করে দিন। তবে এই সবজির জুস করে খেলে তেমন একটা লাভ মিলবে না। উল্টে ক্ষতির আশঙ্কা প্রবল হবে। তাই এই বিষয়টা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, নিয়মিত সবুজ শাক খেলে স্ট্রোকের ঝুঁকি প্রায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে ফেলা যায়। কারণ, এই প্রাকৃতিক খাবারে রয়েছে পটাশিয়ামের ভাণ্ডার। এই খনিজ প্রেশার কমায়। সেই সঙ্গে রক্তনালীকে শান্ত করে। তাই রোজের ডায়েটে অবশ্যই শাককে জায়গা করে দিন। তাতেই উপকার মিলবে হাতেনাতে।
কমলালেবু, বাতাবিলেবু, শরবতিলেবু হলো সাইট্রাস ফ্রুটের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এসব ফলে রয়েছে ভিটামিন সি, ফোলেট এবং পটাশিয়ামের ভাণ্ডার। এমনকি এগুলোতে অত্যন্ত উপকারী কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফ্ল্যাভানয়েডসেরও খোঁজ মেলে। যার ফলে যেকোনো ধরনের লেবু খেলে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি এক ধাক্কায় অনেকটাই কমে যায়।
মাছের শরণাপন্ন হন। স্ট্রোকের মতো জটিল অসুখের থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে চাইলে নিয়মিত স্যালমন, টুনা, ম্যাকারেলের মতো মাছ খেতে হবে। এসব মাছে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের ভাণ্ডার। এই উপাদান ব্লাড ফ্লো স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে প্রদাহের প্রকোপ কমানোর কাজেও এর জুড়ি মেলা ভার। যার ফলে স্ট্রোকের ফাঁদ অনায়াসে এড়ানো সম্ভব হয়।
তবে সবার পক্ষে এসব দামি মাছ কিনে খাওয়া সম্ভব নয়। তাই আপনারা চাইলে রুই, কাতলা, পারশে, কই, ভেটকির মতো পরিচিত সব মাছও খেতে পারেন। তাতে কিছুটা হলেও উপকার পাবেন বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রতিদিন খান দই। বিশেষজ্ঞদের কথায়, দইতে উপস্থিত ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম এবং প্রোবায়োটিকসের গুণে স্ট্রোকের মতো কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে। তাই আজ থেকেই নিয়মিত দই খাওয়া চালু করে দিন। তবে এই দুগ্ধজাত খাবার খেয়ে উপকার পেতে চাইলে মিষ্টি দই এড়াতে হবে। তার বদলে বাজি ধরুন টক দইয়ের উপর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই কাজটা সেরে ফেললেই উপকার পাবেন হাতেনাতে।
লবণ খাওয়া সীমিত করুন। লবণ স্ট্রোকের জন্য একটি বড় ঝুঁকি। এখানে লবণ বলতে প্যাকেটজাত খাবার এবং প্রক্রিয়াজাত লবণকে বলা হচ্ছে। জেনে রাখুন, প্যাকেটজাত খাবারে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি লবণ থাকে। আপনি যদি নিয়মিত এই জাতীয় খাবার খান তবে এটি আপনার রক্তচাপ এক চিমটে বাড়িয়ে দেবে, যা ধমনী, মস্তিষ্ক এবং হৃদপিণ্ডকে খারাপভাবে প্রভাবিত করবে। তাই যতটা সম্ভব প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেটজাত খাবার থেকে দূরে থাকুন। দিনে ৫ গ্রাম লবণ খাওয়া কমিয়ে দিলে উচ্চরক্তচাপের সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমে যাবে।
আপনি যদি জাঙ্ক এবং ট্রান্সফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার দিয়ে আপনার দিন শুরু করেন, তবে আপনার সতর্ক হওয়া উচিত। এই খারাপ খাদ্যাভ্যাস স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। চিকিৎসকদের মতে, জাঙ্ক ফুডে সাধারণত প্রচুর ট্রান্সফ্যাট থাকে, যা এলডিএল নামক খারাপ কোলেস্টেরলের জন্ম দেয়। এটি ধমনীতে জমা হয় এবং শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করে। কোলেস্টেরল শরীরের প্রদাহ বৃদ্ধি এবং হার্ট অ্যাটাকের প্রধান কারণ ব্যাখ্যা কর।
অল্পস্বল্প লক্ষণ হলেও তা অবহেলা না করে নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নিলে পরবর্তীতে জটিলতার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। মারাত্মক এই অসুখ সম্পর্কে সকলে সচেতন হন, স্ট্রোকমুক্ত থাকুন।
যত দ্রুত এর চিকিৎসা করবেন ততোই রোগীর জন্য ভালো, নাহলে মস্তিষ্কে চাপের কারণে রোগী প্যারালাইসিস হয়ে যেতে পারে। স্ট্রোকের দ্রুত চিকিৎসা হলে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠা সম্ভব।
চিকিৎসকের মতে, স্ট্রোক আটকানোর চেষ্টা করার পাশাপাশি রোগের লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা উচিত।
(ঢাকাটাইমস/০২ নভেম্বর/আরজেড)
মন্তব্য করুন