লাইব্রেরির একজন অভিভাবক

রাইয়ান বিন আমিন, জাবি
  প্রকাশিত : ১৯ মে ২০১৭, ২১:২৮| আপডেট : ১৯ মে ২০১৭, ২১:৫৯
অ- অ+

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. অজিত কুমার মজুমদার। ২০১৪ সালের ৬ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ছোট থেকেই লাইব্রেরির সংস্পর্শে বড় হওয়ার পাশাপাশি দেশে- বিদেশেও পেয়েছেন পড়াশোনার সুযোগ। এতে করে অনেক লাইব্রেরি খুব কাছ থেকে দেখেছেন। কিন্তু তার দেখা সেইসব লাইব্রেরির সাথে নিজ কর্মক্ষেত্রের লাইব্রেরির যেনো অনেক ফারাক। তাইতো দায়িত্ব পেয়ে আর বসে থাকতে পারেননি। নিজের চিন্তা আর বাস্তবের অভিজ্ঞতাকে নিয়েই শুরু করেন ঢেলে সাজানোর কাজ। সেই কাজ এখনো চলছে। সেইসাথে প্রতিনিয়ত বাড়ছে তার সফলতার গল্প।

ঢাকাটাইমসের সাথে আলাপচারিতায় অসংখ্য ঘটনার মাঝ থেকে স্মৃতি হাতড়িয়ে শোনালেন সেইসব অভিজ্ঞতা আর সফলতার গল্প। জানালেন, ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথাও।

অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মতো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্যও লাইব্রেরি একটি অপরিহার্য উপাদান। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচনালগ্নে এই অপরিহার্য উপাদানটি ছিল অনুপস্থিত। পরবর্তীতে ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি। মূল নকশা অনুযায়ী এর আয়তন প্রায় দুই লাখ বর্গফুট হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে এর আয়তন ৫৫ হাজার বর্গফুট। বিভিন্ন সময়ে এ আয়তন বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি। প্রতিষ্ঠার ৩৬ বছর পার করলেও নেয়া হয়নি সংস্কারের তেমন কোন উদ্যোগ। যার ফলে আসন সংকট, বই স্বল্পতা ও অব্যাবস্থাপনাসহ নানা সমস্যায় যখন জর্জরিত এই লাইব্রেরি- তখন এই দুরাবস্থা কাটানোর জন্য অজিত কুমার মজুমদারের হাতেই পরিচালনার ভার অর্পণ করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম।

অজিত কুমার মজুমদার বলেন, দেশে- বিদেশে পড়াশোনার সুযোগ পেয়ে বুঝতে পেরেছি লাইব্রেরি হচ্ছে- একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্র। একটি গ্লোবাল এরিয়া। এখানে শুধু নিজের বই পড়তে যায় না, পুরো বিশ্ব সম্পর্কে জানতে যায়। কারণ এখানে সব বই পাওয়া যায়।

দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথমেই আমি আমার ছাত্র জীবনে পড়ার কথা চিন্তা করি। আমি পড়ার জন্য লাইব্রেরির যেখানে বই থাকত, সেখানে চলে যেতাম। সেখান থেকে পছন্দমত বই পড়তাম। দেখেছি যারাই প্রথম থেকে নিয়মিত লাইব্রেরিতে আসা-যাওয়া করত তারাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

কিন্তু আমি দেখলাম, আমাদের লাইব্রেরিতে বইয়ের কাছাকাছি যেয়ে পড়ার সুযোগ নেই। আমি এটাকে পরিবর্তন করা দরকার বলে মনে করলাম। এজন্য ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদের টার্গেট করলাম, যাতে তারা বইয়ের কাছে আসতে পারে। কারণ এখান থেকেই সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ে। এজন্য নিচতলায় পড়ার ব্যবস্থা করে দেই, যাতে সবাই এসে পড়তে পারে। কেউ যাতে সিটের অভাবে ফিরে না যায়।

অন্যদিকে লাইব্রেরিতে আসার জন্য আমি শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে তাদের উদ্ধুদ্ধ করতে থাকি। অল্পদিনের মধ্যেই ফলাফল আসতে শুরু করে। প্রথমে একজন-দুইজন করে আসতে থাকে। এরমধ্যে বাংলা বিভাগের ৪৪তম আবর্তনের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা একদিন আমার কাছে আসে। তখন আমি তাকে তার বন্ধুদের লাইব্রেরিতে নিয়ে আসতে বলি। তখন তারা ৪০-৪৫ জন নিয়মিত আসতে থাকে। এছাড়া বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রচুর শিক্ষার্থী লাইব্রেরিতে পড়তে আসে, যা আগে আসতে পারত না। শিক্ষার্থীদের এমন আগ্রহের দিক বিবেচনা করে আমরা এখন সপ্তাহে সাতদিন লাইব্রেরি খোলা রাখছি।

বর্তমানে এই লাইব্রেরির আসন সংখ্যা ৫৭৬। গত তিন বছরে ৩৩০টি আসন বাড়ানো হয়েছে। আরও ১০০টি আসন বাড়ানো হবে। আর এর জন্য প্রয়োজনীয় চেয়ার-টেবিলেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

এদিকে আধুনিকায়নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, লাইব্রেরির বাকি কাজ শেষ করতে ৩০০ কোটি টাকার একটি প্রজেক্ট হাতে এসেছে। প্লান পাস করলেই বর্ধিত অংশের কাজ শুরু করা হবে। তখন লাইব্রেরিটি পরিপূর্ণ হবে। সেখানে থাকবে সেমিনার রুম, কনসালটেশন রুম, অডিও-ভিজুয়াল সেকশন, কিছু এলাকা থাকবে একদম নীরব আর কিছু থাকবে সবাই যাতে আলোচনার মাধ্যমে পড়তে পারে।

আধুনিকায়নের জন্য ‘কোহা’ নামক একটি সফট্ওয়্যারের মাধ্যমে সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে একটি ‘বারকোড’ সম্বলিত আইডেন্টিফিকেশন কার্ড দেয়া হবে- যেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর পূর্ণাঙ্গ বিবরণ থাকবে। প্রতিবার লাইব্রেরিতে প্রবেশের জন্য এই কার্ডটি স্ক্যান করা হবে। তাছাড়া সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে একটি করে ইউজার নেম এবং পাসওয়ার্ড সরবরাহ করা হবে। এই পাসওয়ার্ড ও আইডি ব্যবহার করে ঘরে বসে লাইব্রেরিতে থাকা বইয়ের লিস্ট দেখা যাবে। কোন শিক্ষার্থী বই নিয়ে তা নির্দিষ্ট সময়ে জমা না দিলে তার মোবাইলে সরাসরি জরিমানা চলে যাবে।

এছাড়া লাইব্রেরির সব বই স্ক্যান করে পিডিএফ আকারে সংরক্ষণ করার ভাবনাও চলছে। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই লাইব্রেরির সব বই পড়তে পারবে।

লাইব্রেরির দক্ষিণ পাশে একটি বুকস্টোর এবং ক্যান্টিন খোলার চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। রাস্তা থেকে লাইব্রেরি পর্যন্ত ফুলের গাছ লাগানো হবে এবং চারপাশ আলোকিত করা হচ্ছে। যাতে যে কাউকে আকর্ষণ করে। লাইব্রেরির ভেতরের পুরোটা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে পুরো লাইব্রেরি সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে। জেনারেটর আনা হয়েছে, কিন্তু এখনো পর্যন্ত তেলের ব্যবস্থা না হওয়ায় তা চালু করা যাচ্ছে না।

তবে উপাচার্য চেষ্টা করছেন যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে জেনারেটর চালু করা যায়। সেইসাথে পুরো লাইব্রেরি রং করা হবে।

তবে এসবের পাশাপাশি দক্ষ জনবলের অভাবকে দায়ী করে তিনি বলেন, লাইব্রেরিকে যেভাবে আধুনিকায়ন প্রক্রিয়ায় ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া চলতেছে সে অনুযায়ী লোকবলের অভাব রয়েছে। এখন যারা আছে, তাদের বেশিরভাগেরই কোন প্রাযুক্তিক জ্ঞান নেই। ফলে আমাদের কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে। আবার প্রশাসন কোন রকম প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে না।

তিনি বলেন, এখানে নিয়োগের ক্ষেত্রে যাদেরকে দিয়ে লাইব্রেরি ভালো চলবে তাদেরকেই নিয়োগ দিতে হবে। এমন কাউকে নিয়োগ দেয়া যাবে না যাতে তারা লাইব্রেরির জন্য বোঝা হন। তাতে বরং শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিই বাড়বে। আর বর্তমানে যারা আছে, তাদেরও ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে।

এদিকে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সব বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দায়িত্ব হল যাদের পড়ালেখা শেষ হয়ে গেছে চাকরি পাওয়ার আগ পর্যন্ত ওই সব শিক্ষার্থীর ফলোআপ করা। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা যেহেতু ত্রুটিপূর্ণ, সেজন্য তাদের এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে- যাতে তারা সব বিভাগে কাজ করতে পারে। এ ব্যর্থতার দায়ভার আমাদেরই নিতে হবে।

সবশেষে শিক্ষার্থীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, লাইব্রেরি এমন একটি জায়গা যেখানে থাকলে মন ভালো থাকে। তাই সবাইকে বলব তারা যাতে লাইব্রেরিমুখী হয়। আর তারা যে যেখানেই থাকুক না কেন সবাই যাতে সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে। সৎপথে থাকলে সফলতা আসবেই।

(ঢাকাটাইমস/১৯মে/প্রতিনিধি/এলএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
আশুলিয়ায় গণহত্যা ও ছয় লাশ পোড়ানো মামলায় ১৬ জনকে আসামি করে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগপত্র
উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তরুণদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে সরকার: রাবাতে আসিফ মাহমুদ
হজব্রত শেষে দেশে ফিরেছেন ৬৩ হাজার ১৮৮ হাজি
৭ জেলায় দুপুরের মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড় ও বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা