জটিল রোগ নিরাময়ে অব্যর্থ দাওয়াই ভেষজ আনারস

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:২৮
অ- অ+

বাজারে গ্রীষ্মকালের অন্যান্য ফলের সঙ্গে আলো করে রয়েছে আনারস। দুপুরে আয়েশ করে বসে বিট লবণ মাখিয়ে আনারস খাওয়া হচ্ছে। কিংবা আনারস দিয়ে তৈরি হচ্ছে চাটনি। আনারসের টক-মিষ্টি স্বাদ মনখারাপ এক নিমেষে কাটিয়ে দেয়। তবে শুধু মন নয়, শরীরেরও যত্ন নয় আনারস। এই ফলের গুণেই অনেক শারীরিক সমস্যা দূরে চলে যায়।

আনারস বহুবর্ষজীবী ভেষজ উদ্ভিদ যার বৈজ্ঞানিক নাম আনানাস কমোসাস। গবেষকদের ধারণা আনারসের উৎপত্তিস্থল ব্রাজিলে। আনারস উৎপাদনে লিডিং দেশগুলোর মধ্যে আছে কোস্টারিকা, ব্রাজিল, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ইন্ডিয়া।

পাইনগাছের শক্ত, শুষ্ক ফল অর্থাৎ ‘কোন এর সঙ্গে ইউরোপবাসী আনারসের সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছিল। সে কারণে দক্ষিণ আমেরিকায় ইউরোপের অভিযাত্রীরা প্রথম এই ফল দেখে নাম রেখেছিল পাইনাপল (পাইন+আপেল)। সেটা ষোড়শ শতকের কথা। তখনকার অপরিচিত ফল আনারস এরপর খুব অল্প সময়েই সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

গবেষণায় দেখা গেছে, আনারস এবং এর যৌগগুলো ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। শরীরের অনেক সমস্যা দূর করতে সুস্বাদু রসালো ফল আনারস সিদ্ধহস্ত। আনারস হচ্ছে ঔষধিগুণসম্পন্ন ফল। যা একাধিক স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে বাঁচাতে পারে। বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় এই ফলটি সারাবছরই কমবেশি পাওয়া যায়।

আনারসে রয়েছে রোগ-প্রতিরোধী অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট। যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আনারসের জুড়ি মেলা ভার। আনারস শরীরে পুষ্টির অভাব দূর করে। আনারসে ক্যালোরির পরিমাণও নেই বললেই চলে। যারা ওজন কমাতে চাইছেন, প্রতিদিনের পাতে রাখতে পারেন আনারস। ওজন থাকবে নিয়ন্ত্রণে।

ক্যানসার প্রতিরোধী

মানুষের দেহের কোষের ওপর ফ্রি-রেডিকেলের বিরূপ প্রভাবে ক্যানসার এবং হৃদরোগের মতো মারাত্মক রোগ দেখা দিতে পারে। আনারস ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণা থেকে জানা গেছে৷ গবেষণায় দেখা গেছে, আনারস এবং এর যৌগগুলো ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। এই যৌগগুলোর মধ্যে একটি হলো ব্রোমেলাইন নামক হজম এনজাইমের একটি দল। টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় দেখা গেছে, ব্রোমেলাইন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতেও সহায়তা করতে পারে। দুটি টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় দেখা গেছে, ব্রোমেলাইন স্তন ক্যান্সারের কোষের বৃদ্ধি ঠেকাতে এবং ধ্বংস করতে সক্ষম। অন্যান্য টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় দেখা যায়, ব্রোমেলাইন ত্বক, পিত্ত নালী, গ্যাস্ট্রিক সিস্টেম এবং কোলনসহ অন্যান্য অঞ্চলের ক্যান্সারও দমন করে। টেস্ট-টিউব এবং প্রাণী গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রোমেলাইন ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি দমন করতে এবং ক্যান্সার কোষগুলো নির্মূল করতে সাদা রক্ত কোষকে আরও কার্যকর করে। আনারস শরীরের ইমিউন কোষগুলোকেও সক্রিয় করে তোলে৷ দেহের কোষের ওপর ফ্রি-রেডিকেলের বিরূপ প্রভাবে ক্যানসার রোগ দেখা দিতে পারে। দেশি আনারসে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন-সি যা দেহকে ফ্রি-রেডিকেল থেকে আমাদের দেহকে মুক্ত রাখতে সাহায্য করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে উপকারী

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনারস বেশ কার্যকরি। আপনার ডায়াবেটিস আছে বলে আনারস খাওয়া বন্ধ করবেন না ৷ এটি নিয়ন্ত্রণের অনেক ভালো উপায় রয়েছে । বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সকালের খাবারে পরিবর্তন আনলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায় । ওষুধ ও শারীরিক ব্যায়ামের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায় ।

হজমের গোলমাল কমে

হজমের সমস্যা বাঙালির রোজের সঙ্গী। পেটের গোলমাল হলেই অ্যান্টাসিডের খোঁজ পড়ে। তবে এই সমস্যা হাতের মুঠোয় রাখতে আনারস কার্যকরী। আনারসে রয়েছে ব্রোমেলেইন, যা হজমে সহায়কারী উৎসেচক ক্ষরণ বৃদ্ধি করে। পেট ফাঁপা এবং অন্যান্য অস্বস্তির দাওয়াই হতে পারে আনারস।

প্রদাহজনিত সমস্যা দূর করতে

আনারসে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান। প্রদাহজনিত যেকোনও সমস্যা নিরাময়ে আনারস দারুণ কার্যকরী। আনারসে ব্রোমেলাইন থাকায়, প্রদাহনাশক হিসাবে আনারস ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে আর্থ্রাইটিস, সাইনাসের ক্ষেত্রে আনারস খুব উপকারী।

পানিশূন্যতা রোধে

শরীরে পানির ঘাটতি কমাতে খেতে পারেন আনারস। এই ফলে পানির পরিমাণ বেশি। আনারস শরীরের অতিরিক্ত সোডিয়াম শোষণ করে। পেট ফাঁপার মতো সমস্যা থেকে রেহাই পেতে আনারসের ভূমিকা সত্যিই অভাবনীয়।

হার্ট ভাল রাখতে

আনারস রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট উপাদান, যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ কমিয়ে হার্টের যত্ন নেয়। তা ছাড়া ভিটামি সি থাকায় আনারস রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। হার্ট সংক্রান্ত রোগের ঝুঁকিও কমায় আনারস।

সর্দি-কাশি-জ্বর থেকে রক্ষা করে

বছরের মধ্যে বেশির ভাগ দিনই সর্দি-কাশি, জ্বরে ভোগেন অনেকে। আনারসের রস খেয়ে দেখুন। আনারসে রয়েছে ভিটামিন সি, যা ঠান্ডা লাগার ধাত কমায়! ফলে একটুতেই সর্দি-কাশি-জ্বর বাঁধিয়ে বসার ভাবনা থাকে না!

রক্ত জমাটে বাধা দেয়

দেহে রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয় এই ফল। ফলে শিরা-ধমনির (রক্তবাহী নালি) দেয়ালে রক্ত না জমার জন্য সারা শরীরে সঠিকভাবে রক্ত যেতে পারে। হৃৎপিণ্ড আমাদের শরীরে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে। আনারস রক্ত পরিষ্কার করে হৃৎপিণ্ডকে কাজ করতে সাহায্য করে।

সংক্রমণ দমন করে

আনারসে রয়েছে ব্রোমেলিন এনজাইম, যা সংক্রমণ দমন করে৷নিয়মিত আনারস খেলে খেলাধুলা করতে গিয়ে পাওয়া আঘাত বা ক্ষত সহজেই সেরে যায়৷

ওজন কমায়

শরীরের ওজন কমাতে হাতের কাছে রয়েছে আনারস! এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। নিয়মিত এই ফলের রস খান, এতে ক্যালোরির পরিমাণও খুব সামান্য। ফ্যাট না থাকায় এই রস তাড়াতাড়ি ওজন কমাতে সহায়তা করে।

(ঢাকাটাইমস/১৩ এপ্রিল/আরজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
এপ্রিলের ২৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ২৬০ কোটি ৭৬ লাখ ডলার
নির্ধারিত সময়ের দুই মাস আগেই সব দেনা পরিশোধ করল পেট্রোবাংলা
ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব: অর্থ উপদেষ্টা
উপদেষ্টাদের সঙ্গে পুলিশের মতবিনিময়, বিভিন্ন প্রস্তাব বাস্তবায়নের আশ্বাস
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা