জুলকারনাইন সায়েরের পোস্ট

রেলওয়েতে আওয়ামী সুবিধাভোগী সফিকুরের বিএনপি সাজার চেষ্টা, বড় পদ পেতে দৌড়ঝাঁপ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ২১:১৯| আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ২১:৫০
অ- অ+

বাংলাদেশ রেলওয়ের জনসংযোগ শাখার পরিচালক মোহাম্মদ সফিকুর রহমান। বিগত সরকারের সময়ে নিজেকে আওয়ামী পরিবারের সন্তান ও নামের সঙ্গে ছাত্রলীগ ট্যাগ লাগিয়ে বাগিয়ে নিয়েছেন রেলওয়ের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদ। তবে অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই কর্মকর্তা পুরোদমে বিএনপি বনে গেছেন। শুধু তাই নয়, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্টের (সিওপিএস) মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন তিনি। আর এ পদায়নের রেলওয়ে উপদেষ্টার কাছে প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার বিকালে প্রবাসী অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের এক ফেসবুক পোস্টে এসব তথ্য তুলে ধরেন। পোস্টে সফিকুরের পক্ষ হয়ে তৎকালীন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনকে দেওয়া তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের একটি চিঠিসহ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্টে (সিওপিএস) পদে পদায়নের প্রস্তাবনার পেপার জুড়ে দেন তিনি।

পোস্টে জুলকারনাইন সায়ের লিখেছেন, ‘মোহাম্মদ সফিকুর রহমান, বিগত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে রেলের অপারেশন বিভাগের যত গুরুত্বপূর্ণ পদ আছে, এর সবগুলোতেই দায়িত্ব পালন করেন।’

পোস্টে তিনি জানান, ‘প্রথমে ঢাকা অঞ্চলের টিকিট ব্যবসার নিয়ন্ত্রক পদ ডিসিও হন সফিকুর রহমান। ঈদের সময় মানুষ টিকিট না পেলেও, সফিকুর রহমান পুরো এক কামরা ফাঁকা রেখে ট্রেন চালিয়ে দেন। এছাড়া পূর্ণ মেয়াদ শেষ করার পর রেলভবনে পরিচালক (পরিবহন ও জনসংযোগ) দুটি দায়িত্ব কিছুদিন পালন করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর ফজলে কবীরের খাস লোক বলে পরিচয় দিতেন এবং তার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠে। তখন তার চোখ পড়ে রেলের ঢাকা অঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ ডিআরএম পদের দিকে। এই পদটিতে রেলের ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল, অপারেশনসহ যতগুলো বিভাগ আছে, সবগুলো বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদেরই পাওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু সবাইকে টেক্কা দিয়ে সফিকুর রহমান পদটি বাগিয়ে নেন। এর কারণ, তার জন্য তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন সরাসরি চিঠি দেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনকে।’

জুলকারনাইন সায়ের আরও বলেন, ‘২০২২ সালের ২৬ জানুয়ারি নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন তার চিঠিতে সফিকুর রহমানকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্রিয় ছাত্রলীগ কর্মী বলে পরিচয় দেন। সফিকুরের বাবা নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সক্রিয় সদস্য বলে উল্লেখ করেন। অতীতে আওয়ামী লীগের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় তার পরিবারের সদস্যরা রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল বলেও সাক্ষ্য দেন তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী। এর পরের মাসেই সফিকুর রহমানকে গুরুত্বপূর্ণ ডিআরএম পদে নিয়োগ করা হয়। ফ্যাসিবাদের পতনের পরও ডিআরএম পদে মেয়াদ শেষ করেন সফিকুর রহমান। এ সময় তার যাতে কোনো সমস্যা না হয় এবং ভালো কোথায় পদায়ন করা হয় তার জন্য রেলের তৎকালীন ডিজি সরদার সাহাদাত আলীর কাছে একাধিকবার তদবির করেন নরসিংদীর এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন। এবার সফিকুর পুরোদস্তুর বিএনপি বনে গেছেন। এরপর তাকে পদায়ন করা হয় অতিরিক্ত প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা পদে।’

দীর্ঘ পোস্টে এই অনুসন্ধানী সাংবাদিক লিখেন, ‘তবে সফিকের এভাবে ডিগবাজির কারণে রেলের বিএনপি-জামায়াতপন্থি কর্মকর্তারা কিছুটা ক্ষুব্ধ ছিলেন। তাকে গত ১৭ এপ্রিল কিছুটা কম গুরুত্বপূর্ণ পরিচালক জনসংযোগ পদায়ন করা হয়। কিন্তু এক সপ্তাহও হয়নি। এরই মধ্যে সফিকুর রহমানকে রেলের পূর্বাঞ্চলের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট (সিওপিএস) পদে পদায়নের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যেকোনো সময় রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সই করলেই তা আদেশে পরিণত হবে। রেলের কর্মকর্তারা বলছেন, সফিকুর রহমান রেলওয়ে বাণিজ্যিক ক্যাডারের চতুর্থ গ্রেডের কর্মকর্তা। আর সিওপিএস হচ্ছে তৃতীয় গ্রেডের এবং সমপর্যায়ের পদগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়। ফলে সফিকুর রহমান নিম্ন গ্রেডের অফিসার হয়ে পদোন্নতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন।’ পোস্টে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘রেলের কর্মকর্তারা জানান, রেলের পূর্বাঞ্চলের সিওপিএস হিসেবে বর্তমানে কর্মরত আছেন মো শহীদুল ইসলাম। তিনি সফিকুরের চেয়ে সিনিয়র কর্মকর্তা। তবে জামায়াতের রাজনীতিতে যুক্ত। ইচ্ছা করেই তিনি দীর্ঘদিন রাজশাহীতে চাকরি করেছেন। সেখানে আবাসন ব্যবসা, দুটি শো রুম ও অন্যান্য সম্পদ গড়ে তুলেছেন। এবার তিনি যেকোনো মূল্যে ঢাকায় আসতে চেয়েছেন। এ জন্যে জামায়াতের চট্টগ্রাম অঞ্চলের এক নেতাকে দিয়ে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ক্রমাগত চাপ দিয়ে যাচ্ছেন। এজন্যে শহীদুলকে সিওপিএস থেকে ঢাকায় রেলভবনে জেডিজি অপারেশন পদের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আর জেডিজি অপারেশন পদে থাকা এস এম সালাহউদ্দিনকে সিওপিএস দেওয়া যেত। কিন্তু তার বাড়ী রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবীর খানের এলাকা সন্দ্বীপে হওয়ায় তাকে ঢাকার বাইরে বদলি করার সাহস পাচ্ছে না রেলের সচিব-ডিজি। আর এভাবেই রেলে আওয়ামী লীগের লোকজন বিএনপি হচ্ছে, পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতও চুলোচুলিতে ব্যস্ত আছে।’

(ঢাকাটাইমস/২৫এপ্রিল/এলএম/এমআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বরেণ্য সংগীতশিল্পী মুস্তাফা জামান আব্বাসী আর নেই
ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের দাবি পাকিস্তানের
সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলাম গ্রেপ্তার
ভারতে পাকিস্তানের সামরিক অভিযান: ‘অপারেশন বুনিয়ান উল মারসুস’ এর অর্থ কী?
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা