জৈন্তাপুর সীমান্ত দিয়ে অবাধে ঢুকছে ভারতীয় পণ্য, আঙুল ফুলে কলা গাছ লাইন বাহিনী

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবাধে প্রবেশ করছে ভারতীয় চোরাচালান পণ্য। যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের মদ, সুপারি, চিনি, শাড়ি, লেহেঙ্গা, বিভিন্ন ব্যান্ডের ওষুধ সামগ্রী, মোবাইল হ্যান্ডসেট, প্রসাধনী সামগ্রী, মোটরসাইকেল ও গরু-মহিষ।
একটি চক্র সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে আদায় করছে মোটা অঙ্কের চাঁদা। বিনিময়ে প্রবেশ করছে এসব চোরাচালান পণ্য।
সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকার ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপকালে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুকরা জানান, জৈন্তাপুর উপজেলা সীমান্তের ১২৭৮ খাসি হাওড়, শান্তিমাইর জুম, ১২৭৯ মোকামপুঞ্জি, ১২৮০ শ্রীপুর, ১২৮১ ছাগল খাউরী, ১৮৮২ মিনাটিলা, ১২৮৩ রাবার বাগান, লম্বাটিলা, ১২৮৪ কেন্দ্রী হাওড়, ডিবির হাওড়, ১২৮৫ ডিবির হাওড় ফরিদের বাড়ি এলাকা, ১২৮৬ রিভার পিলার (ডিবির হাওড় আসামপাড়া), ১২৮৬ ঘিলাতৈল, ১২৮৭ তলাল, ফুলবাড়ী, ১২৮৮-১২৮৯ টিপরাখলা, ১২৯০ করিমটিলা, কমলাবাড়ী, ১২৯১-১২৯২ ভেতরগোল, ১২৯৩-১২৯৪-১২৯৫ গোয়াবাড়ী, বাইরাখেল, ১২৯৬ হর্নি এলাকা দিয়ে প্রবেশ করছে ভারতীয় চোরাচালান পণ্য।
এসকল পণ্য থেকে প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে চোরাকারবারীদের কাছ থেকে লাইন ম্যানেজের নামে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ঢাকার বাসিন্ধা সামদ ও আরমানের বিশ্বস্থ সহচর বিজিবির সোর্স বা লাইনম্যান নামে পরিচিত আব্দুল করিম ওরফে বেন্ডিজ করিম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মির্জান আহমদ রুবেল, ইউপি সদস্য মো. মনসুর আহমদ, মাসুম আহমদ সুজন, মো. জাকারিয়া।
বিগত কয়েক মাসে জৈন্তাপুরে উপজেলায় গোপন সংবাদের ভিত্তিত্বে পুলিশ ও সোনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে অভিযান পরিচালনা করে বিপুল সংখ্যাক মাদক আটক করা হয়।
বিগত দিন থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত এই চক্রের সদস্যরা উপজেলা সীমান্ত পথের চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করছেন। তারা সময়ের সাথে সাথে রূপের পরিবর্তন ঘটিয়ে তাদের চোরাচালান বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করেন। উপজেলাজুড়ে তাদের চোরাচালান ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ট্রামকার্ড হিসাবে প্রয়োগ করতে এই চক্রের সদস্যরা তাদের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
৫ আগস্টের পর সরকার পরিবর্তন হলে চক্রের সদস্যদের আর ডেবিট কার্ডের প্রয়োজন হয়নি। তারা আধিপত্য বিস্তার করে সীমান্তের চোরাচালান ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। গত ১১ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত ১১টায় ১২৮০-১২৮১ পিলারের মধ্যবর্তী বানানঘাট এলাকায় মহিষের চালান নিয়ে আসার প্রক্কালে পাথর উত্তোলনকারী শ্রমিকদের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। চোরাকারবারীদের হামলায় চারজন পাথর শ্রমিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।
এলাকার সচেতন মহল জানান, সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান ব্যবসার কারনে উপজেলাজুড়ে মাদক ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে উঠতি বয়সি যুব সমাজ মারাত্মক হারে মাদকের ছোবলে পড়ে তরুণ প্রজন্ম ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে।
জৈন্তাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাফিজ বলেন, জৈন্তাপুর এলাকা দিয়ে যেভাবে চোরাচালানের মাধ্যমে মাদকসহ বিভিন্ন পণ্য প্রবেশ করছে, তাতে যুব সমাজ ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। যুব সমাজকে রক্ষায় চোরাচালান বন্দ না করা গেলে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করবে জৈন্তাপুর। সেই সাথে চোরাচালানের মদদদাতাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
জৈন্তাপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাশার মোহাম্মদ বদরুজ্জামান বলেন, ‘জৈন্তাপুরে যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মাদকসহ চোরাচালান পণ্য আটক করা হয়েছে। সেই অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
(ঢাকাটাইমস/১৭ফেব্রুয়ারি/এজে)

মন্তব্য করুন