উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন করে জাতীয় সরকার গঠনের আহ্বান নুরের

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মুখোমুখি অবস্থান চলমান থাকলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসিত হবে। জাতীয় সরকার ছাড়া কোন ভাবেই সংস্কার সম্ভব নয়। জনগণ কাউকে একক ভাবে ক্ষমতায় বসাতে চায় না।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় সরকার গঠনের বিষয়ে উপদেষ্টা নাহিদ বলেছে, তারা জাতীয় সরকার চেয়েছিল তবে বিএনপি জাতীয় সরকার চায় না। তবে, আমরা প্রথম থেকেই জাতীয় সরকার গঠনের বিষয়ে বলে এসেছি। গত পাঁচ মাস ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। অবিলম্বে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন করে জাতীয় সরকার গঠন করার আহ্বান জানাই।’
শনিবার বিকালে ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে বাংলাদেশ পেশাজীবী অধিকার পরিষদ এর আয়োজনে "গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি" শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
অন্তর্বর্তী সরকার জনআকাঙ্ক্ষার বিপরীতে ধাবিত হচ্ছে অভিযোগ করে নুরুল হক নুর বলেন, গঠনের পর থেকে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে সরকারের উপদেষ্টারা। অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে পরিবর্তন এনে রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে জাতীয় সরকার গঠনের আহ্বান জানান নুর।
ছাত্র নেতৃবৃন্দ কলঙ্কিত হলে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ বিনির্মাণে তরুণ নেতৃত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হবে উল্লেখ করে এসময় ডাকসুর সাবেক এই ভিপি বলেন, অতীতে যারাই সরকার গঠন করেছে তারা ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। বিতর্কিত একটি শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে বিভিন্ন মারফতে উপদেষ্টাদের কেউ কেউ আলোচনা চালাচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, সৌদি আরব গিয়েও মিটিং হয়। একটি সংগ্রামের ইতিহাসের মধ্যে দিয়ে গণ অধিকার পরিষদ রাজনৈতিক ভিত্তি গড়েছে। আমরা অনেক আগেই বলেছি, একই ব্যক্তি দুইবারের বেশি একজন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবে না। এখন সংস্কার কমিশনের একই সিদ্ধান্ত আমরা সাধুবাদ জানাই। আমরা ভারসাম্যমূলক সংসদ ও সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের কথা বলেছি। যা নিয়ে এখন আলোচনা চলছে। সরকারি চাকরিতে বর্তমান গ্রেডে বেতনের যে বৈষম্য রয়েছে তা দূর করা প্রয়োজন। ২০ টি গ্রেডের প্রয়োজন নেই, ৪ থেকে ৫টি গ্রেড থাকতে পারে।
তিনি বলেন, সরকারি সব অফিসে ঘুষ, দুর্নীতি বন্ধে যদি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানোর প্রয়োজন হলে, তা বাড়াতে হবে। নির্বাচনে কালো টাকার ছড়াছড়ি বন্ধ করা উচিত। পেশি শক্তি প্রদর্শন বন্ধ করতে হবে। সেগুলো নিয়ে আলোচনা না করে যারা আন্দোলন করেছে সবাই যার যার ধান্দা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগকে দেশে ফেরাতে অনেক আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কাজ করছে। ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক ব্যবস্থা বিলুপ্তির জন্য আমরা এবার নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত চেয়েছি৷
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্যার ২০০৭ সালে নাগরিক শক্তি গঠন করেন, পরবর্তীতে সফল হতে না পেরে কয়েক মাসের মাথায় সেই দল বিলুপ্ত করেন। এখন বাজারে গুঞ্জন আছে, নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে তার আশীর্বাদ আছে। কিন্তু আমরা এটি বিশ্বাস করিনা। ড. ইউনূস স্যারকে অনুরোধ করবো, বিষয়টি খোলাসা করার জন্য। কারণ জনগণ কিংস পার্টি চাইনা। যে কেউ দল গঠন করুক, এতে আমাদের শুভকামনা থাকবে। কিন্তু গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সরকারের সুযোগ সুবিধা নিয়ে দল গঠন কেউ মানবেনা। কারণ এই গণঅভ্যুত্থানে সবার ভূমিকা আছে। কেন উপদেষ্টারা বিএনপিকে বলছে,তারা ১/১১ চায়? বিএনপি তো ১/১১ এর সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী। বরং শোনা যাচ্ছে এই সরকারের কোন কোন উপদেষ্টার আশপাশে ১/১১ এর কুশীলবরা ঘোরাফেরা করছে। বরং মানুষের মনে উদ্বেগ যে, এই সরকার ব্যর্থ হয়ে আরেকটি ১/১১ সৃষ্টি করে কি না।
তিনি আরও বলেন, আমরা সরকারকে বলবো, ব্যর্থ হয়েন না। সকল রাজনৈতিক দল ও গণঅভ্যুত্থানের শক্তিকে নিয়ে বসুন। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে রোডম্যাপ প্রকাশ করুন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুরত্ব সৃষ্টি করার ফলাফল ভাল হবেনা। এই সরকার গত সাড়ে ৫ মাসে সফলতার মুখ দেখতে পারেনি। বরং পদেপদে ব্যর্থ হয়েছে। এখনো কেন শেখ পরিবার, আওয়ামী হাইকমান্ড ও তৃণমূল থেকে আওয়ামী পাণ্ডাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না? কেন শহীদ পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে না, শহীদ ও আহতদের সঠিক তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে না? কেন নিত্যপণ্যের দাম না কমিয়ে ভ্যাট ট্যাক্স বাড়ানো হলো? সরকারের এসব ব্যর্থতা রাজনৈতিক দলগুলোর উপর চাপানোর চেষ্টা করছে উপদেষ্টাগণ। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে বক্তব্য দিয়ছেন, জামায়াতে ইসলামীর আমীরসহ তো অনেক রাজনৈতিক নেতারা এমন বক্তব্য দিয়েছেন। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকারের সমালোচনা করা, রোডম্যাপ ও নির্বাচন চাওয়া কি অপরাধ? বরং সরকার যৌক্তিকভাবে সবকিছুর সমাধান না করে জটিলতা সৃষ্টি করছে। এভাবে জটিলতা সৃষ্টি করলে আরেকটি ১/১১ তৈরি হবে।
সিনিয়র সহ সভাপতি এবং উচ্চতর পরিষদ সদস্য মো. ফারুক হাসান বলেন, বিপ্লবের পর জনগণের চাহিদা ছিল একটি জাতীয় সরকার, কিন্তু আজ তা অর্জিত হয়নি। কেন হয়নি তা আজ জনগণের প্রশ্ন। যারা ক্ষমতায় আছে এটা তাদের ব্যর্থতা।
বাংলাদেশ পেশাজীবী অধিকার পরিষদের সভাপতি ডা. জাফর মাহমুদের সভাপতিত্বে, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট খালিদ হাসানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর সদস্য আবু হানিফ, এডভোকেট নুরে এরশাদ সিদ্দিকী, হাবিবুর রহমান রিজু, বাংলাদেশ পেশাজীবী অধিকার পরিষদের সিনিয়র সহ সভাপতি মো. শামসুল আলম, গণমাধ্যম ও প্রকাশনা সম্পাদক সাংবাদিক জি এম রোকনুজ্জামান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এম সুমন, দপ্তর সম্পাদক রেজওয়ান রূপ দীনেশ, আন্তর্জাতিক ও নিরাপত্তা বিষয়ক সম্পাদক জনাব সৈয়দ তানভীর ইউসুফ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আতাউর রহমান রনি,শ্রমিক অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা সম্পদ প্রমুখ।
(ঢাকাটাইমস/২৫জানুয়ারি/জেবি/এমআর)

মন্তব্য করুন