ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী রেজিয়া

নবীন চৌধুরী, ধামরাই (ঢাকা)
 | প্রকাশিত : ২০ জানুয়ারি ২০১৭, ১১:২০

নিজের বয়স কত হয়েছে তাও সঠিক করে বলতে পারেন না ঢাকার ধামরাই উপজেলার সানোড়া ইউনিয়নের বাসনা গ্রামের বিধবা রেজিয়া বেগম। স্বাধীনতার বছর খানেক আগে তার বিয়ে হয়েছিল। তখন বয়স ছিল প্রায় ১৫ বছর। বিয়ের দেড় বছরের মধ্যে তার একটি ছেলে ও একটি মেয়ে হয়। অস্বচ্ছল সাংসারে ছেলের বয়স যখন আট মাস তখন তার স্বামী আলমাস অজ্ঞাত রোগে মারা যান। ওই সময় রেজিয়া বেগম যুবতি থাকলেও ছেলে-মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আর বিয়ে করেননি।

স্বামীর রেখে যাওয়া একটু জমিতে যা আয় হতো তা দিয়ে সংসারও চলতো না। তখন থেকেই পরের বাড়িতে কাজ করে দুটি সন্তানের মুখে অন্ন তুলে দিতেন। অভাবের সংসারেই গত ২০ বছর পূর্বে ৪-৫শ টাকার দিয়ে একটি মাদী ছাগল কিনে তা লালন-পালন শুরু করেন। প্রতি ছয় মাস অন্তর অন্তর বাচ্চা দিতে শুরু করে। বাচ্চা বড় করে প্রতিবছর বাজারে বিক্রি করার পরও গত দুই বছর আগে ২টি পাঠাসহ ৩২টি ছাগল তার গৃহে থাকে। প্রশিক্ষণ না থাকার কারণে হঠাৎ করে অজ্ঞাত রোগে ৩১টিই মারা যায়। থাকে মাত্র একটি মাদি-ছাগল।

ছাগল মারা যাওয়ার পরে মনোবল ভেঙে পড়ে রেজিয়া বেগমের। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে, আর ছেলেও বউ নিয়ে অন্য বাড়িতে থাকে। শেষ বয়সে রেজিয়া বেগম জীবনসংগ্রামে একাই টিকে থাকতে হচ্ছে। দুঃচিন্তায় পড়ে যান রেজিয়া। তেমন মূলধনও নেই যে আবার ছাগল পালন শুরু করবে। ঠিক এসময় নিজ বাড়ির সামনেই কথা হয় সোসাইটি ফর ডেভেলপমেন্ট ইনিসিয়েটিভ (এসডিআই) নামে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার এক কর্মীর সাথে। পরে রেজিয়া বেগম ওই কর্মীর পরামর্শে সংস্থার সদস্য হন।

তিনি আবার ছাগল পালন করতে চায় এমন আগ্রহের কথাও জানান। পরে ওই উন্নয়ন সংস্থার কর্মী রেজিয়া বেগমকে ছাগল পালনের উপর উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে ২দিনের প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। প্রশিক্ষণ শেষে পল্লী সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর আর্থিক সহযোগিতায় এসডিআইয়ের প্রাণিসম্পদ ইউনিটের আওতায় পাঠা পালন প্রদর্শনীর মাধ্যমে ২টি ব্ল্যাক বেঙ্গল পাঁঠা ক্রয় করে দেয়া হয়। পাশাপাশি পাঠা-ছাগল থাকার জন্য ঘরের ভেতর একটি মাচাও তৈরি করে দেয়া হয়েছে। দুই বছরের মাথায় একটি থেকে বর্তমানে তার গৃহে রয়েছে বাচ্চাসহ ২০টি ছাগল- বেশির ভাগই মাদি।

এসডিআইয়ের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সার্বিক তত্ত্বাবধানে নিয়মিত টিকা প্রদান ও চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। যাতে করে ছাগল-পাঁঠার অকাল মৃত্যু না হয়। বর্তমানে রেজিয়া বেগম পাঁঠা দিয়ে প্রজজন ব্যবসাও করছেন। এ থেকে সে প্রতিদিন গড়ে একশ টাকা আয় করছেন।

একদিকে রেজিয়া ছাগল বিক্রি করে আয় করছেন। সে সাথে ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন।

অন্যদিকে দেশের মানুষের জন্য পুষ্টির চাহিদা পূরণেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। রেজিয়ার পরিকল্পনা আছে ভবিষ্যতে আরও চারটি পাঠা ক্রয় করে একটি বড় খামার করবেন।

(ঢাকাটাইমস/২০জানুয়ারি/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :