অতিথি পাখিতে মুখরিত মানিকগঞ্জের গোপীনাথপুর বিল

সায়েম খান, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ)
  প্রকাশিত : ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫:২৭| আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫:৪৩
অ- অ+

প্রকৃতিতে জানান দিয়েছে শীত। এ ঋতু শুধু রিক্ততা ও বিষণ্ণতা নয়, সঙ্গে নিয়ে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি। প্রতি বছরের মতো এ বছরও ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির দেখা মিলছে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার নদী-খাল-বিলসহ পদ্মা নদীতে জেগে ওঠা চর—সবখানেই বিচরণ তাদের৷ এসব পাখির কিচির-মিচিরে মুখরিত পরিবেশ। বাহারি রঙের এসব অতিথি পাখির খুনসুটি আর ছোটাছুটি যে কারও মনকে আনন্দিত করে তোলে। প্রতি শীতে দূর-দূরান্ত থেকে পাখিরা আসে আমাদের দেশে।

মূলত উত্তর মেরুর দেশগুলোর প্রকৃতি যখন পাখির জন্য প্রতিকূল হয়ে ওঠে তখন অপেক্ষাকৃত অনুকূল পরিবেশ পেতে এসব অঞ্চলের পাখি অতিথি হয়ে চলে আসে আমাদের দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের হাওর, বিল, জলাশয়, লেক ও চরাঞ্চলে। শীত মৌসুমজুড়ে অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর থাকে এসব অঞ্চল। পাখিগুলো দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনই চোখ জুড়ানো তাদের খুনসুটি।

সরেজমিনে গোপীনাথপুর বিলে গিয়ে অতীতের মতো পানির দেখা না মিললেও এ বিল পরিণত হয়েছে অতিথি পাখিদের মিলনমেলায়। ভেসে বেড়াচ্ছে সরাল ও বালিহাঁসের দল। মাঝে মধ্যে দেখা যায় ছোট পাখির আর রোদেলা দুপুরে স্বচ্ছ পানির ঝিকিমিকি, সে এক অন্য রকম অনুভূতি। এর সাথে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পাখির কিচিরমিচির বিলের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে আরও এক ধাপ। স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছর শীত শুরুতেই এসব অতিথি পাখির দল এ বিলে আসে। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি এসব পাখি বিলে থাকলেও রাতে আশ্রয়ের জন্য বিভিন্ন গাছে চলে যায়। ভোর হলেই আবার ফিরে আসে বিলে। সারাদিন এসব পাখি জলরাশির উপরে থাকা কচুরিপানার উপর বসে গোসল, খেলাধুলা ও রোদে শরীর শুকাতে দেখা যায়। কখনো কখনো আকাশে দলবেঁধে উড়তে দেখা যায়। এ এক অন্য রকম অনুভূতি, যা দেখতে বিভিন্ন এলাকার লোকজন এসে থাকেন।

এলাকায় পাখি চেনেন বা জানেন এমন কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিলের জলভাগে যেসব পাখি রয়েছে এদের অধিকাংশই সরাল ও বালিহাঁস। এছাড়াও পানকৌড়ি, সাদা বক, কাদাখোঁচা, ডাহুক, শামুকখোল ও ঘুঘুসহ রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। এসব পাখির দলবদ্ধ বিচরণ মুগ্ধ করে সকলকে।

স্থানীয় গোপীনাথপুর ডেগিরচর গ্রামের মো. সাব্বির নামের এক কিশোর বলেন, `গোপীনাথপুর বিলে নানা রঙের হাজার হাজার পাখি এসেছে৷ অনেক সুন্দর দেখতে৷ ওদের ডাকও খুব সুন্দর। সারাদিন পাখিরা বিলে মাছ ধরে খায়৷ রাতে আশপাশের কাঠবাগান ও গাছে থাকে। বিলে আসলে ওদের দেখতে পাই, ডাক শুনি; খুব ভালো লাগে৷’

এ বিষয়ে বিলে ঘুরতে আসা মো. রিফাত নামে এক দর্শনার্থী বলেন, বিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এই পাখিগুলো আরো বৃদ্ধি করেছে। পাখি হত্যা থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। এ বিষয়ে আইন আছে। পাখি হত্যার মতো বেআইনি কাজ যারা করবে তাদের ধরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিতে হবে।

মানিকগঞ্জ পাখি লালন করি (পালক) কমিটির নির্বাহী সদস্য গোলাম ছারোয়ার ছানু বলেন, অতিথি পাখি রক্ষা বা সংরক্ষণ করার জন্য সরকারিভাবে যে আইন করা হয়েছে প্রশাসন সেদিকে তেমন খেয়াল করে না এবং নজর দেই না। আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে জেলায় সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন স্থানে বিলবোর্ড লাগানো হয়েছে। অতিথি পাখিদের বিচরণ নিরাপদ করার জন্য পাখি শিকার ও বিক্রি বন্ধ করতে হবে। সেইসাথে বিক্রয়কারীদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। সাধারণ মানুষের একটু সচেতনতাই হতে পারে অতিথি পাখিদের অভয়ারণ্যে।

হরিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মুমিন খান বলেন, প্রকৃতির অলংকার পাখি। অতিথি পাখি নিধন আইনত অপরাধ। এদের ধ্বংস করা মানে পরিবেশকে ধ্বংস করা। অতিথি পাখিরা মুক্ত আকাশে, খালে, বিলে, হাওর-বাঁওড়ে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে গিয়ে শিকারির দ্বারা যেন আক্রান্ত না হয় সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবসময় তৎপর রয়েছে।

(ঢাকা টাইমস/১৬জানুয়ারি/এসএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
মে দিবস: বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষের প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা
ছাত্রলীগ নেতার ভিডিওর প্রশংসা নোবিপ্রবি অধ্যাপকের
ওষুধ ছাড়াই ঘরোয়া উপায়ে দূর করুন হজমের সমস্যা
সব দেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করে বাংলাদেশ: প্রেস সচিব
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা