ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাত্রলীগের কার্যক্রম স্থগিত
মন্ত্রী ও এমপির দ্বন্দ্বের জেরে সংঘর্ষে জড়ানোর ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাত্রলীগের যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিত করেছে ছাত্র সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সংসদ।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের এক জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত হয় বলে রবিবার রাতে সংগঠনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের এক জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে যে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখা কমিটির সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করা হলো। এবং সেই সাথে আপনাদের (মাসুম বিল্লাহ, সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখা ও মো. রাসেল মিয়া, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখা)-কে কেন সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না তা আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কারণ দর্শাতে নির্দেশ দেয়া হলো।
আরেক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের এক জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে যে, মো. মমিন মিয়া (যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখা)-কে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হলো।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে নবনির্মিত উপজেলা প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্রের উদ্বোধন করতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হকের রবিবার বিজয়নগর সফরে যাওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় আগেই। কিন্তু স্থানীয় সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে দাওয়াত না দেয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ এই সফরের বিরোধিতা করে। তারা কর্মসূচি বর্জনের পাশাপাশি মন্ত্রীর সফর ঠেকাতে হরতালের ডাক দেয়।
গোলযোগের আশঙ্কায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, বিজয়নগর, সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন করা হয় দুই প্লাটুন বিজিবি, র্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এবং দেড় শতাধিক পুলিশ।
এর মধ্যেই দুপুরে কঠোর নিরাপত্তায় বিজয়নগর যান মন্ত্রী ছায়েদুল হক। তিনি চান্দুরা ডাকবাংলো এলাকায় পৌঁছলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করে। পুলিশ বাধা দিলে বাঁধে সংঘর্ষ। এ সময় নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।
এর আগে বৃহস্পতিবার উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে মন্ত্রীর অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দেয়া হয়। সেই দিনই রবিবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করা হয়। এর মধ্যেই শুক্রবার মন্ত্রীর নামফলক ভাঙচুর ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনা ঘটে। শনিবার রাতে এনিয়ে ১২০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে থানায় মামলা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আওয়ামী লীগের দুই নেতার মধ্যে নাসিরনগরের সংসদ সদস্য মন্ত্রী ছায়েদুল হক এবং সদর আসনের উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর বিরোধের শুরু গত ইউপি নির্বাচনের মনোনয়ন নিয়ে। পরে নাসিরনগর হামলায় জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকারকে দায়ী করেন মন্ত্রী। এরপর আরও স্পষ্ট হয় বিভক্তি। এরপর আলাদাভাবে কাজ শুরু করেন ছায়েদুল-মোকতাদির। বেশকটি উপজেলা সফরে করেন মন্ত্রী। এরই ধারাবাহিকতায় রবিবার নবনির্মিত মৎস্য অফিস উদ্বোধনের পাশাপাশি সুধী সমাবেশের ডাক দেন ছায়েদুল হক। আর এসব কর্মসূচি প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে হরতাল ডাকেন মোকতাদির সমর্থকেরা। স্থায়ী ছাত্রলীগ ওবায়দুল মোকতাদিরের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
(ঢাকাটাইমস/২৩এপ্রিল/জেবি)