রাজশাহীতে বৃষ্টিতেও কমছে না তাপমাত্রা

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী
| আপডেট : ২৫ মে ২০১৭, ১০:৩৩ | প্রকাশিত : ২৫ মে ২০১৭, ০৯:৪৭

মার্চের প্রখর সূর্যতাপের ভেতরেই এবার বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে রাজশাহী অঞ্চলে। নিয়মিত ব্যবধানে বৃষ্টিপাত হচ্ছেই। তারপরেও কমছে না গরম। আবার তাপমাত্রার পারদ যতখানি না উঠছে, গরম অনুভূত হচ্ছে তার চেয়েও বেশি। আবহাওয়ার ভারসাম্যহীনতার কারণে এমনটি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক দেবল কুমার মৈত্র বলেন, ‘বৃষ্টিও হচ্ছে, গরমও পড়ছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে দিনে দিনে রাজশাহীর আবহাওয়া এমন ‘ভারসাম্যহীন’ হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতি এমন- এখনকার আবহাওয়াকে স্বাভাবিকও বলা যাবে, আবার অস্বাভাবিকও বলা যাবে।’

নদী-নালা, খাল-বিল পানিশূন্য হয়ে ওঠায় জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে জানিয়ে দেবল কুমার বলেন, ২০১০ সাল থেকে রাজশাহীর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদীর পানি শুষ্ক মৌসুমে একেবারেই কমে যাচ্ছে। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ওই বছর থেকেই আবহাওয়ায় বিরুপ প্রভাব পড়েছে। আর এ বছর আগাম বৃষ্টির সঙ্গে অতিরিক্ত গরম আবহাওয়ার ভারসাম্যহীনতারই বহিঃপ্রকাশ।

আবহাওয়া অফিস জানায়, সাধারণত জুন মাস থেকে বৃষ্টির মৌসুম শুরু হয়। বৃষ্টি হয় সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু এবার গত ৪ মার্চ থেকেই বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। এরপরেও তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। আর বাতাসের আদ্রতা খুবই কমে যাওয়ায় তাপের তীব্রতা অনুভূত হচ্ছে প্রায় ৪০ ডিগ্রির মতো। ফলে আগাম বৃষ্টিও তাপমাত্রায় কোনো ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারছে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি এখন পর্যন্ত দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এরপর ২০০৯ সাল পর্যন্ত রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৯ দশকি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

কিন্তু ২০১০ সাল থেকে রাজশাহীর তাপমাত্রা বিক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ওই বছর তাপমাত্রার পারদ ওঠে ৪২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ওই বছর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর ২০১৩ সালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ২০১১ সাল থেকে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে।

এদিকে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে বরেন্দ্র অঞ্চলে বিশেষ করে রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও তানোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর এবং নওগাঁর পোরশায় বার্ষিক বৃষ্টিপাত অর্ধেকে নেমে এসেছে। ২০০৪ সালে এসব এলাকায় ২ হাজার ৪৫১ দশমিক ৯০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল। কিন্তু ২০১৬ সালে এসব এলাকায় বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার মিলিমিটার। এরই মধ্যে এবার মৌসুম শুরুর আগেই বৃষ্টিপাত শুরু হলো।

এমনটি কেন, জানতে চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ২০১০ সালের পর রাজশাহী অঞ্চলে খরার প্রবণতা অতিমাত্রায় বেড়ে গেছে। আগাম খরা শুরু হয়ে তার সময়কালও দীর্ঘ হচ্ছে। এতে ঋতু বৈচিত্র্যের পরিবর্তন হয়ে গেছে। যার কারণে আগাম বৃষ্টি দেখা যাচ্ছে। এটি আবহাওয়ার ভারসাম্যহীনতারই লক্ষণ।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম জানান, এবার গত ৪ মার্চ প্রথম বৃষ্টিপাত হয়। গত ২১ মে পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৮৫ দশমিক ৭ মিলিমিটার। এখন দক্ষিণ থেকে উত্তরে জলীয়বাষ্প উড়ে যাচ্ছে। এরপর হিমালয়ে ধাক্কা খেয়ে কিছু অংশ রাজশাহী অঞ্চলে ফেরত আসছে। এর প্রভাবে মাঝে মাঝে বৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় জলবায়ুর প্রভাবে এ অঞ্চলের তাপমাত্রা রুক্ষই থাকছে।

তিনি বলেন, ভূমিরূপের ক্রমবর্ধমান পরিবর্তন, পানিহীন পদ্মা, ভূ-গর্ভস্থ পানির অপরিকল্পিত ব্যবহার এবং জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি এ এলাকার ভূ-প্রকৃতির ক্রমাবনতি ঘটিয়ে চলেছে। এ কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ভবিষ্যৎ লক্ষণগুলো এখনই স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। এ অঞ্চলের জলবায়ুগত পরিবেশের বর্তমান পরিস্থিতি কোনভাবেই অনুকুল নয় বরং দিনকে দিন তা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে।

ঢাকাটাইমস/২৫মে/আরআর/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :