হাঁটুপানির নিচে টঙ্গী হাসপাতাল ও থানা

ইফতেখার রায়হান, টঙ্গী (গাজীপুর) প্রতিনিধি
| আপডেট : ২১ জুন ২০১৭, ১৯:৪৫ | প্রকাশিত : ২১ জুন ২০১৭, ১৯:৩৫

বৃষ্টির কারণে হাঁটু পরিমাণ পানিতে তলে গেছে টঙ্গী সরকারি হাসপাতাল। এর ফলে হাসপাতালটিতে স্বাভাবিক চিকিৎসাসেবা বিঘ্ন ঘটছে। পানিতে কারণে টঙ্গী মডেল থানাও জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে। থানার সামনের অংশ ও আশপাশ এলাকা পানিতে তলিয়ে আছে। এমন পরিস্থিতিতেই দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে এই চিত্র দেখা গেছে।

টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে দেখা গেছে, হাসপাতাল প্রাঙ্গণে পানি জমে আছে প্রায় এক ফুট। এছাড়া জরুরি বিভাগসহ হাসপাতালের বারান্দাতেও আধা ফুট পানি। হাসপাতালে প্রবেশ পথে খানাখন্দ মিলে পানির গভীরতা প্রায় দেড়ফুট। এমন পরিস্থিতিতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে টঙ্গীবাসীর একমাত্র সরকারি এই হাসপাতালটিতে ভর্তি হওয়া রোগী ও তাদের স্বজনদের।

গত দুইদিন ধরে হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়েছেন কলেজগেট এলাকার ফল ব্যবসায়ী আবুল কালামের মা। অসুস্থ মায়ের জন্য খাবার, প্রয়োজনীয় ওষুধ আনতে তাকে প্রতিদিন অন্তত চার থেকে পাঁচ বার নোংরা ও দূষিত পানি ঘেঁটে চলাচল করতে হচ্ছে।

আবুল কালাম জানান, দূষিত পানির কারণে তার পায়ে চুলকানি দেখা দিয়েছে। এছাড়া সর্দি-কাশিতেও আক্রান্ত হয়েছেন। অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘শুধু তার মায়ের চিকিৎসাই নয়। হাসপাতালেরও চিকিৎসা জরুরি।’

সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, হাসাপাতালের জরুরি বিভাগে জলাবদ্ধতার কারণে এক মূমূর্ষ রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিতে না পেরে কয়েকজন মিলে ওই রোগীকে কোলে তুলে নিয়ে অন্তত চারশ ফুট দূরত্বের জলাবদ্ধতা পার হওয়ার চেষ্টা করছেন। এছাড়াও একজন গুরুতর অসুস্থ নারী জলাবদ্ধতার কারণে হাসপাতালে প্রবেশ করতে না পেরে অটোরিকশায় বসে কাতরাচ্ছেন। দূষিত পানি ও আশপাশের এলাকার স্যুয়ারেজের পানির সঙ্গে বিভিন্ন শিল্প কারখানার বিষাক্ত পানি মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। গাজীপুরে শিল্পের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে খ্যাত জনবহুল টঙ্গী ৫০শয্যা বিশিষ্ট সরকারি হাসপাতলের চিত্র এটি।

চলতি বছর বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে এমন দৃশ্য প্রায়ই দেখা যাচ্ছে। এ যেন দেখার কেউ নেই। অথচ টঙ্গী ৫০শয্যা বিশিষ্ট সরকারি হাসপাতালকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা দিয়ে ইতোমধ্যে হাসপাতালের জন্য আট তলা বিশিষ্ট একটি ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। কোটি টাকা ব্যয়ে এ ভবন তৈরি করা হলেও হাসপাতালে প্রবেশের সড়কটি অবহেলিত রয়ে গেছে।

টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. পারভেজ হোসেন জানান, হাসপাতালে জলাবদ্ধতা নতুন ঘটনা নয়। বিগত দিনে বেশ কয়েকবার জেলা সিভিল সার্জনের মাধ্যমে এ বিষয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কিন্তু অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। হাসপাতালের ড্রেনেজ ব্যবস্থা তদারকির কাজ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ করে থাকেন বলেও তিনি জানান।

অপরদিকে, জলাবদ্ধতা যেন স্থায়ী রূপ নিয়েছে টঙ্গী মডেল থানায়। সামান্য বৃষ্টিতেই টঙ্গী মডেল থানা প্রাঙ্গণ ও থানায় প্রবেশ সড়কটি জলে থৈ থৈ করে। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে থানায় প্রবেশের সড়কে দুই ফুটেরও বেশি পানি জমে আছে। থানার মূল ফটকে প্রায় দেড় ফুট ও থানা প্রাঙ্গণ প্রায় এক ফুট পানির নীচে তলিয়ে আছে। থানা সড়কের পূর্ব দিকে কালভার্টটি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভেঙ্গে গেছে। রমজানের শুরুতে কালভার্ট মেরামত করা হলেও সপ্তাহ না যেতেই সেটি আবারো ভেঙ্গে পড়েছে।

এছাড়াও থানা সড়কটি স্টেশনরোড-কালিগঞ্জ সড়ক থেকে প্রায় এক ফুট নীচু হওয়ায় জলাবদ্ধতা যেন ঠিকানা খুঁজে পেয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে কর্মরত পুলিশ সদস্যসহ থানায় সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ। অথচ স্টেশনরোড-কালিগঞ্জ সড়ক থেকে থানার মূল ফটক পর্যন্ত সড়কটির দূরত্ব মাত্র ৩০০ ফুট। এছাড়াও খানাখন্দের কারণে এ সড়কের কোথাও কোথাও পানির গভীরতা আরও বেশি। ফলে অহরহ ট্রাক-পিকআপ, রিকশা ও মোটরসাইকেল উল্টে গিয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব খানাখন্দে পরিবহন আটকে গিয়ে যান চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে।

অথচ টঙ্গী মডেল থানার পুরাতন ভবন ভেঙ্গে বহুতল বিশিষ্ট একটি আধুনিক মডেল থানা গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু জলাবদ্ধতার কারণে সরকারের এ উন্নয়ন ম্লান হয়ে গেছে। আধুনিক টঙ্গী মডেল থানায় জলাবদ্ধতা এখন একটি বিষফোঁড়ায় পরিণত হয়েছে।

টঙ্গী সরকারি হাসপাতাল ও থানার আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টঙ্গী সরকারি হাসপাতাল ও থানায় প্রবেশের সড়কটি বিগত দিনে সংস্কার করা হলেও রাস্তা উঁচু করা হয়নি। এছাড়াও স্টেশনরোড-কালিগঞ্জ সড়কের দক্ষিণ দিক উত্তর দিকের চেয়ে অন্তত এক ফুট উঁচু। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে দক্ষিণ দিকের পানি উত্তরদিকে প্রবাহিত হয়ে হাসপাতাল ও থানায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এছাড়াও স্টেশনরোড-কালিগঞ্জ সড়কের উভয়দিকে অপরিকল্পিতভাবে সরু ড্রেন নির্মিত হয়েছে।

টঙ্গী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার জানান, থানায় প্রবেশের সড়কে জলাবদ্ধতার কারণে শুধু পুলিশের নয়, সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষদেরও সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দূষিত ও বিষাক্ত পানির কারণে চর্মরোগ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়াও জলাবদ্ধতার কারণে থানার আশপাশের এলাকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। জলাবদ্ধতার বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সমস্যা নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এ বিষয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র এমএ মান্নান বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের ছয় মাস পর আমি মহানগরের সকল ড্রেন পরিষ্কারের পাশাপাশি নতুন ড্রেন নির্মাণের কাজ শুরু করেছিলেন। আমার আমলে গাজীপুর মহানগরের কোথাও কোনো জলাবদ্ধতা ছিল না। বিগত ২৮ মাস যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা উন্নয়নের নামে লুটপাট করেছে। এ জলাবদ্ধতার জন্য তারাই দায়ী। জলাবদ্ধতা নিরসন করে গাজীপুরবাসীকে একটি আধুনিক নগর উপহার দেয়ার আশা প্রকাশ করেন তিনি।

ঢাকাটাইমস/২১জুন/প্রতিনিধি/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :