বিশ্বশান্তিতে ওআইসির স্বাধীন মানবাধিকার কমিশন

মোহাম্মদ জমির
 | প্রকাশিত : ০৬ আগস্ট ২০১৭, ১২:২৬

নানা কারণে মানবতাবোধের অভাব দেশে দেশে। মানবিক বিপর্যয়ের খবর মিলছে অনেক জায়গা থেকেই। এ কারণে বিশ্বজুড়েই সর্বজনীন মানবাধিকার বিশেষভাবে নজর কাড়ছে। এককভাবে কেন দেশই এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারছে না। তাই মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় এখন তিনটি দিক দেখা যাচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্যোগ যেমন থাকছে, আবার রাষ্ট্রকে জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়েও খেয়াল রাখতে হচ্ছে। অন্যদিকে যৌথ উদ্যোগে নিরাপত্তার দিকটিকেও যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হচ্ছে।

এই অবস্থায় আবার যারা মানবতার শত্রু তারা নানাভাবে, নিত্য-নতুন কূটকৌশল নিয়ে ঘোঁট পাকাচ্ছে। তারা সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ানোর কাজ সবসময়ই করে। তারা সামাজিক-সাংস্কৃতিক যে রীতি-নীতি তা ধ্বংস করার জন্য কাজ করে থাকে। যার মাধ্যমে সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়, যা আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক যে যোগসূত্র তার মাঝে বিভেদের দেয়াল তুলে দেয়।

বিশ্বজুড়েই আমরা এখন নানা মাত্রার সন্ত্রাস দেখতে পাচ্ছি। যার মাধ্যমে উগ্রবাদ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে। বাড়ছে ধর্মের অপব্যাখ্যা। এ সব কারণে জাতিগত দ্বন্দ্ব-সংঘাত বাড়ছে। জীবন বাঁচাতে সাধারণ মানুষ দেশান্তরী হতে চাইছে। যার কারণে উদ্বাস্তুর সংখ্যা বাড়ছে, যা থেকে আবার মানবিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি আরো বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে আমরা দেখেছি সিরিয়ার শিশু আয়লানের নিথর দেহ সমুদ্র সৈকতে উপুড় হয়ে আছে, যা পুরো বিশ্বের মানবতাবাদীদের চোখে জল এনে দিয়েছে।

এই যে এত এত সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ- বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তার উৎস আফ্রিকা, উত্তর আফ্রিকা এবং অবশ্যই মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ। যার ভুক্তভোগী আবার সেসব দেশের সাধারণ মানুষই। সিরিয়ার আয়লান কুর্দির কথা তো আগেই বলা হয়েছে। মুসলিম অধ্যুষিত আরব, আফ্রিকার বিশাল একটি অঞ্চল অস্থিতিশীল অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর কারণে। যার কারণে জীবননাশ হচ্ছে। মানবিক বিপর্যয়ের পরিস্থিতিও তৈরি হচ্ছে। গভীরে বিচার করলে সবকিছুর জন্য কিন্তু দায়ী পশ্চিমা পরাশক্তিরা। কোনোভাবেই দায় তারা এড়াতে পারবে না।

জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ঠেকিয়ে শান্তিময় পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে কোনো চেষ্টা যে নেই, তা কিন্তু বলা যাবে না। এর জন্য উদ্যোগ যেমন আছে পশ্চিমা কিছু দেশের, কাজ করছে জাতিসংঘ এবং তার অধীনে থাকা মানবাধিকার, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংস্থাগুলো। আবার মুসলিম রাষ্ট্রগুলোও বসে নেই। অরগানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশনের (ওআইসি) সদস্য দেশগুলো শান্তি উদ্যোগে শামিল আছে। তাই তো ওআইসির অধীনে থাকার ইনডিপেনডেন্ট পারমানেন্ট হিউম্যান রাইটস কমিশন (আইপিএইচআরসি) আরো সক্রিয় হতে চাইছে।

তারা শুধু মানবাধিকারের বিষয়ে সচেতনতার প্রচার নিয়ে বসে নেই। তারা ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি, ভিন্ন ধর্ম, ভিন্ন মূল্যবোধের সমাজ, রাষ্ট্র ও মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধন করার দিকেও নজর দিচ্ছে। তাদের অবস্থান হচ্ছে, শুধু শক্তি প্রয়োগ করে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ নির্মূল করা যাবে না। এর জন্য যুবসমাজকে কল্যাণমুখী করতে হবে। ওআইসির সদস্যভুক্ত দেশগুলোয় শান্তি ও উন্নয়নের সুফল যাতে জনগণের দুয়ারে পৌঁছে যায়, সেই মৌলিক চিন্তাধারা নিয়েও কাজ করছে ওআইসির আইপিএইচআরসি।

তার প্রতিফলন কিন্তু ছিল এবারের ৪৪তম ওআইসি সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে। চলতি বছরের ১০-১১ জুলাই আইভরি কোস্টের আবিদজানে এই সম্মেলন হয়। এই আয়োজনে সংস্থাটির মানবাধিকার কমিশন তথা আইপিএইচআরসির ভাইস চেয়ারপারসন ড. রাশিদ আল বালুসি যে প্রতিপাদ্য ঘোষণা করেন, তাতে ছিল শান্তিময় পৃথিবীর বাতাবরণ। এটি হচ্ছে ‘সংহতির পৃথিবীতে তারুণ্য, শান্তি ও উন্নয়ন।’ এর পরপরই ড. রাশিদ আল বালুসি আশা প্রকাশ করেন, এই সম্মেলন থেকে নতুন করে শান্তির এক ধারা প্রবাহিত হবে। এতে করে মুসলিম উম্মাহ অবশ্যই শান্তির পৃথিবীর যে লক্ষ্য তা অর্জন করতে সক্ষম হবে। এক্ষেত্রে তিনি সদস্য দেশগুলোকে শিক্ষা বিস্তারে জোর দেওয়ার আহ্বান করেন। সবকিছুতে তারুণ্যের শক্তি কাজে লাগানোর কথাও বলেন। এ থেকেই প্রতীয়মান হয় যে, মুসলিম দেশগুলোর মাধ্যমে গড়ে উঠা ওআইসির মানবাধিকার কমিশন শান্তি উদ্যোগকে আরো চাঙা করতে চাইছে। এর জন্য তারা ১০ বছরের বিশেষ কর্মসূচিও দিয়েছে।

ড. বালুসি আরো জানিয়েছেন, আইপিএইচআরসি বৈশ্বিক মানবতা সুরক্ষায় আরো বেশি মনোযোগ দিবে। তারা সারা বিশ্বের মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে। এরই প্রেক্ষিত হিসেবে তারা ফিলিস্তিন ও কাশ্মীরের মানবাধিকার পরিস্থিতি দেখতে সরেজমিন এ দুই জায়গায় যেতে চাইছে। স্পর্শকাতর দুটি জায়গার মানুষের অবস্থা তারা আসলে গভীরভাবে দেখতে চায়। যৌনতা নিয়ে রাখঢাক, অশিক্ষা-কুশিক্ষা এবং নারীর প্রতি বৈষম্য মুসলিম বিশ্বের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় অন্যতম এক প্রতিবন্ধকতা। তাই আইপিএইচআরসির যৌনতা ও লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে কূপমূণ্ডকতা দূর করতে এগুলো নিয়ে জনসাধারণকে যথাযথ তথ্য পৌঁছে দিতে চায়। এবারের সম্মেলনে মানবাধিকার নিয়ে কায়রো ঘোষণার সাফল্য-ব্যর্থতার চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

আমরা জানি, মানবাধিকার নিয়ে ইসলামের একটি দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। তার জন্য যখন ওআইসি গঠিত হয় তখন এর নেতৃবৃন্দ উপলব্ধি করলেন যে, তাদের একটি মানবাধিকার দলিল প্রণয়ন করা দরকার। সে কাজটি শুরু হয় আশির দশকের প্রথম দিকে। ১০ বছর ধরে কাজ হয়। ওআইসির ফিকাহ একাডেমি এ দলিল তৈরি করে। নানা পদ্ধতি, ঘাত, চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ১৯৯০ সালে কায়রোতে এ ডকুমেন্টটি পাস করা হয়। এটি একটি ঐতিহাসিক এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল। সেটি কায়রো ঘোষণা নামে পরিচিত। এটি কতটা অর্জন হয়েছে, তা নিয়ে সবসময়ই চিন্তাভাবনা করে থাকেন ওআইসির নেতৃবৃন্দ।

এবারের সম্মেলনে আইপিএইচআরসির নতুন ৯ সদস্য তিন বছরের জন্য নির্বাচন করা হয়। নির্বাচিতরা এতে যুক্ত হবে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে। এই নির্বাচন হয় গোপন ব্যালটে। যেসব দেশের ব্যক্তিরা নির্বাচিত হয়েছে সেই দেশগুলো হচ্ছেÑ বুরকিনা ফাসো, গায়না, নাইজেরিয়া, মরক্কো, ওমান, সৌদি আরব, তুরস্ক, উজবেকিস্তান ও বাংলাদেশ। বাংলাদেশের নির্বাচিত সদস্য হিসেবে যুক্ত হতে যাচ্ছি এই কলামের লেখক মোহাম্মদ জমির। জেদ্দাভিত্তিক স্বাধীন স্থায়ী মানবাধিকার কমিশনের (আইপিএইচআরসি) নতুন সদস্য নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি আমার জীবনের একটি গৌরবজনক অধ্যায়। আইভরি কোস্টের আবিদজানে ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ৪৪তম বৈঠকের সমাপনী দিনে এই নির্বাচন হয়। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে আমাদের তিন বছরের দায়িত্বের পর্ব শুরু হবে। এ বিষয়ে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে গণ্যমাধ্যমে। যাতে বলা হয়েছিল, আইপিএইচআরসির মোট ১৮ জন সদস্য ও ৯ জন পর্যায়ক্রমিক সদস্য রয়েছে যারা তিনটি ভৌগোলিক গ্রুপ আরব, এশিয়া ও আফ্রিকা থেকে নির্বাচিত হন। প্রতি গ্রুপ থেকে তিনজন সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকেন।

১৮ সদস্যের এশীয় রাষ্ট্রের মধ্যে পাঁচটি দেশ বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, উজবেকিস্তান ও পাকিস্তান আগেই তাদের প্রার্থীকে মনোনীত করেছিল। নতুন সদস্য নির্বাচনে গোপন ব্যালটে গ্রুপের ১৭টি দেশ ভোট দিয়েছে। ভোটে বাংলাদেশ, তুরস্ক এবং উজবেকিস্তান নির্বাচিত হয়েছে। আরব ও আফ্রিকান গ্রুপ থেকেও তিনজন করে সদস্য নির্বাচিত হয়েছে। আমি আগে রাষ্ট্রদূত হিসেবে বিদেশে দায়িত্ব পালন করেছি। কূটনীতিক হিসেবে জেদ্দায় ওআইসির সদর দপ্তরেও কাজ করেছি। সেই সব অভিজ্ঞতা অবশ্যই নতুন দায়িত্বে এসে কাজে লাগানোর চেষ্টা করব।

আশা করছি, এর মাধ্যমে নিজের দেশকেও কিছু দিতে পারব। এবারের সম্মেলন থেকে আরো একটি সুখবর মিলেছে তা হচ্ছে, ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ২০১৮ সালের বৈঠক হবে ঢাকা শহরে। এর মাধ্যমে ওআইসিতে বাংলাদেশের সক্রিয়, গঠনমূলক ভূমিকা ও ক্রমবর্ধমান গুরুত্বের স্বীকৃতিই মিলেছে। এবারের আবিদজানে সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী। তার সঙ্গে আরও ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক, সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও ওআইসির পিআর গোলাম মসি প্রমুখ।

বাংলাদেশ বরাবরই বিশ্ব শান্তির পক্ষে। কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব- এটাই হচ্ছে বর্তমান সরকারের কূটনীতির অন্যতম দর্শন। এটাই এবারের সম্মেলনে তুলে ধরেন আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী। ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম প্র্যাকটিস বিনিময়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচন, আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি, শান্তিরক্ষা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা, নারীর ক্ষমতায়ন, সন্ত্রাস ও উগ্রপন্থা দমন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সাফল্যের কাহিনি বিনিময়ে বাংলাদেশের আগ্রহের কথা প্রকাশ করেন তিনি।

আবার মানবাধিকার প্রসঙ্গে ফিরে আসি। মুসলিম উম্মাহ যাতে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখতে পারে সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই আগামী দিনে কাজ করবে ওআইসির মানবাধিকার কমিশন। এর জন্য তারা বহুমুখী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তারা পাঁচটি দিক-নির্দেশনামূলক নীতি মেনে কাজ করবে। এগুলো হচ্ছে- সৌহার্দ্য, নিষ্ঠা, অগ্রাধিকার, ক্রমবর্ধমান প্রক্রিয়া ও বিশ্বাসযোগ্যতা। আমি জানি যে, মানবাধিকার সুরক্ষার কাজটি অনেক কঠিন। এটা আমার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ। দায়িত্ব পাওয়ার পর তা জয় করার চেষ্টা করব। যেকোনো বিঘ্ন পেরিয়ে যেতে চেষ্টা করব।

আমরা দেখছি যে, নানা প্রতিবন্ধকতার পরও ওআইসি মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর একক কণ্ঠস্বর। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিশ্ব রাজনীতিতে ওআইসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। জেদ্দাভিত্তিক এই সংস্থা হচ্ছে ইসলামি দুনিয়ায় সবচেয়ে বড় সংগঠন এবং জাতিসংঘের পর এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় সংস্থা। তাই বিশ্বের সংঘাত কমাতে এবং মুসলমানদের সমস্যার ব্যাপারে সমর্থন সংগ্রহে ওআইসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই তারা এই কাজটি করছে। এখন ওআইসি সর্বত্রই সক্রিয়। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ, নিরাপত্তা পরিষদ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থায় ওআইসি সদস্য দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান ভূমিকা ইতিবাচক একটি দিক। ওআইসি এখন গবেষণা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়নেও কাজ করছে।

আমি যার সদস্য হিসেবে কাজ করতে যাচ্ছি, ওআইসির মানবাধিকারবিষয়ক সেই কমিশন সম্পর্কে আমাদের দেশের অনেকে হয়তো সেভাবে জানেন না। তাই এ সম্পর্কে এবার একটু উল্লেখ করতে চাই। স্বাধীন স্থায়ী মানবাধিকার কমিশন (ইনডিপেনডেন্ট পারমানেন্ট হিউম্যান রাইটস কমিশন (আইপিএইচআরসি) ওআইসির বিশেষায়িত একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। এটি সর্বজনীন মানবাধিকার রক্ষায় নিজের মতো করে কাজ করে। এর সূত্রপাত মূলত ২০০৫ সালে সৌদি আরবের মক্কায় অনুষ্ঠেয় ওআইসির বিশেষ ইসলামি সম্মেলনে। যেখানে মানবাধিকার বিষয়ে ১০ বছর মেয়াদি বিশেষ কর্মসূচিত হাতে নেওয়া হয়। সেই ধারাবাহিকতায় আইপিএইচআরসির প্রতিষ্ঠা হয় ২০০৮ সালে সেনেগালের ডাকারে অনুষ্ঠিত ওআইসির ১১তম ইসলামি সম্মেলনে। তবে এই মানবাধিকার কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা করে ২০১১ সালে কাজাখস্তানের আসতানায় অনুষ্ঠেয় ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ৩৮তম সম্মেলনে। শুধু সদস্য দেশ নয়, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে কমিশন। প্রতিষ্ঠার হিসেবে এর বয়স খুব বেশি নয়। এই স্বল্পসময়েই দেখার মতো এর কিছু অর্জন আছে। নারী ও শিশুর অধিকার নিয়ে কাজ করছে তারা। উন্নয়নের সুফল ভোগের অধিকার যে সবার আছে, এ বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে কমিশন। পথভ্রষ্টদের কারণে, জঙ্গিদের কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে যে ইসলাম-ভীতি দেখা যাচ্ছে, তা যে পশ্চিমাদের একটি অকারণ ভীতি, এ বিষয়টি প্রশমনে কর্মসূচি রয়েছে আইপিএইচআরসির। উগ্রবাদের কারণে অনেক দেশেই এখন মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। এ বিষয়টি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করছে ওআইসির মানবাধিকার কমিশন। মধ্য আফ্রিকার মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে তারা।

অস্থিতিশীল অবস্থা একটি দেশকে অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিকভাবে কতটা পঙ্গু করে দিতে পারে, তা নিয়ে বিশদ প্রতিবেদন তৈরি করেছে এই কমিশন। এর প্রেক্ষিতেই ওআইসি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে। আইপিএইচআরসি ইসলামি বিশ্ব তো বটেই সারা পৃথিবীর মানবাধিকার নিয়েই কাজ করতে চায়। অবদান রাখতে চায়। এর জন্য তারা সব মানবাধিকার সংস্থার সঙ্গেই নানাভাবে মতবিনিময় করছে। বিশ্বশান্তির পথে ইতিবাচক অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। ওআইসির মানবাধিকার কমিশনে আমার অংশগ্রহণ যদি বিশ্ব মানবতার কণামাত্র অগ্রগতি সাধিত করতে পারে, তবে নিজেকে সার্থক মনে করব। আপাতত এই প্রত্যাশা নিয়েই আছি।

মোহাম্মদ জমির: সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং প্রধান তথ্য কমিশনার

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :