কোনো মহামারির জন্য দায়ী নই: মেয়র আনিসুল
রাজধানীতে চিকুনগুনিয়ার বিস্তারে সিটি করপোরেশনের কোনো দায় নেই বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আনিসুল হক। তিনি বলেন, এই রোগের বাহক এডিস মশা জন্মায় বাসা বাড়ির ভেতরে। এর জন্য সিটি করপোরেশনকে দায়ী করা যায় না।
শুক্রবার দুপুরে গুলশানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ভবনে চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব এবং ডিএনসিসির কার্যক্রম নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মেয়র আনিসুল এ কথা বলেন।
গত কয়েক মাস ধরে ঢাকায় ব্যাপকভাবে চিকুনগুনিয়া রোগের বিস্তার হয়েছে। এই রোগ হলে ভুক্তভোগীর জ্বর ছাড়াও ব্যাপক গা ব্যথা হয়। এতে মৃত্যু না হলেও প্রচণ্ড ব্যথার কারণে অতিষ্ঠ হয় আক্রান্তরা।
চিকুনগুনিয়ার বিস্তারের জন্য খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সিটি করপোরেশনকে দায়ী করেছেন। তার অভিযোগ, করপোরেশনের মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পর্যাপ্ত নয়। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপনও সিটি করপোরেশনের ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে মেয়রের কাছে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী তার তার ব্যক্তিগত মত প্রকাশ করেছেন। এটা গণতান্ত্রিকভাবে সবার বলার অধিকার রয়েছে।’
তবে ঢাকা উত্তরের নগরপিতা বলেন, ‘কোটি কোটি মশা মুখের ডায়ালগে মেরে ফেলবেন, এটা ঠিক না। কোনো মহামারির জন্য ডিএনসিসি দায়ী না। চিকুনগুনিয়ার বাহক এডিস মশা ড্রেন বা নর্দমায় জন্মায় না। এটা পরিষ্কার পাত্রে জমে থাকা পানিতে জন্মায়। ভবনের আন্ডার কন্সট্রাকশন চৌবাচ্চায় জমে থাকা পানিতে জন্মায়।’
এডিস মশার প্রাদুর্ভাবে সিটি করপোরেশন দায় এড়িয়ে যাচ্ছে কি না জানতে চাইলে মেয়র বলেন, ‘এটার জন্য সিটি করপোরেশন দায়ী না, এর জন্য ঘরের ভেতর দায়ী। আর আমরা দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে চাই না, কারণ মশা মারা আমাদের দায়িত্ব। আমরা আজকে শুধু বিষয়টা ক্লিয়ার করতে চাই।’
মেয়র বলেন, ‘বাসা-বাড়ির ফ্রিজের ও এসির ট্রে, ছাদে, ফুলের টব, নতুন ভবনের চৌবাচ্চায় জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়ে, বংশ বিস্তার করে। আর এগুলো মূলত হয় বাসা-বাড়ির ভেতরে। আমাদের পক্ষে সম্ভব না আপনার বাসার ভেতর গিয়ে মশার ওষুধ দেবো। বাড়ির নিরাপত্তা প্রহরীদের অসহযোগিতা, বাসার ভেতর কীটনাশক প্রয়োগে মানুষের শ্বাসকষ্ট, চোখ ও চর্ম রোগের সংক্রমন এমন কি খাদ্রদ্রব্যে বিষক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাছাড়া বাসার ভেতর ফগিংয়ের (ধোঁয়া) কারণে অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে।’
মেয়র বলেন, ‘এডিস মশা খুবই সংবেদনশীল। কীটনাশক ছিটালে এটা মরে যায়। কিন্তু বাসা বাড়ির ভেতরে কীটনাশক প্রয়োগের প্রতিবন্ধকতা চিকুনগুনিয়ার অন্যতম কারণ। প্রচলিত টেমফস-৫০ইসি এডিস মশা নিধনে কার্যকর।’
সিটি করপোরেশন মূলত কিউলেক্স মশা নিধন করে জানিয়ে মেয়র দাবি করেন, তারা পর্যাপ্ত ওষুধ ছিটাচ্ছেন। আনিসুল বলেন, ‘আমার দ্বারা যতটুকু দরকার তার থেকেও বেশি ওষুধ দিচ্ছি। সরকারী প্রতিষ্ঠান প্ল্যান্ট প্রোটেকশান উইং (খামারবাড়ি), IEDCR (মহাখালী) এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (গাজীপুর) এই তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে তিনবার মশার ওষুধ পরীক্ষার পর ছাড়পত্র পেয়েই আমরা মশক নিধনে ব্যবহার করি।’
আনিসুল হক বলেন, ‘পাঁচদিন পর পর মশা নিধনের ওষুধ প্রয়োগের কথা কিন্তু আমরা তিনদিন পর পর প্রয়োগ করছি। অন্য সময়ের চেয়ে এটা দুই থেকে তিনগুণ প্রয়োগ চলছে। আমরা তিনটি ক্রাশ পোগ্রামের মাধ্যমে এটি করছি। ২১-২৭ মে- প্রথম সপ্তাহ, ১৭-২২ জনু-প্রথম সপ্তাহ, ০৩-১৬ জুলাই- (চলামান) দ্বিতীয় সপ্তাহ।
মশা নিধনে ডিএনসিসির ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিল ১১ কোটি টাকা আর ব্যায় ছিল সাত কোটি ৮০ লাখ টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বরাদ্দ বেড়ে হয় ১৭ কোটি টাকা আর ব্যায় করি ১৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা। গত অর্থবছরে বরাদ্দ বাজেট ছিল ২৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা আর ব্যায় হয় ১৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের বরাদ্দ ২৩ কোটি টাকা। তবে বর্তমানে যেভাবে মশা নিধনে ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে, তাতে এই বাজের বরাদ্দ বৃদ্ধি পাবে।’
মেয়র বলেন, ‘বর্তমানে মশা নিধনের জন্য ডিএনসিসির হস্তচালিত মেশিনের সংখ্যা ৩৮৭টি (বিগত দুই বছরে ২০০ টি ক্রয় করি), ফগার মেশিন ২৫৫টি (বিগত দুই বছরে ১১০ টি ক্রয় করি), হুইল ব্যারো মেশিন ১০টি (সম্প্রতি ক্রয় করা) এবং ভ্যাহিক্যাল মাউন্টেড ফগার একটি (সম্পতি জানুয়ারি ২০১৭ তৈরি)।
(ঢাকাটামস/১৪জুলাই/এএকে/জেডএ/ডব্লিউবি)