পোষা সাপের দংশনে মৃত যুবকের প্রাণ ফেরাতে রাতভর ঝাড়ফুঁক

‘দুধ-কলা দিয়ে কালসাপ পোষা’। এই বাংলা প্রবাদই দিনাজপুরের খানসামায় বাস্তবে রূপ নিল। নিজের পোষা গোখরা (গোমা) সাপের কামড়ে প্রাণ গেল শাকিল ইসলাম (৩১) নামের এক যুবকের।
দিনভর গুনিক-ওঁঝার ঝাড়ফুঁকে কাজ না হওয়ায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কিন্তু পরিবারের বিশ্বাস ছিল শাকিলের প্রাণ ফিরে আসবে ঝাড়ফুঁকেই। তাই শত শত মানুষের চোখের সামনে রাতভর চলে নানা গুনিক-ওঝাঁর কসরত। আজ বুধবার (২৩ এপ্রিল) সাঙ্গ হয় সব।
খানসামা উপজেলার খামারপাড়া ইউনিয়নের গারপাড়া পেশার মেম্বারপাড়ায় এই ঘটনা ঘটে। এর আগে মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) এই গ্রামেরই বাসিন্দা ফরমাজ আলীর বড় ছেলে শাকিল ইসলাম নিজ বাড়িতে তার পোষা গোখরায় দংশিত হন।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, শাকিল পেশায় একজন গুনিক (মাহান) ছিলেন এবং বিভিন্ন ধরনের সাপ নিয়ে খেলা করতেন। গত রমজানের আগে তিনি একটি গোখরা সাপ ধরে এনে বাড়িতে লালন-পালন করছিলেন। ওই সাপই মঙ্গলবার দুপুরে তাকে দংশন করে।
প্রথমে শাকিল বিষয়টি গোপন রেখে নিজেই বিষ নামানোর চেষ্টা করেন। পরে পরিবারের সদস্যরা বুঝতে পেরে তাকে একজন অভিজ্ঞ গুনিকের কাছে নিয়ে যান। কিন্তু তাতেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় দ্রুত দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সন্ধ্যায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শাকিলের মৃত্যু নিয়ে এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয় চাঞ্চল্য। তাকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণার পরও পরিবারের সদস্যরা বিশ্বাস করেন, হয়তো শাকিলের প্রাণ ফিরে আসবে। সেই বিশ্বাসে রাতভর ওঁঝা ও গুনিক দিয়ে ঝাড়ফুঁক করানো হয়। সেটি দেখতে এলাকাবাসীর উপচে পড়া ভিড় জমে সেখানে। কিন্তু শাকিলের পরিবারের বিশ্বাস সত্যি হয়নি। আজ বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকালে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
এলাকাবাসী জানায়, এর আগেও পোষা সাপটি শাকিলকে কামড়েছিল, তবে সে সময় বড় কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু এবার সাপটির কামড় প্রাণঘাতী ছিল। শাকিলকে কামড় দেওয়া সাপটি পরে উত্তেজিত জনতা মেরে ফেলে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে খামারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক চৌধুরী বলেন, ‘“শাকিলকে বহু বছর ধরে চিনি, মাহানগিরি করতেন। অনেকবার তাকে সাপ নিয়েও খেলা করতে দেখেছি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সেই সাপ খেলাই শাকিলের জীবনের ইতি টানল।’
(ঢাকাটাইমস/২৩এপ্রিল/মোআ)

মন্তব্য করুন