সালথায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা-আগুন, আহত-১০

ফরিদপুরের সালথায় বিএনপির ইফতার মাহফিলে যোগ দেওয়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষের সময় নিএনপি নেতাকর্মীদের বসতবাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের মুরুটিয়া গ্রামে এই সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটে। এতে উভয় গ্রুপের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, গত ১৫ বছর ধরে মাঝারদিয়া ইউনিয়নের মুরাটিয়া গ্রাম নিয়ন্ত্রণ করে আসছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আফছার মাতুব্বর ও তার ছেলে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাজমুল মাতুব্বর। তাদের ক্ষমতার দাপটে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা নিস্ক্রিয় ছিল। তবে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর বিএনপি নেতাকর্মীরা সক্রিয় হয়ে উঠে।
সম্প্রতি রোজার মধ্যে পাশের খলিশপট্টি গ্রামে স্থানীয় বিএনপির উদ্যোগে একটি ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ। ওই ইফতার মাহফিলে স্থানীয় ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি হারুন মিয়ার ছেলে মিন্টু মিয়ার নেতৃত্ব শতাধিক সমর্থক যোগ দেন। এরপর থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। উত্তেজনার মধ্যে বৃহস্পতিবার সকালে আওয়ামী লীগ নেতা আফছার মাতুব্বরের সমর্থক আজিজুল শেখকে (৪০) কুপিয়ে জখম করে বিএনপি নেতা মিন্টুর সমর্থকরা।
এ ঘটনার পর বিকালে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যা পর্যন্ত দফায় দফায় চলে এ সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। সংঘর্ষের সময় আওয়ামী লীগ সমর্থকরা বিএনপি নেতা মিন্টুর বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে ও আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে হামলা পাল্টা হামলা চালিয়ে উভয় গ্রুপের ১০ থেকে ১২টি খড় ও পাটখড়ির গাদায় আগুন দেয়া হয়। এতে উভয় গ্রুপের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিএনপি নেতা মিন্টু মিয়া বলেন, রোজার ভেতর স্থানীয় খলিশপুট্টি মাঠে ইউনিয়ন বিএনপি ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিএনপি নেত্রী শামা ওবায়েদ এসেছিলেন। ওই ইফতারে আমি গ্রাম থেকে বিএনপির সমর্থকদের নিয়ে যাওয়ায় আমার ওপর আফছার চেয়ারম্যান ও তার ছেলে নাজমুল ক্ষিপ্ত হয়। এরপর থেকে আমার দলের লোকজনদের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে বাধা দেন আফছারের সমর্থকরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাস্তা দিয়ে হাটতে ফের বাঁধা দেয়ায় সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পরে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা আমার বাড়িঘর ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে। এ ছাড়া আমার সমর্থকদের বাড়িতেও হামলা চালিয়েছে তারা।
আওয়ামী লীগ নেতা আফছার মাতুব্বরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি তার ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। তবে আফছারের সমর্থক বেলায়েত মোল্যা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে গ্রামের বিএনপি নেতা মিন্টু মিয়া ও ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি সাবেক ইউপি সদস্য টিটুল মিয়া আমিসহ অনেকের কাছে টাকা চায়। তারা বলেন, এলাকায় থাকতে হলে টাকা দিয়ে থাকতে হবে। আমাদের সমর্থক আজিজুলের কাছেও টাকা চায়। কিন্তু টাকা না দেওয়া ওরা তাকে কুপিয়ে জখম করে। পরে আমরা জোটবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করি।
সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান বলেন, সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। আওয়ামী লীগ সমর্থক আজিজুলকে কোপানোর পর সংঘর্ষ হয় এবং বিএনপি নেতা মিন্টুর বাড়িতে হামলা ও আগুন দেওয়া হয় বলে জানতে পেরেছি। (ঢাকাটাইমস/০৩এপ্রিল/এমআর)

মন্তব্য করুন