ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়ানোয় বাংলাদেশকে রাষ্ট্রদূতের ধন্যবাদ
ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এসওয়াই রমজান।
আইসিসি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। বিষয়টি উল্লেখ করে এতে বাংলাদেশের অবদান আছে বলে ধন্যবাদ জানান রাষ্ট্রদূত।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা প্রস্তুতকারী সাতটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে।
ফিলিস্তিন সংহতি দিবস উপলক্ষে শুক্রবার রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে ইউনাইটেড নেশনস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউএনএবি) আয়োজিত এক সিম্পোজিয়ামে বক্তব্য দিচ্ছিলেন রাষ্ট্রদূত।
বক্তব্যে ইসরায়েল কর্তৃক তার দেশে গণহত্যা, বাস্তুচ্যুতি ও অবিচারের অব্যাহত অপরাধের অবসানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে বিশ্বের সব দেশের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘ইসরাইলের ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের কারণে আমাদের ফিলিস্তিনি জনগণ যে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে তাতে আমাদের সকলকে একসাথে কাজ করা প্রয়োজন। আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও বাস্তুচ্যুতির চলমান অপরাধের প্রতিবাদে সব দেশকেই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।’
ইউএনএবি ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রফেসর মনসুর মুসার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ মান্নান এবং ইউএনএবি মহাসচিব সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ এবং জলবায়ু কর্মী ফাতিহা আয়া।
ইসরায়েল কর্তৃক গাজার অভ্যন্তরে ইউএনআরডব্লিউএ-এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সমালোচনা করে ইউসেফ বলেন, ফিলিস্তিনিদের ৭০ শতাংশ মৌলিক চাহিদা যেমন খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং আরও অনেক কিছু করে থাকে জাতিসংঘের এ সংস্থাটি। তিনি বলেন, গত ৪৫ মাসে গাজায় ১৭ হাজার ৫শ’ শিশু ও ১২ হাজার নারীসহ ৪৫ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
ইউসুফ বলেছেন, ‘গাজার পরিস্থিতি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। তবে এটি বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়। পশ্চিম তীর এবং জেরুজালেমে ভূমি খালি করা এবং জাতিগত নির্মূলের লক্ষ্যেই এগুলো করা হচ্ছে।’
ইসরায়েলি কারাগারে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষকে অবৈধভাবে আটক রাখা হয়েছে, যেখানে তাদের নির্যাতন করা হয়, ঠিকমতো খাবার দেওয়া হয়না, যৌন নির্যাতন করা হয় এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের অসহায় মানুষের বিরুদ্ধে চরমপন্থী ইসরাইলি সরকার যুদ্ধাপরাধ করেছে। অথচ আমরা ন্যায় বিচার পাচ্ছিনা।’
ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত বলেন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের এখনই সময়। এবং সাধারণ পরিষদ এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত অবশ্যই সংঘটিত অপরাধগুলোর বিপক্ষে শাস্তির ব্যবস্থা করবে।
‘আন্তর্জাতিক আইনসহ বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ আমাদের পক্ষে থাকায় ফিলিস্তিন এখনো ন্যায়বিচারের আশা ছেড়ে দেয়নি’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, দশক পেরিয়ে যাওয়ার পরেও জাতিসংঘের প্রস্তাব বাস্তবায়ন হয়নি এবং এই ব্যর্থতা আরও গভীর হয়েছে। যে কারেণ ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্ভোগ ও কষ্টের ভয়াবহ মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ইউসেফ ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর নির্যাতনের জন্য জাতিসংঘের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করে বলেছেন, গত ৭৭ বছর আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে বর্বর আগ্রাসনের মাধ্যমে ইসরায়েল যে অপরাধ করে আসছে সেটা আন্তর্জাতিক ব্যর্থতারই ফল।
‘গাজা এবং পশ্চিম তীরে আমরা আজ যা দেখছি তা এই নিষ্ক্রিয়তারই ফল’ উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘১৯৪৭ সালে জাতিসংঘে একটি প্রস্তাব ১৮১ (II) গৃহীত হয়েছিল যাতে প্যালেস্টাইনকে বিভক্ত করার আহ্বান জানানো হয়...এটি স্পষ্টতই একটি অন্যায্য প্রস্তাব। এবং ১৯৭৭ সালে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এই দিনটিকে 'আমাদের অধিকারের পূর্ণতাকে স্বীকৃতি দিয়ে ফিলিস্তিনি জনগণের সাথে সংহতি দিবস' হিসাবে ঘোষণা করেছিল।
ঢাকাটাইমস/৩০নভেম্বর/ইএস
মন্তব্য করুন