মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকা কী ছিল, প্রশ্ন রিজভীর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯:৩৩| আপডেট : ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ২০:০৪
অ- অ+

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের নেতাকর্মীদের ভূমিকা কী ছিল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক ভূমিকা কী ছিলো, তারা কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন তা জাতি জানতে চায়।

সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের বক্তব্য ‘দেশে পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক শক্তি দুটি, একটি সেনাবাহিনী আরেকটি জামায়াত’ এর প্রেক্ষিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বৃহস্পতিবার সিলেটের কদমতলীতে ‘আমরা বিএনপি পরিবারের’ পক্ষ থেকে যুব এশিয়া কাপ বিজয়ী ক্রিকেটার ইকবাল হোসেন ইমনের পরিবারকে শুভেচ্ছা উপহার প্রদানকালে জামায়াত আমিরের বক্তব্য প্রসঙ্গে কথা বলেন রিজভী।

তিনি বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক দল বলেছে দেশপ্রেমিক তারা এবং সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনী দেশপ্রেমিক নিঃসন্দেহে, কারণ তাদের পূর্বসূরিরা এই বাংলাদেশ নির্মাণে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন, তার অন্যতম মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানেও সেনাবাহিনী উজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছে।’

রিজভী বলেন, ‘আমি ইসলামপন্থী সেই রাজনৈতিক দলকে বলতে চাই, ৭১ এ আপনাদের রাজনৈতিক ভূমিকা কী ছিলো? কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন, কোন সেক্টর কমান্ডারের আন্ডারে যুদ্ধ করেছেন? বাংলাদেশে কেউ দেশপ্রেমিক নেই, শুধু একটি রাজনৈতিক দল দেশপ্রেমিক– এই ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি করলে মানুষ হাসবে, মানুষ হাসি ছাড়া আর কিছু দেবে না।’

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, এই জাতির ঘাড়ে একটি জগদ্দল পাথর চেপে বসেছিলো। এই পাথর এত ভারি যে গোটা জাতিকে রুদ্ধশ্বাস অবস্থায় রেখেছিলো। মানুষ নিঃশ্বাস নিতে পারত না। মানুষ স্বাচ্ছন্দে চলাফেরা করতে পারত না। রাজনৈতিক দল ও তার কণ্ঠের স্বাধীনতা ছিল না। মিছিল করতে পারতো না, মিটিং করতে পারতো না। পুলিশ অনুমতি দেওয়ার পর যুবলীগ-ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেয়া হতো।

তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলাবাহিনী পুলিশ র‌্যাব বিনা কারণে, বিনা ওয়ারেন্টে রাত্রে বাসায় গেলে পরিবারের নারীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতো। যাতে খুঁজতে গিয়েছে তাকে না পেলে পরিবারের মেয়েদের পর্যন্ত গ্রেপ্তার করে নিয়ে এসেছে।’

‘শেখ হাসিনা নিজের ক্ষমতাকে নিরাপদ করার জন্য, কণ্টকমুক্ত থাকার জন্য, যে বাংলাদেশে ৩০ লাখ মানুষ অকাতরে জীবন দিয়েছে, দুই লাখ নারী নির্যাতিত হয়েছে, এই যে স্বাধীনতা, এই স্বাধীনতা কলঙ্কিত করেছে শেখ হাসিনা। এই সিলেটের কৃতি সন্তান ইলিয়াস আলী আজ নেই কেন? শেখ হাসিনার জন্য। কারণ তিনি দেশের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন, তিনি টিপাইমুখ বাঁধ অভিমুখে লংমার্চ করেছিলেন। মানুষ বলে এইজন্য তাকে নিরুদ্দেশ করে দেওয়া হয়েছে। কত যুবদল-ছাত্রদলের ছেলে ক্রসফায়ারের শিকার হয়েছেন, গুমের শিকার হয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই। এই ভয়ংকর মানবতাহীন কাজ করেছেন সাড়ে ১৫ বছর শেখ হাসিনা।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাড়ে ১৫ বছর গণতান্ত্রিক শক্তির আন্দোলনের পটভূমিতে জুলাই এবং আগস্টে ছাত্রজনতারা নেমে এসেছে। শেখ হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এখন আমরা খবরের কাগজে দেখতে পারছি জুলাই-আগস্টের হত্যার বিচার এক বছরের মধ্যে সম্পন্ন হবে। ড. ইউনূসের প্রতি আমাদের সবার শ্রদ্ধা আছে, কিন্তু এই সরকার তো সর্বজনীন, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের পক্ষের সরকার।’

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘শুধু জুলাই আগস্টে যারা নিহত হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন, শুধু সেইসব অপরাধের বিচার হবে, ইলিয়াস আলীর বিচার হবে না? চৌধুরী আলমের বিচার হবে না? সাড়ে ১৫ বছর যারা ক্রসফায়ারের শিকার হয়েছেন তাদের বিচার করবেন না? যারা ক্রসফায়ার দিয়েছেন, শীতলক্ষা নদীতে সাতটি লাশ ভাসিয়ে দিয়েছেন, সেই সমস্ত দুর্বৃত্ত র‌্যাবের অফিসারদের বিচার হবে না? যে অপরাধ করেছে শেখ হাসিনা, যে কসাইয়ের ভূমিকা পালন করেছে, তার বিচার হবে না?’

জুলাই-আগস্টে আত্মদানকারী ছাত্র-জনতার আত্মদানকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের যেমন বিচার হবে, তেমনি গণতন্ত্রকে উদ্ধারের জন্য যারা অকাতরে জীবন দিয়েছেন, নিরুদ্দেশ হয়ে গেছেন, তাদের কেনো বিচার হবে না? হওয়া উচিত। এইভাবে বিভাজন রেখা টানলে তা দুঃখজনক।’

তিনি বলেন, ‘স্কুলে পাঠ্যবই সম্পূর্ণ সরবরাহ করা যায়নি, সেটা ভিন্ন ব্যাপার। কিন্তু সেখানে ইতিহাসের বইয়ে তারা কিছু কাজ করেছেন প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। এখানে এই জাতির বিবেকবানদের জন্য যে অধ্যায় করা হয়েছে, তাতে আমরা দ্বিমত করছি না। সেখানে শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার ঘোষণা থেকে মুক্তিযুদ্ধের অধ্যায় রাখা হলো না কেনো?’

রিজভী আরও বলেন, ‘জিয়াউর রহমান তো শুধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে শেষ হয় যাননি, যুদ্ধ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের অধ্যায় থাকবে না কেনো? যারা প্রবাসী সরকার হয়েছিলো, সেটা থাকবে, সেটার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের একটা অধ্যায় থাকতে হবে। যতটুকু হয়েছে তার জন্য ধন্যবাদ জানাই, কিন্তু অসম্পুর্ণ থাকবে কেনো?’

তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ একটি বড় ধরনের ঘটনা, শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীকারের আন্দোলন করেছেন, সেটি স্বাধীনতার জন্য একটি মাঠ প্রস্তুত হয়েছে, কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতাযুদ্ধে কোনো বিশেষ ঘোষণা বা প্রস্তুতির কথা বলেননি। সেই আহবান তার নেই। প্রকৃত সত্য হচ্ছে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন জিয়াউর রহমান এবং যুদ্ধ হয়েছে ৯ মাস। সেই অধ্যায়টি রাখা হয়নি। আমি সরকারকে অনুরোধ করব, ইতিহাস স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস হওয়া উচিত।’

আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ।

(ঢাকাটাইমস/০২জানুয়ারি/জেবি/ইএস)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বিশ্বের ৪০০ উদ্ভাবনী বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২৫৭তম উত্তরা ইউনিভার্সিটি
লঙ্কানদের মাটিতে ইতিহাস গড়া জয় টাইগারদের
গোপালগঞ্জের সংঘর্ষ নিয়ে ভুয়া তথ্য ও ছবি ছড়াচ্ছে আ.লীগ: প্রেস উইং
গোপালগঞ্জে কড়াকড়ি কারফিউ চলছে, আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত বলবৎ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা