দিনাজপুরে পীর হত্যা: পাঁচ দিন আগে রেকি করে দুর্বৃত্ত

শাহ্ আলম শাহী, স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর
 | প্রকাশিত : ১৫ মার্চ ২০১৭, ১৭:০৬

দিনাজপুরে দরবার শরিফে কথিত পীর ফরহাদ হোসেন চৌধুরী ও তার গৃহকর্মী হত্যার পাঁচ দিন আগে থেকে এলাকাটি রেকি (পর্যবেক্ষণ) করেছিল দুবৃর্ত্তরা। স্থানীয় লোকজনের দাবি, সোমবার রাতে হত্যাকা-র আগে দুটি মোটরসাইকেলে করে পাঁচজনকে ওই এলাকায় চলাফেরা করতে দেখেছে তারা।

এ হত্যারহস্যের এখনো কোনো হদিস না পাওয়ায় এর সঙ্গে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা আছে কি না তা যাচাই করতে স্থানীয় লোকজনের দেওয়া তথ্যকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে পুলিশ। পীর হত্যার ঘটনায় আজ বুধবার ভোরে কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী থেকে ইসহাক আলী ( ২৮) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে কুড়িগ্রাম পুলিশ। এ ছাড়া সায়েদুল ও সুমি নামে দুজন মুরিদকে আটক করে ‘নজরদারিতে রেখে’ জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হত্যার কারণ বা কোনো সূত্র উদ্ধার করা যায়নি বলে জানান দিনাজপুরের পুলিশ সুপার মো. হামিদুল আলম।

এদিকে মঙ্গলবার রাতে বোচাগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেছেন নিহত পীরের মেয়ে ফাতেমা ফারহানা এ্যামি।

বুধবার সরেজমিনে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কথিত পীর ফরহাদের সঙ্গে সবার ভালো সম্পর্ক ছিল। রাজনৈতিক অঙ্গন ও মোটর মালিক সমিতিতে নিজের ভালো অবস্থান থেকে অনেক শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্কের সুবাদে অল্প সময়েই নিজের বেশ কিছু ভক্ত-অনুরাগী জুটে যায় তার। এলাকার লোকজনও তাকে ‘বাবা’ বলে ডাকত। একসময় বাড়িটি ‘দৌলা দরবার শরিফ’ নামে পরিচিতি লাভ করে আশপাশের মানুষের কাছে। সপ্তাহে এক দিন আনুষ্ঠানিকভাবে ‘জিকির-আজকার’ করতেন মুরিদরা। এ ছাড়া প্রায় দিনই সেখানে শতাধিক মুরিদ-ভক্ত জমায়েত হতেন এবং রাতভর চলত জিকির।

এলাকার পারুল বেগম বলেন, ‘পীর বাবা’র (ফরহাদ হোসেন) সঙ্গে এখানকার কারো কোনো বিরোধ ছিল না। এলাকায় সবার পছন্দের মানুষ ছিলেন তিনি। সোমবার (১৩ মার্চ) তাকে হত্যার আগে দুটি মোটরসাইকেলে পাঁচজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে অনেকেই চলাফেরা করতে দেখেছেন। তারাই এই হত্যাকা- ঘটাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’

একই এলাকার পারভীন বেগম নামের আরেকজন জানান, সন্ধ্যার দিকে দুটি মোটরসাইকেলে করে পাঁচজনকে আসতে দেখেছেন তিনি। তবে তাদের চিনতে পারেননি।

এদিকে দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পীর ও তার গৃহকর্মীর মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করেছেন দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আমির হোসেন। তিনি জানান, ফরহাদের শরীরে সাতটি আঘাত ও গুলির চিহ্ন রয়েছে। আর রূপালীর বুকে গুলি লেগেছে। তার শরীরেও অনেক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

এই জোড়া হত্যার ঘটনায় জেলা পুলিশ ছয় সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মাহফুজ জামান আশরাফ জানান, তাকে প্রধান করে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটির অন্যরা হলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মিজানুর রহমান, কাহারোল সার্কেল এএসপি রুহুল আমীন, ডিবির এসআই বজলুর রশিদ ও ফরিদ হোসেন এবং বোচাগঞ্জ থানার ওসি আরজু মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন। তারা ইতোমধ্যে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছেন বলে জানান তিনি।

গত সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বোচাগঞ্জ উপজেলার দৌলা গ্রামে কথিত পীর ফরহাদ হাসান চৌধুরী ও তার গৃহকর্মী রূপালী বেগমকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তিন দিন আগে সিরাজগঞ্জের শফিকুল ইসলাম নামের এক ‘মুরিদের’ সঙ্গে রূপালি বেগমের বিয়ে হয়।

দিনাজপুরের পুলিশ সুপার হামিদুল আলম জানান, এই ঘটনায় কোনো জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি শত্রুতামূলকভাবে তাদের হত্যা করা হয়েছে কি না সেটাও দেখছে পুলিশ।

ফরহাদ হোসেন চৌধুরী একসময় দিনাজপুর পৌর বিএনপির সভাপতি ছিলেন। পরিবহন ব্যবসার সুবাদে তিনি দিনাজপুর মোটর পরিবহন মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। আট বছর আগে তিনি হঠাৎ দাড়ি রেখে জুব্বা-আলখেল্লা পরে পীর বনে যান। গড়ে তোলেন বোচাগঞ্জ উপজেলার দৌলা গ্রাামে ‘কাদরিয়া মোহাম্মদিয়া দরবার শরীফ’ নামে খানকা। ‘দরবার শরীফের’ খাদেম সায়েদুল জানান, তিনি ও সুমি নামের ৫২ বছর বয়সী এক মুরিদ প্রতিদিনের মতো জিকিরে অংশ নিতে গিয়েছিলেন খানকায়। দীর্ঘক্ষণ ‘হুজুরকে’ ঘুমিয়ে থাকতে দেখে ডাকতে গিয়ে তার রক্তমাখা লাশ দেখতে পান। পরে পাশের রান্নাঘরে পাওয়া যায় রূপালীর লাশ।

সোমবার রাতে লাশ উদ্ধারের পর দরবার শরীফে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয় পুলিশ। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরা মঙ্গলবার ঘটনাস্থল ঘুরে আলামত সংগ্রহ করেন।

কথিত পীর ও তার নারী মুরিদের হত্যায় ইতিমধ্যে জোর তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে এখন অবধি মেলেনি কোনো ‘ক্লু’। জানা গেছে, বেশ কয়েকটি বিষয় সামনে রেখে অনুসন্ধান চালাচ্ছে পুলিশ। জঙ্গি সন্দেহের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত জীবনে কোনো বিরোধ ছিল কী না- সেসব বিষয়ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

প্রতিবেশী শামসুল মিয়া জানান, ফরহাদ হোসেন চৌধুরী পরিবার নিয়ে দিনাজপুর শহরের বালুয়াডাঙ্গায় থাকতেন। তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। সন্তানদের নাম আশিক, এ্যামি ও অর্ণব।

(ঢাকাটাইমস/১৫মার্চ/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :