স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা দরকার: সাখাওয়াত হোসেন
পুলিশ আর রাজনীতিকরণের অংশ হতে চায় না বলে মন্তব্য করেছেন নৌপরিবহন এবং বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, পুলিশকে জনমুখী করার লক্ষ্যে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন বিষয়ে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা ও অঙ্গীকার দরকার।
শনিবার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্স (এসআইপিজি ) এর উদ্যোগে আয়োজিত ‘জনমুখী পুলিশ সেবা নিশ্চিতকল্পে পুলিশ কমিশন গঠন ও অন্যান্য সংস্কারের প্রস্তাব’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘দানবিক পুলিশ’ থেকে ‘মানবিক পুলিশ’ গঠনের ক্ষেত্রে একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন অপরিহার্য। এই স্বাধীন পুলিশ কমিশনের প্রধান হিসেবে একজন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে এবং এ কমিশন পাঁচ সদস্যের অধিক হবে না।
তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টের রক্তক্ষয়ী বিপ্লবের পরে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত পুলিশ বাহিনী গঠন এখন সময়ের দাবি। যেকোনো উপায়ে পুলিশ বাহিনীর ওপর জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। এজন্য পুলিশের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে দিতে হবে। আমাদের ছাত্ররা পুলিশকে সাহায্য করছে। তারা ট্রাফিক সামলানোর মত গুরুত্বপূর্ণ কাজও করছে। পুলিশকে সহযোগিতা করতে থানায় থানায় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নাগরিক কমিটি করে দেওয়া যেতে পারে।
পুলিশের অনিয়ম দুর্নীতি দূর করতে তিন ধাপের নিয়োগ থেকে কমিয়ে দুই ধাপে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালুর বিষয়ে তিনি বলেন, পুলিশের নিচের দিকের সদস্যদের সুযোগ সুবিধা অত্যন্ত কম। তাদের পদোন্নতি সুযোগ নেই। তারা যে পদে কনস্টেবল যোগদান করে আর সেই পথ থেকেই অবসরে যায়। যা কাম্য নয়। একজন বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েট যখন আর পদোন্নতির কোন আশা দেখেন না। তখন সে হতাশ হয়, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। নিচের দিকে পুলিশের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে পুলিশের দুর্নীতি অনেকাংশে কমে যাবে।
তিনি আরও বলেন, একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার জানা উচিত কীভাবে তার অধস্তন পুলিশ ডিউটি করে। দায়িত্ব পালন করতে কি কি সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। এজন্য বিসিএস ক্যাডারভুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের সারদায় বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ শেষে এক বছরের জন্য থানায় সংযুক্ত করে তৃণমূল পর্যায়ে কীভাবে পুলিশ কাজ করে সেটি জানার ও বোঝার সুযোগ তৈরি করে দেয়া যেতে পারে।
পুলিশের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে জেলাভিত্তিক নিয়োগ কার্যক্রম গ্রহণ না করে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া ও তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্পন্ন করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, আমার মতে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বাধীন পুলিশ কমিশনের মাধ্যমেই হওয়া উচিত। আমাদের পুলিশ কমিশন গঠন করা জরুরি, ৮ই আগস্টের পর পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যদের সাথে কথা বলি, এই পুলিশ কমিশন গঠন তাদের সে সময়ের দাবি ছিল, তারা আর রাজনীতিকরণ এর অংশ হতে চায় না।
সেমিনারের সঞ্চালনা করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এসআইপিজি পরিচালক অধ্যাপক শেখ তৌফিক এম. হক।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রিজওয়ানুল ইসলাম এবং পলিটিক্যাল সায়েন্স এবং সোশিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. ইশরাত জাকিয়া সুলতানা এ সেমিনারে দেশের পুলিশ সংস্কারের একটি সম্ভাব্য রোডম্যাপ এবং একটি সম্ভাব্য পুলিশ কমিশন গঠনের পরিকল্পনা তুলে ধরেন।সেমিনারে রাজনৈতিক দল জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম)-এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, আমরা পুলিশ কমিশন গঠনের ব্যাপারটিকে সাধুবাদ জানাই। এর মাধ্যমে আমরা বিকেন্দ্রীকরণের পথে এগিয়ে যাবো এবং এর ফলে পুলিশের রাজনীতিকরণও কমবে।
এস. এম. জহিরুল ইসলাম, সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব এবং বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা বলেন, আমাদের একজন কনস্টেবল যদি যোগ্য, মেধাবী এবং বিশ্বস্ত হন, তাহলে তাকে সর্বোচ্চ পদে উন্নীত হওয়ার সুযোগ কেন দেওয়া হবে না? আমাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে পুনর্বিবেচনা করতে হবে। জনগণের জন্য যা ভালো, তা আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে স্বাগত জানাই।
বাংলাদেশ পুলিশের ডিআইজি ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন আশা ব্যক্ত করেন, মনোবল ভেঙে যাওয়া পুলিশ সদস্যদের বিষয়টি আমাদের সংস্কারের একটি অংশ হিসেবে গুরুত্ব দিতে হবে।
অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক মো. মাহবুবুল করিম, প্যানেলের শেষ বক্তা হিসেবে বলেন, আমরা পুলিশ কমিশন গঠনের পথে যেতে পারি, তবে পুলিশ সংস্কারকে একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। সকল সংস্কার প্রচেষ্টাকে একই ধারায় বিবেচনা করা জরুরি, কারণ পুলিশ আমাদের সমাজের অংশ। আমাদের একটি জাতীয় শুদ্ধি প্রক্রিয়ার প্রয়োজন।
সেশনের সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী, তিনি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে গবেষণা ও সংলাপ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। সেমিনারে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এবং সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।
(ঢাকাটাইমস/০৯নভেম্বর/আরএইচ/এমআর)
মন্তব্য করুন